বহু সমবায়ে  ভোট হয় না, বোর্ডও নেই

সমবায়ের সাফল্যের নিরিখে এই জেলা রাজ্যের অন্যান্য জেলার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। গত কয়েক বছরে ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। গোষ্ঠী গঠনে ও গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই জেলার স্থান রাজ্যে সবার উপরে।

Advertisement

মনিরুল শেখ

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৬
Share:

সমবায় ব্যাঙ্ক।—ফাইল চিত্র।

সমবায়ের মূল মন্ত্রই হল, নাগরিকদের প্রত্যক্ষ যোগদান। কিন্তু নদিয়া জেলার প্রায় অর্ধেক সমবায় সমিতিতেই কোনও নির্বাচিত বোর্ড নেই। ফলে সমবায় পরিচালনার সুযোগ হারাচ্ছেন সদস্যেরা। কর্মচারীরা হয়ে উঠছেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। এর ফলে জেলা জুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

Advertisement

সমবায়ের সাফল্যের নিরিখে এই জেলা রাজ্যের অন্যান্য জেলার চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। গত কয়েক বছরে ভাল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। গোষ্ঠী গঠনে ও গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই জেলার স্থান রাজ্যে সবার উপরে।

কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অধীনে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ৩৫২টি সমবায় সমিতি রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষই হন সমিতির সদস্য। নির্বাচিত পরিচালন সমিতির মাধ্যমে সাধারণ সদস্যেরাই সমিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি নানা বিষয় সম্পর্কে অবগত হন। দফতরের জেলা স্তরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত পঞ্চায়েত ভোটের আগের হিসেবে, ১৪৮টি সমিতিতে নির্বাচিত বোর্ড ছিল না। পরে ৪৪টিতে মনোনীত বোর্ড গড়া হয়। বাকিগুলিতে সর্বোচ্চ বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে ম্যানেজারেরাই পরিচালন সমিতির প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় সমিতি সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছেন না সাধারণ সদস্যেরা।

Advertisement

নাকাশিপাড়ার আনিসুর রহমানের আক্ষেপ, ‘‘আমি এই এলাকার সমবায় সমিতির সদস্য। অনেক দিন ধরেই বোর্ড নেই। ফলে কী হচ্ছে কিছুই জানতে পারছি না।’’ দফতরের সহকারী নিবন্ধক শুভ রায় বলেন, ‘‘ভোট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’’

সমবায় দফতরের জেলাস্তরের এক আধিকারিক জানান, নিয়ম মতো প্রত্যেক সমবায়ে বছর দু’বার সাধারণ সভা হওয়ার কথা। নির্বাচিত বোর্ড না থাকলেও ওই সভা হয়। ওই সভাতেই বাজেট পেশ হয়। কর্মী নিয়োগের প্রস্তাবও পাশ হতে হয় ওই সভায়। সমিতির অডিট নিয়ে পর্যালোচনা হয়। সদস্যপদ গ্রহনের সময়েই সদস্যকে সমিতির শেয়ার কিনতে হয়। সাধারণ সভাতেই লভ্যাংশের হিসেব দাখিল করা হয়। আর শেয়ার অনুযায়ী সদস্যদের মধ্যে ওই লভ্যাংশ ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচিত বোর্ড না থাকার দরুণ এ সব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

রাজ্য সমবায় দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সমবায়ে নির্বাচিত বোর্ড না থাকলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। ম্যানেজার সর্বেসর্বা হয়ে উঠে নিজের মতো করে ঋণ দিতে থাকেন। সে ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সমিতির আর্থিক হাল না বুঝে দেদার খরচের নজিরও আছে। অতীতে এ রাজ্যের একাধিক সমিতি এ কারণে দেউলিয়া হয়েছে। ক’মাস আগেই হাওড়ার এক সমিতিতে এমন ঘটেছে। হরিণঘাটার এক সমিতিতে আবার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নিজের বেতন বাড়িয়ে নেওয়া এবং কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।

কিন্তু বোর্ড গড়ার জন্য নির্বাচন হচ্ছে না কেন?

জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের এক কর্তার মতে, এর পিছনে রয়েছে রাজনীতির খেলা। গোটা জেলা জুড়েই শাসক দল অর্ন্তদ্বন্দ্বে দীর্ণ। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই জেলার এক প্রথম সারির নেতা তাঁর এলাকার একটি সমিতিতে নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন দফতরের এক কর্তাকে। সঙ্গে-সঙ্গে আর এক নেতা সমবায় মন্ত্রীকে জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সমবায় ভোট করলে গ্রামে-গ্রামে দলের ভাঙন আরও চওড়া হবে। এর পরেই বিষয়টি মুলতুবি হয়ে যায়। মনিতেই পঞ্চায়েতের টিকিট বিলি নিয়ে ঝামেলা হবে। তার পরেই বিষয়টি মুলতুবি হয়ে যায়।

সমবায় সমিতিতে ব্লকের স্তরের ইনস্পেক্টরেরা ভোট করানোর দায়িত্বে থাকেন। এমনই এক ইন্সপেক্টরের দাবি, দলাদলির ভয়ে সমিতিগুলিকে বোর্ডহীন করে রাখছেন নেতারা। তাঁদের মৌখিক ভাবে ভোট করাতে নিষেধ করা হচ্ছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী অবশ্য রাজনৈতিক দলাদলির কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ও সব কিছু নয়। আসলে অনেক দিন ধরে পঞ্চায়েত ভোট হল। পুলিশ-টুলিশও পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই সব জায়গায় ভোট করানো যায়নি।’’

জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শিবনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি বারবারই বলি, বোর্ড না থাকলে সমবায় ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে এটাও ঘটনা যে আমার জেলার বহু সমিতিতেই বোর্ড নেই। বিষয়টি ভাবার মতো।’’ সমবায় মন্ত্রী বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়িই বিজ্ঞপ্তি জারি করে ভোট করানোর ব্যবস্থা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন