ট্যাবলোয় বাংলার জয়গান

এ বার কুচকাওয়াজে দিল্লির বার্তা ছিল, সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়ন। রাজ্যও যে নারীর ক্ষমতায়নে পিছিয়ে নেই, সেটাও এ দিন তুলে ধরা হয়েছে রেড রোডে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৩
Share:

জয় হে: প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো। শুক্রবার, রেড রোডে। —নিজস্ব চিত্র।

রাজনীতিতে দিল্লি ও বাংলার টক্কর ছিলই। এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজেও চোখে পড়ল প্রতিযোগিতার রেশ!

Advertisement

দিল্লির রাজপথে বাংলার ‘একতাই সম্প্রীতি’-র ট্যাবলো ঠাঁই পায়নি এ বার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ছত্তীসগঢ়ের ট্যাবলোকে রাখতে গিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে এ রাজ্যকে। তাই রেড রোডের কুচকাওয়াজের শুরুতেই তিনি বাংলার ট্যাবলোকে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ দিন ট্রামের মতো দেখতে সেই ট্যাবলো রেড রোডে প্রদর্শিত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, দেশজুড়ে যখন ভেদাভেদ, ধর্মীয় মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তখন বাংলার চিরাচরিত একতার সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চেয়েছিল নবান্ন।

এ বার কুচকাওয়াজে দিল্লির বার্তা ছিল, সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়ন। রাজ্যও যে নারীর ক্ষমতায়নে পিছিয়ে নেই, সেটাও এ দিন তুলে ধরা হয়েছে রেড রোডে। বায়ুসেনার ট্যাবলোয় যেমন যুদ্ধবিমানের চালকের পোশাকে (জি স্যুট) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জ্যোৎস্না চিকারাকে দেখা গিয়েছে, কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শশী মেত্রী, তেমনই দৃপ্ত পদক্ষেপে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের নব্য আইপিএস অফিসার প্রতীক্ষা ঝাড়গড়িয়ার নেতৃত্বে কুচকাওয়াজ করেছেন রাজ্য পুলিশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের মহিলা জওয়ানেরাও। সিভিল ডিফেন্সের প্রমীলা বাহিনীকে দেখা গিয়েছে লাল পাড়-সাদা শা়ড়ি, লাল টুপিতে। মহিলা এনসিসি ক্যাডেটদের নেতৃত্বে ছিলেন সিনিয়র আন্ডার অফিসার মাসুকা খাতুন। কারা দফতরের প্যারে়ডেও এ দিন মহিলাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।

Advertisement

এ সব দেখে প্রশাসনের একাংশ বলছেন, দিল্লিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহিলা, নির্মলা সীতারমন। ফলে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলবেই। এ রাজ্যের প্রধানও তো মহিলা। শুধু তা-ই নয়, তিনি পরপর দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের মেয়েদের উন্নতিতে তাঁর কন্যাশ্রী প্রকল্প আন্তর্জাতিক মহলেও পুরস্কৃত হয়েছে। তাই এ রাজ্য যে নারী ক্ষমতায়নকে তুলে ধরবে, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

দিল্লিতে সামরিক বাহিনীর কসরত, কুচকাওয়াজের পাশাপাশি ফুটে ওঠে বিভিন্ন রাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র। সেখানে বাংলা ঠাঁই পায়নি। এ দিন রেড রোডে তাই বাংলার আঞ্চলিক বৈচিত্র ফুটে উঠেছে। ছৌ নাচ, আদিবাসী নৃত্য— কী ছিল না সেখানে! অনেকে অবশ্য বলছেন, দিল্লিতে বাংলার ট্যাবলো থাকলেও বিভিন্ন জেলা ও উপজাতি সংস্কৃতি রে়ড রো়ডের অনুষ্ঠানের স্বাভাবিক অঙ্গ। এর আগেও রায়বেঁশে, মেচ উপজাতির নৃত্য দেখা গিয়েছে এখানে।

এ দিন সকালে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী রাজভবন থেকে বেরিয়ে রে়ড রো়ডের অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছনোর পরেই ফৌজি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ফুল ছড়াতে ছড়াতে উড়ে যায়। তার পরেই শুরু হয় কুচকাওয়াজ। সামরিক বাহিনীর তরফে কুচকাওয়াজে ছিলেন স্থলসেনার প্যারা-কম্যান্ডো, রাজপুতানা রাইফেলস, গোলন্দাজ বাহিনীর জওয়ান, অফিসারেরা। পিনাকা রকেট, বফর্স কামানের মতো হাতিয়ার হাজির করানো হয়েছিল। ছিল ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের মতো প্রযুক্তি-যুদ্ধের সরঞ্জামও।

বর্তমানে বায়ুসেনার হাতিয়ার বলতেই সুখোই-৩০ বিমানের কথা মনে প়়ড়ে। তার মডেল তো ছিলই, এসেছিল আগামী দিনে বায়ুসেনার ভাঁড়ারে আসতে চলা র‌্যাফালের মতো উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমানের মডেলও। ছিল চিনুক হেলিকপ্টার, সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস, আইএল-৭৬ বিমানের মডেল।

নৌবাহিনীর ভাঁড়ারে ‘কলকাতা’ বলতে বোঝায় ‘আইএনএস কলকাতা’ নামে একটি ডেস্ট্রয়ার গোত্রের যুদ্ধজাহাজ। তার মডেলের পাশাপাশি নৌসেনার ডুবোজাহাজের মডেল, উন্নত ধরনের সমর প্রযুক্তির একাধিক ট্যাবলোও। এ সবের পাশাপাশি ছিলেন সিআইএসএফ, বিএসএফের জওয়ানেরাও।

রাজ্যের ভাঁড়ারেও যে কমতি নেই, তা বুঝিয়ে দিয়েছে নবান্ন। কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক, র‌্যাফ, সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানদের কুচকাওয়াজও তারিফ কুড়িয়েছে। ছিল আবগারি দফতর, দমকলের ট্যাবলোও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন