Primary Education Council

ছিল ৩০০ টাকা, হল ৩০০০! টেটের প্রশিক্ষণ ফি শুনে হাই কোর্ট বলল, ভর্তি আপাতত বন্ধ থাক

টেট দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজ্যের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও ভর্তির তারিখ পেরিয়ে যাওয়া ডিএলএড প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের থেকে মাথাপিছু ৫০০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪৯
Share:

আদালতে আবেদনকারী প্রশ্ন করেছিলেন, এতে আগামী দিনের প্রাথমিকের শিক্ষকরাও অর্ধপ্রশিক্ষিত হয়ে থাকবেন নাকি? গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

সময়ে ভর্তি হলে ফি দিতে হবে ৩০০ টাকা। কিন্তু অসময়ে? শিক্ষাবর্ষের মাঝখানেও চাইলে ভর্তি হওয়া যাবে প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কলেজে। তবে তার জন্য তখন দিতে হবে ৩০০০ টাকা। খোদ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদই বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই নিয়ম ঠিক করেছে। যার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার মামলা হয় কলকাতা হাই কোর্টে। শুনে হাই কোর্ট জানিয়েছে, আপাতত ভর্তি বন্ধ করতে হবে।

Advertisement

অভিযোগ, পর্ষদের সঙ্গে অশুভ আঁতাত রয়েছে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার বেসরকারি কলেজগুলির। তাদের সুবিধা করে দিতেই প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ ডিএলএডে ভর্তি হওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ঘুরপথে ভর্তি নিচ্ছে পর্ষদ। প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের থেকে ‘লেট ফি’ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকাও। এ যেন টেট দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজ্যের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের ‘দুর্নীতিমূলক কাজের’ আইনসিদ্ধ রূপ। কারণ, মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বেআইনি ভাবে ভর্তির তারিখ পেরিয়ে যাওয়া ডিএলএড প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের থেকে মাথাপিছু ৫০০০ টাকা করে নিতেন। যাতে তারা ভর্তির তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরও ঘুরপথে ভর্তি হতে পারেন। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। আদালত এই যুক্তি শোনার পরই জানিয়েছে, আপাতত ডিএলএড-এ ২০২১-’২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির তারিখ পেরোনো ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে অতিরিক্ত ফি দিয়ে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল পর্ষদ, তা কার্যকর করা যাবে না। ওই শিক্ষাবর্ষে ডিএলএড-এ ভর্তি আপাতত স্থগিত রাখতে হবে। আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নিতে পারবে না পর্ষদ।

এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করেছেন যিনি, তাঁর আইনজীবী রিয়া দাস আদালতকে জানিয়েছেন, গত ২৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, ডিএলএড প্রশিক্ষণের ২০২১-’২৩ শিক্ষাবর্ষে যাঁরা অনলাইনে ভর্তির নির্দিষ্ট তারিখে ভর্তি হতে পারেননি, তাঁরা চাইলে ৩০০০ টাকা লেট ফি দিয়ে ভর্তি হতে পারেন। তবে আবেদনকারীর যুক্তি, এই পর্ষদই এর আগে সাধারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের জন্য ৩০০ টাকা এবং সংরক্ষিত বিভাগের জন্য ১৫০ টাকা ভর্তির মূল্য ঠিক করেছিল।

Advertisement

তার পরও কেন ২৮ ডিসেম্বরের ওই বিজ্ঞপ্তি? আবেদনকারী আদালতকে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে পর্ষদের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তারা জানিয়েছিল, বেসরকারি কলেজগুলি তাদের বলেছিল বহু ছাত্রছাত্রী নির্দিষ্ট তারিখে ভর্তি হতে না পারায় তাদের আসন পূরণ হয়নি। সে কথা মাথায় রেখেই শুধু ২০২১-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই নিয়ম জারি করা হয়েছে। যা বেআইনি বলে অভিযোগ করেছেন মামলাকারী। তিনি জানিয়েছেন, এ ভাবে আদতে ডিএলএড প্রশিক্ষণ দেওয়া কলেজ গুলিকে ঘুরপথে অতিরিক্ত সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে পর্ষদ। অথচ তারা এটা ভেবে দেখছে না, দেরিতে ভর্তি হওয়ায় এই প্রাথমিকের প্রশিক্ষণ প্রার্থী ছাত্রছাত্রীরা অনেকটাই পিছিয়ে থাকবেন প্রশিক্ষণে। কেন না ২০২১-২৩ শিক্ষা বর্ষের প্রশিক্ষণ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনেই।

আদালতে আবেদনকারী প্রশ্ন করেন, এতে আগামী দিনের প্রাথমিকের শিক্ষকরাও অর্ধপ্রশিক্ষিত হয়ে থাকবেন। অথচ সে কথা জেনেও কেন এমন পদক্ষেপ করল পর্ষদ? বৃহস্পতিবার এর জবাবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তিতে স্থগিতাদেশ দিয়ে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘ব্যাকডোর দিয়ে কি ভর্তি করানো হচ্ছে নাকি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন