পর্দা ছেড়ে নতুন লড়াইয়ে ইলিয়া, খাদিজারা

শুক্রবার ‘রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি’ ও ‘সাউথ কলকাতা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেন’ নামে দু’টি স‌ংস্থা সুপ্রিম কোর্টের তাৎক্ষণিক তিন তালাক বাতিলের রায় নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৯:১০
Share:

নিজেদের লড়াইয়ের কাহিনি শোনাচ্ছেন ওঁরা। তিন তালাক বাতিলের রায় নিয়ে অনুষ্ঠানে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

চোদ্দ-পনেরো। বড় জোর ষোল। এর মধ্যে পাত্র না-জুটলে গঞ্জনায় গ্রামে টেঁকা দায়। তাই কেউ নবম শ্রেণি, কেউ বা মাধ্যমিকটুকু উতরেই বাধ্য হয়েছেন শ্বশুরবাড়ি যেতে। তার পরে নির্যাতন সহ্য করেও পড়ে ছিলেন স্বামীর বা়ড়িতে। কিন্তু তাতেও আটকানো যায়নি তিন তালাক। এখন কেউ সেলাই করে সন্তানদের মুখে দু’মুঠো খাবার জোগাচ্ছেন। কেউ লেখাপড়া শুরু করেছেন নতুন করে।

Advertisement

শুক্রবার ‘রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি’ ও ‘সাউথ কলকাতা সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেন’ নামে দু’টি স‌ংস্থা সুপ্রিম কোর্টের তাৎক্ষণিক তিন তালাক বাতিলের রায় নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানেই নিজেদের লড়াইয়ের কাহিনি তুলে ধরেন ভুক্তভোগী ইলিয়া, খাদিজারা। এই রায়কে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বৈবাহিক সম্পর্কে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠারও দাবি তোলেন ওঁরা।

ক্লাস নাইনে পড়তে বিয়ে হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার ইলিয়া বিবির। দিনে চাষবাস করলেও সুর্য ঢলতেই গাঁজায় বুঁদ হয়ে থাকতেন স্বামী। নিত্য বচসা। এর মধ্যেই আবার বিয়ে করলেন স্বামী। ইলিয়া তখন দুই সন্তানের মা। দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরে ইলিয়ার ওপর নির্যাতন বাড়ল।

Advertisement

এক দিন বচসার মধ্যে ইলিয়ার স্বামী তাঁকে তিন বার তালাক বলে দিলেন। ব্যাস! ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন, কী ভাবে দু’বেলার খাবার জুটবে— এই সব ভেবে তালাক পেয়েও স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন ইলিয়া। কিন্তু দুই সন্তান ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরেও যখন তাদের বাবা জানালেন চিকিৎসার খরচ দেবেন না, আর সইতে পারেননি। বেরিয়ে এলেন ইলিয়া বিবি।

ইলিয়া জানান, ছেলেমেয়ের সঙ্গে লেখাপড়া শুরু করেছেন ফের। কারণ লেখাপড়া শিখলে রোজগার বাড়বে। চার বছরের মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন, ‘‘এদের পেট ভরে খেতে দিতে পারি না। অসুখ বিসুখে ধার করে চিকিৎসা করাই। ওদের বাবার কি দায়িত্ব নেই?’’

বারাসতের কদম্বগাছির খাদিজা বিবি স্বামীর তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী। সে কথা বিয়ের আগে জানতেন না তিনি। গয়না, আসবাব পত্র ও নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা পণ নিয়ে মোটর মেকানিক শাহবুদ্দিন তাঁকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু স্বামীর আগের বিয়ের বিষয়ে জেনে যেতেই নির্যাতন শুরু হয় শ্বশুরবাড়িতে। মারধর করতেন স্বামীও। দু’মাসের গর্ভবতী খাদিজাকে এক দিন তিন তালাক দিয়ে দিলেন শাহবুদ্দিন। সন্তানসম্ভবা খাদিজা বাপের বাড়ি ফিরে এলেও গয়না, টাকা, আসবাবপত্র কিছুই পাননি। দু’বছরের সন্তান আজাদকে নিয়ে এখন নতুন আজাদির লড়াইয়ে এই তরুণী। খাদিজার প্রশ্ন— ‘‘গর্ভবতী মহিলাকে তালাক দেওয়া তো ধর্ম-বিরুদ্ধ। পণ নেওয়া গুনাহ্। সেগুলো কেউ মানছে না। শুধু তালাক দেওয়ার সময়েই ধর্মের দোহাই!’’

একই প্রশ্ন তোলেন অনুষ্ঠানের আয়োজক আফরোজা খাতুন। তিনি বলেন, মুসলিমরা আধুনিক জীবন যাপন করছেন, ব্যাঙ্কে লেনদেন করছেন, সুদের টাকা নিচ্ছেন। শুধু মেয়েদের অধিকারের ক্ষেত্রেই ধর্মীয় বিধির কথা উঠবে? অন্যতম আয়োজক খাদিজা বানুর কথায়, দীর্ঘদিনের জগদ্দল পাথরে একটা ধাক্কা পড়েছে মাত্র। লড়াই এখনও দীর্ঘ। প্রাক্তন বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের সমান অধিকার থাকা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন