কার্তিকের মাঝামাঝি হয়ে গেল। কিন্তু হিমেল বাতাস নেই। আচমকা শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টি। দুপুরে আবার গরম। আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনার প্রভাব পড়ছে কৃষিজমিতে। মার খাচ্ছে সব্জি থেকে ফুল এবং সব রকমের শস্য চাষ। বাড়ছে ফসলে রোগ-পোকার হানা। চিন্তার ভাঁজ চাষির কপালে।
দুর্গাপুজোর মধ্যেই নিম্নচাপের জেরে রবিশস্য মার খেয়েছে। কালীপুজোর পরপরই জমিতে সর্ষেবীজ ফেলার কথা ছিল চাষিদের। কিন্তু নতুন করে বৃষ্টিতে মাথায় হাত পড়েছে সর্ষে চাষিদের। সবচেয়ে কঠিন অবস্থা সব্জি চাষে। পাতা ও গোড়া পচা রোগ, চুষি পোকার আক্রমণ নিয়ে এ বছরের গোড়া থেকেই কমবেশি ভুগছেন সব্জি চাষিরা। শীতকালের দিকে ‘পাখির চোখ’ থাকে রাজ্যের সব্জি চাষিদের। কিন্তু এ বার শীতের আলস্য দেখে অনেক চাষিই মরসুমি সব্জির বদলে সারা বছর ফলে, এমন সব্জি চাষের কথাই ভাবছেন রবি শস্যের মরসুমে।
কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণবঙ্গের সব্জি চাষিদের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একই ধরনের সব্জি চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘যিনি যে সব্জি লাগিয়েছেন, তিনি যদি কিছুটা জমি ছেড়ে রাখেন এবং ১৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় ফের একই সব্জি ফাঁকা জায়গায় লাগান তা হলে এক বার একটু ক্ষতি হলেও অন্য ক্ষেত্রে পুষিয়ে দেবে। এই বিপর্যয়গুলিতে শুধু ওষুধ ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। চাষের কৌশল বদলেই এর মোকাবিলা করতে হবে।’’
গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গ বা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, দুই মেদিনীপুরে সব্জি চাষে এখন অনেক চাষিরই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ছোট ছোট জমিতে চাষে আগ্রহ বেড়েছে। তাতে ক্ষতির বোঝাটাও তাঁদের কম বইতে হয়। ভেন্ডি, পটল, ঢেঁড়শ, উচ্ছে, বেগুন, লাউ, বরবটি, সিমের মতো সব্জিতে পুজো শুরুর সময় থেকেই অল্পস্বল্প ছত্রাক আক্রমণ শুরু হয়েছিল। এ বার ফের বৃষ্টির পরে গরম বাড়লে পাতা পচা আর গোড়া পচা থেকে ফসল বাঁচাতে কীটনাশক ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না বলেই জানিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।
পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে ভগবতী হোতার আড়াই বিঘা জমিতে ধসা রোগে আলুর ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিজ্ঞানীদের দাবি, ঠান্ডা পড়লে পোকার আক্রমণ যেমন কমত, তেমনই ধানের ক্ষেত্রে উপকার হত। গাছের বেড়ে ওঠায় স্বাভাবিক সালোক-সংশ্লেষ প্রক্রিয়াই ব্যাহত হয়েছে এই ঠান্ডা-গরম-আর্দ্রতার খেলায়। ফসল ফলার ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও তার বড়সড় প্রভাব পড়েছে। এমনিতেই এখন দিন ও রাতের তাপমাত্রার যে ফারাক থাকার কথা তা নেই। তার উপর দিনের বেলা অতি বিকিরণের ফলে ঝলসে যাচ্ছে বহু ফসল। গুণগত মান কমছে এর ফলে। বিজ্ঞানী কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘এগুলি সবই বিকিরণজনিত ক্ষয়ক্ষতি। তাপমাত্রার সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও বাড়ছে। গোড়া পচা, ফল পচা, পাতা পচার ঘটনা ঘটছে। একই কারণে এ আবহাওয়ায় সর্ষের ক্ষেত্রে জাপ পোকার আক্রমণের ভয় থাকবে।’’
পরামর্শের জন্য ফোন করুন ১৮০০৩৪৫৫২৩৫ (টোল ফ্রি)।