কালীপুজো এলেই চোখে জল সুমিত্রার

দীর্ঘদিন তিনি কালীপুজোর সময় বাড়ি থেকে বেরোন না। শব্দবাজি ফাটলে কেঁপে ওঠেন। ছেলের ছবির দিকে চোখ যায়। গাল থেকে গড়িয়ে পড়ে জলের ধারা।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৪
Share:

মৃত দীপক দাসের ছবি হাতে তাঁর মা। ছবি: দীপঙ্কর দে

দীর্ঘদিন তিনি কালীপুজোর সময় বাড়ি থেকে বেরোন না। শব্দবাজি ফাটলে কেঁপে ওঠেন। ছেলের ছবির দিকে চোখ যায়। গাল থেকে গড়িয়ে পড়ে জলের ধারা।

Advertisement

তিনি— সুমিত্রা দাস। বৈদ্যবাটীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। রাজ্যের প্রথম ‘শব্দ শহিদ’ দীপক দাসের মা। ২১ বছর আগে শব্দবাজি ফাটানোর প্রতিবাদ করায় খুন হন দীপক। এখন আর ওই ঘটনা নিয়ে কথাও বলতে চান না সুমিত্রাদেবী। দীপকের ভাইপো শুভঙ্কর বলেন, ‘‘ঠাকুমা অসুস্থ। কালীপুজোর সময়টা এলেই যেন আরও কেমন হয়ে যান! আমরা কেউ বাজি পোড়াই না।’’

১৯৯৭ সালের ৩০ অক্টোবর ছিল কালীপুজো। দেদার শব্দবাজি ফাটছিল সেই রাতে। প্রতিবাদ করেছিলেন দীপক। পরের দিন সকাল ৭টা নাগাদ বাড়ি বাড়ি দুধ বেচতে বেরিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির কাছেই পিয়ারাপুরের পশ্চিমপাড়ায় তাঁকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। আততায়ীদের ধরার দাবিতে সে দিন আন্দোলন দেখেছিল পিয়ারাপুর। খুনের অভিযোগে ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা পরে জামিন পায়। বছর দুয়েক বাদে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত গৌতম মণ্ডল খুন হয়। অপর এক অভিযুক্ত, ছোট মনা গণপিটুনিতে মারা যায়। বছর দশেক আগে চুঁচুড়া আদালত অন্য অভিযুক্তদের বেকসুর খা‌লাস ঘোষণা করে।

Advertisement

আরও পড়ুন: নাতির দেহ আগলে অপেক্ষায় বাংলাদেশি দিদা

শুভঙ্করের খেদ, ‘‘ শুনেছি, প্রথম কয়েক বছর মামলা ভাল চলেছি‌ল। আমাদের গরিব পরিবার। ছোটাছুটি করতে পারিনি। সাজাও হল না।’’ স্থানীয় এক যুবক জানান, ঘটনার সময় তাঁর বয়স ছিল ষোলো বছর। ওই সকালে তিনি বাড়ির সামনে দাঁত মাজছিলেন। হঠাৎ বোমার আওয়াজ! দেখেন, পাড়ার পুকুরের পাশে, রাস্তায় কয়েক জন দীপককে কোপাচ্ছে। বোমা ছুড়তে ছুড়তে দুষ্কৃতীরা পা‌লায়।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তেরা খালাস হওয়ার পরে পর্ষদের তরফে ওই পরিবারের লোকজনকে হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা রাজি হননি। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা বলেছিলেন, এক জনকে হারিয়েছেন। আর কাউকে হারাতে চান না।’’ ঘটনার পরে পর্ষদ ওই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করে।

ঘটনার সময়ে দীপকদের কাঁচাবাড়ি ছিল। এখন সরকারি প্রকল্পে ছোট পাকা বাড়ি হয়েছে। দীপকের বাবা বলরামবাবু মারা গিয়েছেন। পরিবারের লোকেরা জানান, ঘটনার পরে পুলিশ, সরকারি কর্তারা ঘন ঘন আসতেন‌। এক সময় আসা বন্ধ হয়। সরকার আশ্বাস দিলেও সে ভাবে সাহায্য মেলেনি। শুভঙ্করের কথায়, ‘‘বাজি পোড়ানো নিয়ে এ বার সুপ্রিম কোর্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এর বাইরে একটা শব্দবাজিও যেন না-ফাটে, এটাও প্রশাসনের দেখা উচিত। শব্দবাজির জন্যই তো কাকার প্রাণ গিয়েছিল। এমনটা যাতে আর কারও সঙ্গে না-হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন