প্রশ্নপত্র লোপাটের বার্তায় টেট ঘিরে সংশয়

জট-জটিলতা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না টেট-এর। গত বার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) ঘিরে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক গোলমাল হয়েছিল। এ বার ওই পরীক্ষার দু’দিন আগে কিছু প্রশ্নপত্র লোপাটের আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

জট-জটিলতা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না টেট-এর।

Advertisement

গত বার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) ঘিরে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক গোলমাল হয়েছিল। এ বার ওই পরীক্ষার দু’দিন আগে কিছু প্রশ্নপত্র লোপাটের আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতটাই যে, খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আজ, শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসছেন। প্রশ্নপত্র খোয়া গিয়ে থাকলে টেট স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে বলেও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

কয়েক মাস আগেই রাজ্যে আইটিআই-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। তার জেরে সেই পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এ বার প্রশ্নপত্র খোয়া যাওয়ার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে টেট নিয়েও সংশয় দেখা দিল। পরশু, রবিবার টেট নেওয়ার কথা। প্রায় ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থী ওই পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষার ঠিক দু’দিন আগে, বৃহস্পতিবার প্রশ্নপত্রের একটি প্যাকেট খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো ধন্দে পড়ে গিয়েছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছে?

পর্ষদ সূত্রের খবর, ডাক বিভাগের মাধ্যমে টেটের প্রশ্নপত্র বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্যের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল (সিপিএমজি)-এর দফতরে একটি বার্তা আসে। তাতে লেখা, ‘‘একটি বাসে কয়েকটি প্যাকেট নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল হুগলির শ্রীরামপুরে। পথে একটি প্যাকেট খোয়া গিয়েছে। বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছে।’’ ডাক বিভাগ সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি পর্ষদকে জানিয়ে দেয়।

সিপিএমজি অরুন্ধতী ঘোষ বলেন, ‘‘প্যাকেটটি সত্যিই বাস থেকে উধাও হয়েছে, নাকি অন্য কোথাও সেটি থেকে গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে কিছু বলা যাবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।’’

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, যদি প্রশ্নপত্র খোয়া যাওয়ার বিষয়টি সত্যি হয়, তবে টেট স্থগিত করে দিতেও পিছপা হবে না রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। শুক্রবার সকালে পর্ষদের অফিসে যাব। সবিস্তার খোঁজখবর নেব। তার পরে সিদ্ধান্ত নেব।’’

গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডাককর্মীদের কি আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল না? সিপিএমজি বলেন, ‘‘যদি কোনও প্যাকেট খোয়া গিয়ে থাকে, তাতে প্রশ্নপত্র ছিল না অন্য কিছু, তা এখনও সরকারি ভাবে বলতে পারব না। তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই তা বলা সম্ভব। তবে আমাদের কোনও কর্মীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এ দিনই টেট-এর দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অনুলেখক হিসেবে গণ্য করার দাবিতে একটি মিছিল ঘিরে সল্টলেকের করুণাময়ী মোড়ে উত্তেজনা ছড়ায়। দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের মারধর করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানায়, বেলা ১টা নাগাদ করুণাময়ী মোড় থেকে মিছিল করে বিকাশ ভবন যাওয়ার চেষ্টা করেন ব্লাইন্ড পার্সনস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা। তাঁরা করুণাময়ী মোড়ে শিক্ষামন্ত্রীর কুশপুতুলে আগুন দেন। তার পরেই পুলিশ তাঁদের মিছিল আটকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদে সংগঠনের সদস্যেরা ময়ূখ ভবনের মোড়ে অবস্থান করেন।

জাল বোর্ড

টেট নিয়ে জটিলতার মধ্যেই নকল শিক্ষা বোর্ডের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। এ দিন দুপুরে বারুইপুর স্টেশনে অচল নস্কর নামে ওই বোর্ডের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশি সূত্রের খবর, বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ওই বোর্ডের কথা প্রচার করা হতো। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে যাঁরা অকৃতকার্য হয়েছেন, তাঁরাই মূলত ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আবেদনকারীদের কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা নিয়ে জাল অ্যাডমিট
কার্ড তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়া হতো। তার পরে দেওয়া হতো জাল সার্টিফিকেট। সংস্থাটির সরকারি স্বীকৃতি ছিল না বলে জেনেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর জাল অ্যাডমিট কার্ড, এবং সার্টিফিকেট। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন