ফাইল চিত্র।
হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে পাহাড়ে। এ বার ওঁদেরও হাওয়া-বদলের পালা।
যেমন মোর্চার শীর্ষ নেতা রোশন গিরির স্ত্রী দিব্যা। বিমল গুরুঙ্গের আপন বোন। পাহাড়ে বন্ধের সময়ে টানা ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন দিব্যা। তার পরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মিটিং-মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা দিয়েছে তাঁকে। ছুটি শেষে জেলাশাসকের দফতরে কাজেও যোগ দিয়েছিলেন। তখনও পাহাড়ে বন্ধ চলছিল। সেই দিব্যাকে এ বার পূর্ব মেদিনীপুরে বদলি করেছে রাজ্য।
তাকদা হাসপাতালে মোর্চার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে খুকুরিতে আহত পুলিশদের চিকিৎসা করার ‘অপরাধে’ এক নার্স চার ডাক্তারের খাবারদাবার-জল পাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তিনি সেখানকার নারী মোর্চার নেত্রীও ছিলেন। তাঁকে বদলি করা হয়েছে গোসাবায়। কালিম্পঙের অন্য এক নার্সকে পাঠানো হয়েছে বাসন্তী হাসপাতালে। একই ভাবে আরও কয়েক জনের ঝাড়াই-বাছাই চলছে। ধীরে ধীরে সকলকেই সমতলে পাঠানো হবে বলে জানান এক কর্তা।
চর্চার কেন্দ্রে অবশ্য মূলত দিব্যাই। বাড়িতে বদলির চিঠি পৌঁছলেও এখনও পূর্ব মেদিনীপুরে কাজে যোগ দেননি রোশন-পত্নী। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘পাহাড়ি এলাকা অনেকের কাছেই একঘেয়ে হয়ে উঠতে পারে। তাই তাঁদের বাছাই করে সাগর-পাড়ে পাঠানো হবে।’’
বন্ধে কাজে যোগ না দেওয়ায় জুন-জুলাই-অগস্টের বেতন পাননি পাহাড়ের কোনও সরকারি কর্মচারী। জিটিএ-র কর্মচারীরা সেপ্টেম্বরের বেতন পেলেও আগের তিন মাসের বেতন পাননি। কিন্তু দিব্যাকে বকেয়া বেতন দিতে হয়েছে। কারণ, ১ জুন আবেদন করে ১০ জুন থেকে টানা ৪৫ দিনের আর্নড লিভ নিয়েছিলেন তিনি। পাহাড়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল ৮ জুন। পরের দিন থেকেই টানা বন্ধের ডাক দেয় মোর্চা। প্রশাসনিক কর্তারা মনে করছেন, রোশনের স্ত্রী ও বিমলের বোন হওয়ার সুবাদে মোর্চার কর্মসূচি জানাই ছিল দিব্যার। তাই দার্জিলিঙের জেলা উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের এই কর্মী আগে থেকেই ছুটি নিয়েছিলেন। ছুটিতে থাকায় তাঁর বেতন আটকানো যায়নি।
এখন তাঁকে বদলি করা হল কেন? সূত্রের খবর, ছুটিতে থাকার সময়ে দিব্যা শুধু যে নারী মোর্চার আন্দোলনে নিয়মিত যোগ দিয়েছেন তা-ই নয়, ভানু ভবনে হামলার ঘটনাতেও তিনি অন্যতম অভিযুক্ত। দিব্যা ছুটিতে থাকার সময়ে গত ৫ জুলাই রোশন গিরি নারী মোর্চার দু’শো সমর্থক নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে এসে তাঁকে সাদা খাদা উপহার দিয়েছিলেন। পাহাড়ে সাদা খাদা দেওয়া দক্ষিণবঙ্গে সাদা থান পাঠানোর মতোই। সে দিন রোশন বলেছিলেন, আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে জেলাশাসককে সাদা খাদা দেওয়া হচ্ছে। এর পর ২৭ জুলাই দিব্যা কাজে যোগ দেন। ২৫ অগস্ট মেডিক্যাল লিভের দরখাস্ত দিয়ে ফের উধাও হয়ে যান। এই সময়েই তাঁকে বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তা বলে পাহাড়ের কর্মীদের একেবারে সমুদ্রতীরে পাঠানো! দার্জিলিঙের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এঁদের নিয়োগপত্রে রাজ্যের যে কোনও জায়গায় কাজ করার কথা লেখা রয়েছে।’’