‘ক্লিয়ার’ বলেও চাকা ঘরের কাছে ফিরে যান রোহিত

ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বলছে, সে দিন রক্ষণাবেক্ষণ সেরে ককপিটে থাকা ইঞ্জিনিয়ারকে ‘অল ক্লিয়ার’ বার্তা দিয়ে বিমানের চাকার সামনে থেকে সরে এসেছিলেন রোহিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

রোহিত বীরেন্দ্র পাণ্ডে। —ফাইল ছবি

মৃত্যুর অমোঘ হাতছানি এড়াতে পারেননি রোহিত বীরেন্দ্র পাণ্ডে। স্পাইসজেটের ২২ বছর বয়সি টেকনিশিয়ান। গত ৯ জুলাই গভীর রাতে বিমানের চাকা গোটানোর হাইড্রলিক সাকশন সিস্টেমে মাথা আটকে মৃত্যু হয় তাঁর।

Advertisement

ওই দুর্ঘটনা সম্পর্কে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট বলছে, সে দিন রক্ষণাবেক্ষণ সেরে ককপিটে থাকা ইঞ্জিনিয়ারকে ‘অল ক্লিয়ার’ বার্তা দিয়ে বিমানের চাকার সামনে থেকে সরে এসেছিলেন রোহিত। এমন সময়ে তাঁর মোবাইলে ফোন করে এক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ওই চাকা-ঘরের আরও কিছু বিষয় পরীক্ষা করার জন্য বলেন। রোহিত ফিরে যান। কিন্তু দ্বিতীয় বারে আর ককপিটে থাকা ইঞ্জিনিয়ারকে সতর্ক করেননি তিনি। তদন্তকারীদের ধারণা, মাত্র চার মাস কাজে যোগ দেওয়া রোহিত সম্ভবত অনভিজ্ঞতার কারণেই এ দফায় ককপিটের ইঞ্জিনিয়ারকে সতর্ক করতে ভুলে যান। তিনি বিমানের পিছনের ডান দিকের চাকা-ঘরের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে পরীক্ষা করার সময়ে ককপিটের ইঞ্জিনিয়ার বোতাম টিপে সেই চাকা-ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। বাতাসের টানে রোহিতের মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত হাইড্রলিক সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

তবে, একই সঙ্গে গাফিলতির অভিযোগ উঠে এসেছে উড়ান সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধেও। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দাঁড়িয়ে থাকা বিমান রক্ষণাবেক্ষণের সময় যে ধরনের নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা নেওয়া হয়নি। সে দিনের দুর্ঘটনার পরে বিভিন্ন উড়ান সংস্থার অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারেরা স্বীকার করে নেন, তাঁরা কেউই ‘এয়ারক্র্যাফ্ট মেনটেন্যান্স ম্যানুয়াল’-এ থাকা নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন না। তা করলে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু অভিযোগ, ওই ম্যানুয়াল মেনে কাজ করলে অনেক সময় নষ্ট হয়, যা করতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এ ছাড়া, রোহিতের মতো নতুন টেকনিশিয়ানদের দিয়ে কাজ করানোর সময়ে সর্বদা সঙ্গে এক জন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা। অভিযোগ, সে দিন সে রকম কেউ ছিলেন না। তদন্তকারীদের বক্তব্য, সিনিয়র কেউ সঙ্গে থাকলে ককপিটের ইঞ্জিনিয়ারকে সতর্ক না-করার মতো ভুল হয়তো হত না। ম্যানুয়াল অনুযায়ী বিমানের পিছনের চাকার (যাকে ল্যান্ডিং গিয়ারও বলা হয়) কাছে কাজ করার সময়ে দরজা লক করে রাখার কথা। সে দিন তা-ও ছিল না।

রোহিতের মৃত্যুর জন্য ককপিটে থাকা ইঞ্জিনিয়ার বা বিমান সংস্থার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন ডিজিসিএ-এর উচ্চপদস্থ কর্তারা। প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে দিল্লিতে। পরে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রোহিতের পরিবারকে সংস্থার গ্রুপ বিমা প্রকল্পে ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে স্পাইসজেট জানিয়েছে। এ ছাড়াও ৪৬ বছর ধরে মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসেবে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকাও দেওয়া হবে তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন