দশ বছর আগে বড়বাজারের গুলিচালনার ঘটনায় সে ছিল মূল অভিযুক্ত। তিন বছর আগে মামলাটিতে সুপ্রিম কোর্টে শর্তাধীনে জামিন পেয়েছে গোপাল তিওয়ারি। কিন্তু এখন সে যাবতীয় শর্ত শিকেয় তুললেও তার জামিন খারিজ করতে লালবাজারের কর্তৃপক্ষ কেন গা করছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশেরই অন্দরে।
শীর্ষ আদালত কী কী শর্তে জামিন মঞ্জুর করেছিল?
লালবাজারের খবর, গোপালের উপরে প্রযোজ্য হয়েছিল তিনটি শর্ত—
১) অপরাধ থেকে দূরে থাকতে হবে
২) সপ্তাহে এক দিন তদন্তকারী অফিসারদের সামনে হাজিরা দিতে হবে, এবং
(৩) পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে পুলিশকে গুলি করার ঘটনার পরে তিনটি শর্তই লঙ্ঘিত হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজারের একাংশের দাবি।
কী রকম? এই মহলের ব্যাখ্যা: গুলিচালনায় অভিযুক্ত হয়ে গোপাল প্রথম শর্তটি ভেঙেছে। উপরন্তু ওই দিন থেকে গোপাল বেপাত্তা, ফলে সে গত তিন সপ্তাহ পুলিশের কাছে নিয়মমাফিক হাজিরা দেয়নি। এতে দ্বিতীয় শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। পুলিশেরই অফিসারকে আক্রমণে যুক্ত হওয়ায় পুলিশকে সহযোগিতার শর্তটিও ধূলিসাৎ।
এই অবস্থায় গোপালের জামিন রদ করতে লালবাজার কেন আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে না, সেই আক্ষেপ কুরে কুরে খাচ্ছে পুলিশের নিচুতলাকে। তাদের মতে, জামিন খারিজ হলে পরে গোপালের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আর্জি জানানো যেত। তাতে পলাতক গোপাল আরও চাপে পড়ত। কিন্তু কর্তারা সুযোগটি কাজে না-লাগানোয় আম পুলিশকর্মীরা হতাশ। অনেকের দাবি: শাসকদলের নেতৃত্ব ও পুলিশের উপরতলার একাংশের সঙ্গে ‘সুসম্পর্কের’ খাতিরেই গোপাল তিওয়ারি পার পেয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গেই উঠে আসছে আলিপুরের তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার নাম। নিচুতলার একাংশ আগেই অভিযোগ তুলেছিল, পুলিশ নিগ্রহে অভিযুক্ত প্রতাপকে পুলিশেরই কেউ কেউ আগাম জামিন পেতে সাহায্য করেছে। এবং তাদের আশঙ্কা, একই ভাবে গোপালকেও রেহাই দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ‘‘গোয়েন্দা-পুলিশের মধ্যে গোপালের ‘সোর্স’ রয়েছে। তারাই ওকে আড়ালে রাখছে, যাতে সুযোগ মতো কোর্টে এনে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিন দেওয়ানো যায়।’’— মন্তব্য এক সূত্রের। গিরিশ পার্ক-কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসারেরা এ কথা মানেন না। তাঁদের বক্তব্য, গোপালের জামিন বাতিলের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কপি নিয়ে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘সময় হলেই কোর্টে যাব।’’