Research Work

গবেষণায় যুগলবন্দি, সম্মানে নজির বাঙালি দম্পতির

অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় আর সুস্মিতা বসু। এ বারে আরও এক নজির গড়লেন তাঁরা। সুস্মিতা ২০১৮ থেকেই মেটেরিয়াল রিসার্চ সোসাইটির ফেলো। এ বছর অমিতও ফেলো হলেন।

Advertisement

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৩
Share:

অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুস্মিতা বসু। — নিজস্ব চিত্র।

এক জন উত্তরপাড়া, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, মেটালারজিকাল ইঞ্জিনিয়ার। অন্য জন রানাঘাট, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, রসায়নবিদ। ইনি বেঙ্গালুরু আইআইএসসি হয়ে আমেরিকা। উনি কানপুর আইআইটি হয়ে আমেরিকা। দেখা হল রাটগারস বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে গিয়ে। সেখানেই প্রেম, তার পর বিয়ে। তার পর একই প্রতিষ্ঠানে, অর্থাৎ ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা আর যৌথ গবেষণায় একের পর এক দিগন্ত খুলে দেওয়া।

Advertisement

অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় আর সুস্মিতা বসু। এ বারে আরও এক নজির গড়লেন তাঁরা। সুস্মিতা ২০১৮ থেকেই মেটেরিয়াল রিসার্চ সোসাইটির ফেলো। এ বছর অমিতও ফেলো হলেন। অর্থাৎ মেটেরিয়াল বা উপাদানবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের ফেলোদের মধ্যে এই বঙ্গদম্পতি যৌথ ভাবে জায়গা করে নিলেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এমআরএস ফেলো, এমন নজির খুবই বিরল। টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির এনরিক ল্যাভারনিয়া আর জুলি স্কোয়েনাং-এর পরে এই আদ্যন্ত বাঙালি দম্পতিই এই সাফল্য অর্জন করেছেন। কী বলা যাবে এই জুটিকে? ‘‘শাহরুখ-কাজল!’’ ওঁদের নিজেদের সবচেয়ে পছন্দের জুটি।

আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রাণ খুলে হাসছিলেন দু’জনেই। কারণ, যৌথতাই বরাবর ওঁদের জীবনের মন্ত্র। অমিতের ধাতুবিদ্যা আর সুস্মিতার রসায়ন পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলেছে কর্মজীবনের শুরু থেকেই। প্রথম থেকেই ঠিক করা ছিল, চাকরি করলে এক জায়গাতেই করবেন। গবেষণাতেও দু’জনে দু’জনের পরিপূরক হয়ে কাজ করবেন। সেই ভাবেই এগিয়েছেন ওঁরা।

Advertisement

থ্রিডি প্রিন্টিং নিয়ে গবেষণার কাজে ওঁদের একটা বড় জায়গাই হল চিকিৎসাবিজ্ঞান। মানবশরীরে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ-কলাকোষ কোন উপাদানে নির্মিত হবে, কী ভাবে থ্রিডি প্রিন্টিং সে কাজে সাহায্য করবে— এই অন্বেষণে মিলে গিয়েছে ধাতুবিদ্যা আর রসায়ন। সুস্মিতা-অমিত বলছিলেন কী ভাবে থ্রিডি প্রিন্টিং এই ক্ষেত্রে প্রায় বিপ্লব এনে দিয়েছে। যেমন হাঁটু প্রতিস্থাপনের উদাহরণ দিয়ে ওঁরা বললেন, আগেও টাইটানিয়ামের সাহায্যে কৃত্রিম হাঁটু বানানো হত। এখনও তাই হয়। কিন্তু কোন রোগীর জন্য কোন ডিজ়াইনে সেই হাঁটু বানানো হবে, সেই জায়গাতে নয়া দিগন্ত খুলে দিয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিং। একই কথা প্রযোজ্য হাড় বা দাঁতের প্রতিস্থাপনে সেরামিকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে। ১৯৯৮ সালে যখন ওঁরা এই গবেষণা শুরু করেছিলেন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন এটা স্রেফ পাগলামি হচ্ছে। কিন্তু সুস্মিতা-অমিত দেখিয়ে দিয়েছেন, ভাবনাটা কতখানি ঠিক ছিল।

পাশাপাশি মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও থ্রিডি প্রিন্টারের ব্যবহার কী ভাবে উপযোগী হবে, স্পেস স্টেশনে থ্রিডি প্রিন্টার বসিয়ে কী ভাবে জোগান দেওয়া যাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, এটাও ওঁদের একটা বড় অনুসন্ধান ক্ষেত্র। এখানে অমিতের ভূমিকা নেতৃস্থানীয়, সুস্মিতা আছেন সহায়কের ভূমিকায়। সুস্মিতা নিজে আবার মন দিয়েছেন ভেষজ মেডিসিনে। কৃত্রিম ভাবে নির্মিত ওষুধের পরিবর্তে এবং বায়োমেডিকাল ডিভাইসের ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানকে কত ভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটা ওঁর গবেষণার একটা বড় জায়গা। এখানে অমিত আছেন সহায়কের ভূমিকায়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এই গবেষণায় বড়সড় অনুদান দিচ্ছে।

এই যে প্রায় ২৪ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকা, কাজ করা, সংসার করা— সংঘাত আসে না? আবারও হাসলেন দু’জনেই। বললেন, মতান্তর নিশ্চয় হয়। কিন্তু অহংয়ের সংঘাত হয় না। আমরা দু’জনেই সে ব্যাপারে খুব সচেতন থাকি। সুস্মিতার মতে, ‘‘অহংকে বাগ মানাতে না পারলে কোনও বড় কাজই সম্ভব নয়। সারা পৃথিবী আমাদের প্রতিযোগী হতে পারে, কিন্তু নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা নয়।’’

অমিত যোগ করলেন, ‘‘সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, আজ আমরা যে জায়গায় আছি, কুড়ি বছর আগে ছিলাম না কিন্তু। অনেকটা লড়াই করতে হয়েছে। একসঙ্গে সেই লড়াইটা করতে পেরেছি বলেই সাফল্য এসেছে।’’

এক কথায় বলতে গেলে, নিজেদের জুটিকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন সুস্মিতা-অমিত। যে কোনও অর্জনকেই যৌথ অর্জন হিসেবে দেখেছেন দু’জনে। দুই পুত্র ওঁদের। পদবি লেখেন, বসু-বন্দ্যোপাধ্যায়। বড় সোহম ইতিমধ্যেই পি এইচডি শুরু করেছেন, ছোট আদিত্য কলেজে ঢুকবেন। ভারতে এলে ঝরঝরে বাংলা বলেন দুই ভাই। সু্স্মিতার আক্ষেপ, ‘‘ওরা বাংলা বলতে পারে, বাংলা গান গায়। দেশেই বরং বাংলা বলার লোক কম দেখি এখন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন