ক্ষোভ জঙ্গলমহলে রাজবাড়ির অন্দরেও

প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই ঝাড়গ্রামের পর্যটন প্রসারে উদ্যোগী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজ পরিবারের দুই শরিক শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব ও জয়দীপ মল্লদেবের সঙ্গে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের এক চুক্তি হয়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০৪:৪২
Share:

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র

লোকসানে চলছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম পরিচালিত ‘ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স’। তাই গত চার বছরে লভ্যাংশের কানাকড়িও পায়নি রাজ পরিবার। অথচ রাজ পরিবারের দেওয়া সাড়ে ৯ একর জমিতে তৈরি হওয়া সেই ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ ও তার পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ পরিবারের উত্তরসূরি বিক্রম মল্লদেব।

Advertisement

প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই ঝাড়গ্রামের পর্যটন প্রসারে উদ্যোগী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাজ পরিবারের দুই শরিক শিবেন্দ্রবিজয় মল্লদেব ও জয়দীপ মল্লদেবের সঙ্গে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের এক চুক্তি হয়। সিদ্ধান্ত হয় রাজবাড়ির বাইরে সাড়ে ৯ একর জমিতে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম ও রাজ পরিবারের যৌথ উদ্যোগে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স চালানো হবে। জমির জন্য রাজ পরিবার কোনও টাকা নেয়নি। পরে ওই জমিতে পর্যটন দফতরের উদ্যোগে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। শর্ত অনুযায়ী সরকারি ওই অতিথিশালার লভ্যাংশের ৪৮ শতাংশ পাওয়ার কথা রাজপরিবারের দুই শরিকের। বাকি ৫২ শতাংশ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের।

ছবির মতো সাজানো এই ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে ২২টি কটেজের মধ্যে চারটি কটেজ সারা বছর জেলা প্রশাসনের হেফাজতে থাকে। সেখানে সরকারি আধিকারিকরা থাকেন। বাকি ১৮টি কটেজ ভাড়া দেওয়া হয়। বছরভরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে রয়েছে এখানে। তবে গত তিন আর্থিক বছরে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হিসেব বলছে, এই ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স লোকসানে চলছে। ২০১৫ সালে চালু হওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত লোকসানের বহর ১ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা। এখন ফের টাকা বরাদ্দ করে পরিকাঠামো
উন্নয়ন শুরু হয়েছে। কটেজগুলি ভেঙে পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। এখন বুকিং নেওয়াও বন্ধ।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শিবেন্দ্রবিজয় বা দুর্গেশ মল্লদেব ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুরপ্রধান, জেলা তৃণমূলের প্রবীণ নেতা। তাঁর ছেলে বিক্রমই এই পরিস্থিতিতে সরব হয়েছেন। পর্যটন উন্নয় নিগমের এমডি-কে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, চার বছর আগে তৈরি কটেজগুলো কেন ফের ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, ওই ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে নতুন কোনও কাজ করতে গেলে রাজ পরিবারকে জানাতে হবে। জমির মালিক দুর্গেশ ও জয়দীপরা যৌথ পরিচালন কমিটির সদস্যও। অভিযোগ, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই নতুন করে ভাঙাগড়ার কাজ শুরু হয়েছে।

ঝাড়গ্রামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনসভায় গিয়েছিলেন বিক্রম। বলেছিলেন, একজন পর্যটন ব্যবসায়ী হিসেবেই তিনি ওই সভায় গিয়েছেন। সেই বিক্রম রাজ্য সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। পর্যটন-প্রসারে আমরা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি পর্যটন দফতরকে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন যেভাবে প্রতি পদে আমাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে, তাতে চরম অসম্মানিত হচ্ছি।’’ বিক্রমের প্রশ্ন, সারা বছর পর্যটকের ভিড় থাকে ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। তারপরেও কী ভাবে প্রকল্পটি লোকসানে চলছে! তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইছি। কিন্তু সরকারি স্তরে কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন না। উল্টে পর্যটন উন্নয়ন নিগমের আধিকারিকরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। আমরা ঝামেলা চাই না। শান্তিপূর্ণ ভাবে শুধু নিজেদের প্রাপ্যটা চাইছি।’’

এ বিষয়ে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্য, ‘‘আমি নিজে দু’দফায় ঝাড়গ্রামে গিয়ে কথাবার্তা বলেছি। প্রয়োজনে আবার গিয়ে আলোচনা করব। রাজ পরিবারের বক্তব্য শুনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছি।’’ মন্ত্রী আরও জানান, প্রকল্পটির কিছু পুর্নগঠন, সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। তাই নতুন করে কাজ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে লাভ হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন