পিএল অ্যাকাউন্টের বিশেষ অডিট শুরু

অর্থসচিবের নির্দেশ, অর্থ দফতরের বাছাই করা অফিসারেরা জেলাশাসকের দফতর, জেলা পরিষদ, পুরসভা-পঞ্চায়েতে ঘুরে ঘুরে প্রতিটি সরকারি অ্যাকাউন্টের খোঁজ করবেন। সেখানে কত টাকা খরচ না-হয়ে পড়ে আছে, টাকা আদৌ আছে কি না, যে টাকা খরচ হয়েছে তার বিল-ভাউচার ঠিক মতো রয়েছে কি না, সব খতিয়ে দেখা হবে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

খরচ না-হওয়া টাকা ফেরত দিতে বলেছিল নবান্ন। কিছু ফেরতও এল। কিন্তু অর্থ দফতর মনে করছে, বিভিন্ন দফতরে, জেলায়, পঞ্চায়েতে এখনও জমা অথবা উধাও সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা। হদিশ পেতে সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট, পিএল (পার্সোনাল লেজার) অ্যাকাউন্ট অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ দফতর। সাম্প্রতিক অতীতে এমন তদন্তের কথা মনে করতে পারছেন না প্রশাসনিক কর্তারা।

Advertisement

অর্থসচিবের নির্দেশ, অর্থ দফতরের বাছাই করা অফিসারেরা জেলাশাসকের দফতর, জেলা পরিষদ, পুরসভা-পঞ্চায়েতে ঘুরে ঘুরে প্রতিটি সরকারি অ্যাকাউন্টের খোঁজ করবেন। সেখানে কত টাকা খরচ না-হয়ে পড়ে আছে, টাকা আদৌ আছে কি না, যে টাকা খরচ হয়েছে তার বিল-ভাউচার ঠিক মতো রয়েছে কি না, সব খতিয়ে দেখা হবে। প্রথম দফায় হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনায় এই অডিট হবে।

অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বছরের পর বছর ধরে রাজ্য পরিকল্পনা এবং নানা প্রকল্পের টাকা ট্রেজারি থেকে পিএল-ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে চালান হয়ে গিয়েছে। সরকারি সিস্টেমে তা ফেরানোর জন্য রাজ্যের কোষাগারে স্বচ্ছতা অভিযানে নামা হয়েছে। এর পর বোঝা যাবে টাকা আছে না উধাও হয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

সেপ্টেম্বরে অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সমস্ত দফতরের কাছে ট্রেজারি অ্যাকাউন্ট ছাড়া অন্য ডিপোজিট বা পিএল অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। সরকারের আশা ছিল, অন্তত ১২-১৫ হাজার কোটি টাকা জমা পড়তে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে দেখা যায় মেরেকেটে দু’হাজার কোটি টাকা ফিরেছে। নবান্নের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘৮৭টি ট্রেজারিকে কেন্দ্র করে শয়ে শয়ে পিএল অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়েছে। ট্রেজারির টাকা অগ্রিম হিসাবে বছরের পর বছর তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আর ফেরত আসছে না। সে জন্য ডিপোজিট-পিএল অ্যাকাউন্ট অডিট ছাড়া উপায় নেই।’’

সূত্রের খবর, দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলা ১৭ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে, কিন্তু সেই জেলায় এখনও পিএল অ্যাকাউন্টে ৩০০ কোটি টাকা পড়ে। অন্য একটি জেলা ১২ কোটি টাকা ফেরত দিলেও ডিপোজি়ট অ্যাকাউন্টে ৫০ কোটির বেশি পড়ে আছে। জেলাগুলির অবশ্য দাবি, পড়ে থাকা টাকা খরচ করার পথ এখনও রয়েছে, তাই ফেরত দেওয়া হয়নি। যে যুক্তি মানতে নবান্ন নারাজ। নবান্ন মনে করছে, দ্রুত টাকা খরচ দেখাতে গিয়ে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু টাকা শুধু সরানো হয়েছে, না উধাও হয়ে গিয়েছে, তা ধরার সময় এসেছে।

পিএল অ্যাকাউন্ট কী?

রাজ্য পরিকল্পনা, রাজ্যের নিজের প্রকল্প বা কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্পের বহু টাকা প্রথম পাঠানো হয় ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা সময়ে খরচ করতে না পেরে অনেক ক্ষেত্রে অগ্রিম হিসেবে টাকা ট্রেজারি থেকে তুলে নিয়ে পার্সোনাল লেজার (পিএল) অ্যাকাউন্ট বা ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে ট্রেজারি সিস্টেম থেকে টাকা বের হয়ে যায়। কিন্তু বোঝা যায় না সেই টাকা প্রকল্পে খরচ হল, না পড়ে রইল, না উধাও হয়ে গেল। যা এক ধরনের আর্থিক অনিয়ম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন