Arambagh

ছাত্রছাত্রীশূন্য আরামবাগের স্কুলে শিক্ষক আসেন শুধু ঘর খুলতে

হুগলির আরও কিছু স্কুলে পড়ুয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অনুপাতে বিস্তর তারতম্য রয়েছে বলে মানছেন জেলা শিক্ষা (মাধ্যমিক) দফতরের এক পরিদর্শক।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৯
Share:

সেই স্কুলে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

গত বছর পর্যন্ত খাতায়-কলমে দু’জন পড়ুয়া ছিল। এ বছর হুগলির আরামবাগের নারায়ণপুর জুনিয়র হাই স্কুল পুরোপুরি পড়ুয়াশূন্য। বাড়ির কাছাকাছি বদলি নিয়ে এসে বিপাকে পড়েছেন ওই স্কুলের একমাত্র শিক্ষক সুকৃতি গুপ্ত। তিনি এবং এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী— দু’জনে রোজ স্কুলে আসেন। দরজা-জানালা খুলে কিছু ক্ষণ বসে চলে যান। মিড-ডে মিলের বালাই নেই।

Advertisement

একে স্কুলে কাজ না-থাকায় উদ্বেগ রয়েছে। তার উপরে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর একটি পর্যবেক্ষণ সুকৃতির উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। স্কুলে শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত এক মামলার পর্যবেক্ষণে শুক্রবার রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর পরামর্শ, ‘‘পড়ুয়া অত্যন্ত কম থাকলে স্কুলের অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিন। অযথা শিক্ষক রেখে লাভ কী? যেখানে শিক্ষক নেই, সেখানে পাঠান।’’

বিচারপতির এই মন্তব্যে স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা সংশয়ে সুকৃতি। ইতিমধ্যে অবশ্য তিনি ফের বদলির আবেদন করেছেন শিক্ষা দফতরে। কিন্তু এখনও কোনও সাড়া পাননি। সুকৃতির কথায়, ‘‘এখানে এসে আমার খুব ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আবেদন কী পর্যায়ে আছে, জানি না। উদ্বেগে আছি।”

Advertisement

সুকৃতি আগে শিক্ষকতা করতেন খানাকুলের ঠাকুরানিচক ইউনিয়ন হাই স্কুলে। তাঁর বাড়ি আরামবাগের তেলিয়া-ভালিয়া গ্রামে। ২০১৪ সালে তিনি বদলি নিয়ে এসে নারায়ণপুর জুনিয়র হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ধীরে ধীরে ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। গ্রামবাসীরা জানান, সেই সময়ে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা খুব কম ছিল। নিয়োগ হচ্ছিল না। ফলে, তাঁরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে রাখতে সাহস পাননি।

স্কুলের সভাপতি প্রবীর কুণ্ডু জানান, ২০১২ সাল স্কুল চালু হয়। শুরুতে ১৩০ জন পড়ুয়া ছিল। কিন্তু সমস্ত স্তরে আবেদন করেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক মেলেনি। দু’জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে অতিথি-শিক্ষক হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ করে ক্লাস চালানো হচ্ছিল। কিন্তু তাঁদের নিয়মিত আসা নিয়ে অভিযোগ ছিল। পরে শিক্ষক যখন মিলল, ততদিনে পড়ুয়ারা আশপাশের স্কুলে ভর্তি হতে শুরু করে। আর পড়ুয়া মেলেনি।

অবশ্য শুধু নারায়ণপুর জুনিয়র হাই স্কুলই নয়, খানাকুলের জগৎপুর গার্লস জুনিয়র হাই স্কুলেও কোনও পড়ুয়া নেই। এক জন মাত্র শিক্ষিকা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। স্কুলে তালা পড়েছে বলে জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

আবার কিছু স্কুলে পড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষিকা বেশি— এমন উদাহরণও আছে। আরামবাগেরই নওপাড়া গার্লস জুনিয়র হাই স্কুলে চার জন শিক্ষিকা আছেন। ছাত্রী ১৭ জন।

হুগলির আরও কিছু স্কুলে পড়ুয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অনুপাতে বিস্তর তারতম্য রয়েছে বলে মানছেন জেলা শিক্ষা (মাধ্যমিক) দফতরের এক পরিদর্শক। তিনি বলেন, ‘‘সরকার সম্প্রতি একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছে, যেখানে পড়ুয়া নেই বা কম, সেখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তুলে যে সব স্কুলে পড়ুয়া বেশি, সেখানে দিতে হবে। সেটি এখনও রূপায়ণ হয়নি। জেলার কোন স্কুলে কত শিক্ষক আছে এবং পড়ুয়া আছে, সেই ডেটা আমরা তৈরি করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন