বহরমপুরের ‘নজরুল ওয়ার্ড’ এখন সাপের আস্তানা

লালগোলায় রামনগর নজরুল একাডেমী নামে সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন ইউসুফ আলি।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ১৭:৪৬
Share:

ঝোপ-জঙ্গলে ভরা এই ঘরটিতেই ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহরমপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে প্রায় ছ’মাস কারাবন্দি ছিলেন। বর্তমানে সেটি বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত সেই ঘর এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ঝোপ-জঙ্গলে ভরা সেই ভবনের দোতলায় কাজী নজরুল যে ঘরে প্রায় ছ’মাস বন্দি অবস্থায় ছিলেন, সেই ঘর এখন তালাবন্দি। ছাদ ফেটে জল পড়ে। দেওয়ালের চুন-সুরকি ভেঙে পড়েছে। ঘরের দেওয়ালের ভেতর ও বাইরের অংশে শেকড় ছড়াচ্ছে বটের চারা। ঘরের মেঝে ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

যদিও নজরুলের স্মৃতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সময়ে ওই ঘরটিকে ‘নজরুল ওয়ার্ড’ নামে চিহ্নিত করেন। বহরমপুর নজরুল কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত বলছেন, ‘‘এক সময়ে প্রতি বছর নিয়ম করে ১১ জ্যৈষ্ঠ দিনটি পালন করা হত সেখানে। মানসিক হাসপাতালের আবাসিকেরাও যোগ দিতেন সেই অনুষ্ঠানে। এখন সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’

বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল ইংরেজ আমলে জেল ছিল। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ১৯২২ সালের ১১ অগস্ট কলকাতার ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিট থেকে নজরুল অর্ধ সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর পরে ১৯২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ধূমকেতু’তে প্রকাশিত হল নজরুলের ৭৯ লাইনের কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’। ওই কবিতার জন্য নজরুলের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানি জারি হয়। নজরুল সেই সময় কুমিল্লায়। ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর দুপুরে সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে ২৪ নভেম্বর কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারায় কবিকে রাজদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় এবং বিচারের শুনানি শুরু হয় কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইন-হো’র আদালতে। ১৯২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার রায় বেরোয়। সেখানে নজরুলের এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। পরের দিন, ১৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, সেখান থেকে হুগলি জেল হয়ে কবিকে বহরমপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে নিয়ে আসা হয় ১৯২৩ সালের ১৮ জুন। বর্তমান বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের দোতলার একটি ঘরে কাজী নজরুল ১৯২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দি ছিলেন।

Advertisement

নজরুল গবেষক সৈয়দ খালেদ নৌমান বলছেন, ‘‘বহরমপুর জেলে বসে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছিলেন কাজী নজরুল। বহরমপুর জেলে বসে লেখা নজরুলের জনপ্রিয় কবিতা ‘সত্যের আহ্বান’ ১৯২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘বিজলী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯২৩ সালের নভেম্বরে ‘আলতা স্মৃতি’ নামে কবিতা পরে ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত হয়েছিল এবং ‘ছায়ানট’ কাব্যগ্রন্থেও ঠাঁই পায়। কল্লোলের ডিসেম্বর সংখ্যায় মোহিনী সেনগুপ্তের স্বরলিপি-সহ নজরুলের ‘মরমী’ শীর্ষক গানটি প্রকাশিত হয়। এটিও কবি বহরমপুর জেলে বসেই রচনা করেন। এ ছাড়াও বহরমপুর জেলে থাকাকালীন সৈয়দাবাদের বাসিন্দা কবি শরদিন্দু রায়ের মৃত্যুতে নজরুল ‘ইন্দুপ্রয়াণ’ কবিতাটি রচনা করেন ১৯২৩ সালের জুলাই মাসে।’’

লালগোলায় রামনগর নজরুল একাডেমী নামে সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন ইউসুফ আলি। তিনি বলছেন, ‘‘নজরুলের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। কিন্তু সরকারি স্তরে কোনও সংগ্রহশালা গড়ে ওঠেনি, এটা আক্ষেপের বিষয়। সংস্কার করে অধুনা মানসিক হাসপাতালের ওই কক্ষটিকে নজরুলের নামে সংগ্রহশালা গড়ে তোলা উচিত।’’

বহরমপুরের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল হাসনাতও বলছেন, ‘‘আগামী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের উচিত ছিল মানসিক হাসপাতালের ওই কক্ষটিকে নজরুল সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলার। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে দরবার করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন