পচা-ধসা সরকারি আলুর ক্রেতা নেই, কমেনি দামও

ঠিক যেন গত বছরেরই পুনরাবৃত্তি। নানাবিধ সরকারি আস্ফালনের পরেও রাজ্যজুড়ে আলুর দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই। উল্টে লাফিয়ে বেড়েছে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু বাজারে। ক্রেতাদের অভিযোগ, শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে শুক্রবার থেকেই দফায় দফায় আলুর দাম বাড়ছিল। রবিবার তা কিলোপ্রতি ৩৪ টাকাতেও পৌঁছে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

বিক্রি হচ্ছে সরকারি পচা আলু। রবিবার গড়িয়াহাটে। নিজস্ব চিত্র

ঠিক যেন গত বছরেরই পুনরাবৃত্তি।

Advertisement

নানাবিধ সরকারি আস্ফালনের পরেও রাজ্যজুড়ে আলুর দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই। উল্টে লাফিয়ে বেড়েছে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু বাজারে। ক্রেতাদের অভিযোগ, শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে শুক্রবার থেকেই দফায় দফায় আলুর দাম বাড়ছিল। রবিবার তা কিলোপ্রতি ৩৪ টাকাতেও পৌঁছে যায়।

কলকাতার বাজারে চড়া দামের আলুর পাশাপাশি ১৪ টাকা দামের সরকারি আলু। কিন্তু তা কেনার লোক বিশেষ নেই। রবিবার বেশির ভাগ মানুষ ভিড় জমালেন ২০-২২ টাকা দামের আলুর দোকানেই।

Advertisement

কেন? জবাব দিলেন মানিকতলার বাজারের ক্রেতা অমরেশ বসু। তিনি বলেন, “গত বারে সরকারি আলু কিনে ঠকেছিলাম। ১ কেজি আলুতে অন্তত ৩০০ গ্রাম পচা। এ বারেও একই অবস্থা। এর চেয়ে তো ২০ টাকা দিয়ে বাছা আলু কেনাই ভাল।”

একই কথা উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের সব বাজারের ক্রেতাদেরই। আর সে জন্যই সরকারি কর্মীরা আলুর গাড়ি নিয়ে বাজারে পৌঁছলেও এ দিন তার ক্রেতা প্রায় ছিল না। গাড়ি বাজারে পৌঁছতেই প্রথমে কিছু ক্রেতা ভিড় করেছিলেন। কিন্তু আলুর মান দেখার পরে সেই ভিড় ক্রমশ ফাঁকা হতে থাকে। শ্যামবাজারের অনাদি দাস বলেন, “গত বার খুব শিক্ষা হয়েছিল। এ বারও দেখছি, একই রকম আলু। এই জিনিস কিনতে গেলে সময় নষ্ট হবে, বাড়িতেও গালমন্দ জুটবে। তাই অল্প হলেও বেশি দামের আলুই কিনেছি।”

মানিকতলা বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশ অবশ্য সরকারি দামে আলু কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলেন। বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সহকারী সম্পাদক কার্তিক সাহা বলেন, “সরকারি আলু ১২ টাকা দরে কিনে দু’টাকা মতো লাভ রেখে দোকানদাররা বিক্রি করছেন। কিন্তু সেই আলু ক্রেতারা কিনতে চাইছেন না।” ওই বাজারেরই এক বিক্রেতা জানান, লোকে কিনছে না-বলে তাঁরা আর সরকারি আলু কিনবেন না। তাতে কিছুটা হলেও ক্ষতির পরিমাণ কমবে।

হাতিবাগানের এক বিক্রেতা বলেন, “সরকারি আলু পচাধসা যেমন আসছে, তেমনই বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হচ্ছে। দাম কম দেখেও নিচ্ছেন না ক্রেতারা।” হাতিবাগান বাজারে ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার ও ব্যবসায়ীদের গোলমালে তাঁদেরই ভোগান্তি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও দাম কমাচ্ছেন না। সেই সুযোগে প্রশাসনও অনেক আগে মজুত করা খারাপ আলু কম দামে বাজারে ছাড়ছে।

একই অবস্থা লেকমার্কেট, গড়িয়াহাটেও। এ দিন সকালে লেক মার্কেটে প্রায় ২০৬ বস্তা আলু আনা হয়েছিল। গড়িয়াহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিলীপ মণ্ডল বলেন, “সরকারি আলু একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না।”

আলু বিক্রি নিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সকল আড়তদাররা আজ, সোমবার এক জরুরি বৈঠকে বসছেন। অন্য রাজ্যে আলু যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তার প্রতিবাদে আজ, সোমবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডল জানিয়েছেন, সংগঠনের ৫০ হাজার সদস্য ও কয়েক লক্ষ শ্রমিক এই কর্মবিরতিতে সামিল হবেন। বরেনবাবুর কথায়, “আজ হিমঘর থেকে কেউ আলু বের করবে না, পাইকারি বাজারেও আলু যাবে না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ভিন্রাজ্যে আলু পাঠানোর বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন