Govt Scheme

Govt Scheme: বরাদ্দই নেই, আলো দেওয়া যায়নি চোখে

বছর ঘুরে গেল। প্রকল্পের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। চোখের চিকিৎসাকে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প ‘চোখের আলো’য় কাজও কার্যত কিছুই হয়নি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৩৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

বছর ঘুরে গেল। প্রকল্পের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। চোখের চিকিৎসাকে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প ‘চোখের আলো’য় কাজও কার্যত কিছুই হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করার পরে ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রস্তাব জমা পড়ে এবং ২০২১-এর ৪ জানুয়ারি চালু হয় পাঁচ বছর সময়সীমার এই প্রকল্প। তার প্রথম বছরের মেয়াদ শেষে কাজকর্মের খতিয়ান যাচাই করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রাপ্তির ঘর ফাঁকা।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই এক বছরে দুয়ারে চক্ষু চিকিৎসার ব্যবস্থাকে প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া দূরে থাক, রুটিনমাফিক যৎসামান্য কাজ ছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় চোখের চিকিৎসার বাড়তি কোনও অগ্রগতি হয়নি। মাঝখানে তো এমন একটা সময় এসেছিল, যখন স্বাস্থ্যকর্তারাই জানিয়েছিলেন যে, ‘চোখের আলো’ প্রকল্প আর সচল নেই। তাতে নবান্ন স্তরে তোলপাড় শুরু হওয়ায় আবার নিজেদের কথা কার্যত গিলে ফেলতে হয় তাঁদের। কিন্তু সত্যিটা চাপা পড়েনি। গত ১৭ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য ভবনে ‘চোখের আলো’র প্রথম বছরের পর্যালোচনা বৈঠকে যে-সব তথ্য-পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তাতে প্রকল্পের অবস্থা বেজায় অস্বস্তিতে ফেলেছে স্বাস্থ্য দফতরকে।

দেখা যাচ্ছে, জেলা স্তরে অধিকাংশ হাসপাতালে চোখের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার এবং অস্ত্রোপচারের আগে পরীক্ষানিরীক্ষা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছয়নি। ২০২১-এর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ন’টি জেলায় ১১টি হাসপাতাল এই প্রকল্পে কোনও কাজই করেনি। অর্থাৎ তাদের ‘পারফরম্যান্স রিপোর্ট’ শূন্য! ছ’টি জেলায় এমন ১৯ জন চক্ষু সার্জনের নাম উঠে এসেছে, যাঁরা কোনও অস্ত্রোপচারই করেননি। জেলায় সাতটি মেডিক্যাল কলেজে প্রস্তাবিত চক্ষু ব্যাঙ্কের একটিও চালু করা যায়নি।

Advertisement

সরকারি রিপোর্ট বলছে, গত এক বছরে রাজ্যে যত কর্নিয়া সংগৃহীত হয়েছে, তার ৯০ শতাংশই বেসরকারি ক্ষেত্রে। সরকারি ক্ষেত্রে হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। অপটোমেট্রিস্টের(যাঁরা চোখ পরীক্ষা করেন এবং চশমা দেন) চরম আকালেও কোনও নিয়োগ হয়নি। ছানি কাটার ক্ষেত্রেও লক্ষ্যের ৩০ শতাংশে পৌঁছতে পারেনি অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল। সব চেয়ে বড় কথা, চোখের আলো প্রকল্পের জন্য আলাদা ভাবে কোনও অর্থই এই এক বছরে বরাদ্দ করে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার!

এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘অন্ধ্র, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যও কেন্দ্রের ‘জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণ প্রকল্প’-এর পাশাপাশি নিজেদের আলাদা চক্ষু চিকিৎসা প্রকল্প চালু করেছে। তার জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ করেছে তারা। তাই সাফল্য পাচ্ছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে আলাদা প্রকল্প ঘোষণা করা সত্ত্বেও এই প্রকল্পে আলাদা অর্থ মিলছে না।’’ ওই কর্তার আরও বক্তব্য, দুয়ারে চক্ষু চিকিৎসা পৌঁছে দিতে হলে অর্থের পাশাপাশি দরকার লোকবল, প্রধানত অপটোমেট্রিস্ট। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন অপটোমেট্রিস্ট প্রয়োজন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এত দিন ছিলেন মোটে ৫০৩ জন। তার মধ্যে ডিসেম্বরে ২১০ জন অবসর নিয়েছেন। তা হলে কী করে কাজ হবে, প্রশ্ন ওই কর্তার।

স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘আমাদের নানা রকম ফান্ড থাকে। সে-সব থেকে কিছু কিছু করে টাকা নিয়ে এই প্রকল্পের কাজ হয়েছে। চোখের আলোর জন্য গত বছর আলাদা ‘হেড অব অ্যাকাউন্ট’ করা হয়েছে। আমরা অনুরোধ করলেই সেখান থেকে টাকা দেবে অর্থ দফতর। সেই প্রস্তুতি চলছে।’’ নিগমের বক্তব্য, করোনার জন্য কাজ একটু থমকেছে। স্কুলে গিয়ে চোখ পরীক্ষা বা চশমা দেওয়া যায়নি। সে-সব এ বার ঠিক হয়ে যাবে। চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচার বাড়াতে বলা হয়েছে। আর অস্থায়ী ভিত্তিতে অপটোমেট্রিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। যদিও অনেক স্বাস্থ্যকর্তাই এতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ, এক বছর আগেও তাঁরা এমন আশ্বাস পেয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন