প্রতীকী চিত্র
যেন চোরের জন্য দরজা হাট করে খুলে রাখা হয়েছে!
১২০ বর্গ ফুটের একটি ছোট্ট ঘর। মাঝে এটিএম মেশিন। নজরদারির জন্য একটি মাত্র সিসি ক্যামেরা। এই হচ্ছে ‘টাকার ভাণ্ডার’ আগলে রাখার ব্যবস্থা! কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা মনে করছেন, সাইবার অপরাধীদের কাছে এটা দরজা হাট করে খুলে রাখার মতোই বন্দোবস্ত।
‘অতিরিক্ত’ খরচ কমাতে গিয়ে এখন গ্রাহকদের আমানতের নিরাপত্তাই প্রশ্নের মুখে। সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে যে অপরাধীদের রোখা যাবে না, তা এখন ভালই বুঝতে পারছে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) নির্দেশ রয়েছে, এটিএমের সুরক্ষায় কোনও খামতি রাখা যাবে না। সিসি ক্যামেরা লাগানোর পাশাপাশি প্রতিটি এটিএমে রক্ষী রাখতেই হবে।
নির্দেশই সার! রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই হোক বা বেসরকারি, তিন শিফটে নিরাপত্তা রক্ষী রাখার ব্যাপারে সকলেই কমবেশি উদাসীন। অধিকাংশ এটিএমে রক্ষী নেই। শহরে হাতে গোনা কয়েকটি এটিএমে সিকিউরিটি গার্ড থাকলেও, রাতের দিকে সেখানে উন্মুক্ত দ্বার। কোথাও এক শিফট, আবার কোথাও দুই শিফটে রক্ষী রেখে আরবিআই-এর নিয়ম রক্ষার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: এটিএমে ‘স্কিমার’ লাগিয়েই প্রতারণা, পুলিশের হাতে এল ফুটেজ!
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপ্ত সাহারায় বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বারবার সতর্ক করছে। তার পরেও হুঁশ ফিরছে না ব্যাঙ্কগুলোর। রাজ্যে প্রায় ১০ হাজার এটিএমে রক্ষী রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে বেঙ্গালুরুতে এটিএমে পর পর দুষ্কৃতি হামলা হয়েছে। এ রাজ্যেও এমন ঘটনার নজির রয়েছে। এখন তো সাইবার অপরাধীরা এটিএমে ঢুকে স্কিমার যন্ত্র লাগিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। আটকানোর কেউ নেই।”
কলকাতার এটিএম জালিয়াতির তদন্তেও সে রকমই তথ্য উঠে আসছে। বিগত কয়েক মাস ধরে শহরের এটিএম কিয়স্কগুলিতে রেইকি করেছিল সাইবার অপরাধীরা। কোন এটিএমে ক’টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে, কোথায় নিরাপত্তা রক্ষী আছে, কোথায় নেই। রক্ষী থাকলেও তাঁরা কতক্ষণ ডিউটি করেন? এ বিষয়ে খোঁজখবর শুরু হয়।
আরও পড়ুন: লুকিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ, এটিএমে টাকা তোলার আগে এগুলি খেয়াল রাখুন
পরবর্তী ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা নিরাপত্তার এটিএমগুলিকেই টার্গেট করে অপরাধীরা। যে সব এটিএমে ‘স্কিমার’ যন্ত্র লাগানো হয়েছিল, সেখানে রক্ষী ছিল না। তাই গভীর রাতে ‘স্কিমার’ লাগাতে কোনও সমস্যাই হয়নি তাদের।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটিএমের ভিতরে সিসি ক্যামেরা থাকলেও, সেগুলি কাপড় বা রুমাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ফলে ‘অপারেশন’ চালাতে তেমন কোনও ঝক্কি পোহাতে হয়নি অপরাধীদের।
‘ব্যাঙ্ক কনট্রাকচুয়াল অ্যান্ড কন্ট্রাক্ট ওয়ার্কস ম্যান’-এর সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “দেশজুড়ে শুধু কর্মী ছাঁটাই চলছে। এখন গোটা দেশে এক লক্ষ পনেরো হাজারের মতো এটিএম রয়েছে। রাজ্যে সেই সংখ্যাটা প্রায় কুড়ি হাজারের মতো। ৫০ শতাংশের কিছু কম এটিএমে রক্ষী নেই। কোনও কোনও ব্যাঙ্কের কোনও এটিএমেই রক্ষী নেই। টাকার মেশিনের নিরাপত্তা যে সিসি ক্যামেরাতে সম্ভব নয়, যত তাড়াতাড়ি ব্যাঙ্কগুলো বুঝবে। ততই ভাল।”