Mother Daughter Bond

পরিস্থিতির কাছে হার মানতে হয়েছিল মাকে, ২৬ বছর পর সেই জন্মদাত্রীর সামনে দাঁড়াবেন স্পেনের প্রিয়া

মা-কে খুঁজে পাওয়ার এই কাজটা যদিও সহজ ছিল না। প্রিয়ার প্রতিনিধি, মহারাষ্ট্রের সমাজকর্মী অঞ্জলি পওয়ার, তাঁর দোসর অরুণ ডোল মিলে গত প্রায় চার মাস ধরে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:০৯
Share:

বার্সেলোনায় নিজের পরিবারকে মায়ের খবর জানাচ্ছেন প্রিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ করে সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে ছেড়ে যাওয়া এক মায়ের সামনে ২৬ বছর পরে এসে দাঁড়াবে সেই কন্যা। শেষ এপ্রিলে সেই মুহূর্তের সাক্ষী থাকবে কলকাতার এক গলি। যেখানে হাতে হাত রেখে কথা বলে যাবে আগলহীন অশ্রু। এক জন বাঙালি, অন্য জন স্প্যানিশ।

Advertisement

এই তো সে দিন, মাঝ-জানুয়ারিতে আট হাজার কিলোমিটার উজিয়ে কলকাতায় এসে, শহরের অলি-গলি তন্ন তন্ন করে খুঁজে জন্মদাত্রীকে না-পেয়ে শহর ছেড়েছিলেন প্রিয়া। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শহরের মানচিত্র থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক গলিপথ থেকে খোঁজ মেলে এক মহিলার। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে মনে হয়েছিল, তিনিই বুঝি স্পেনের বার্সেলোনার মেয়ে প্রিয়া ইরেন ক্যাবালেরো লোপেজ়-এর জন্মদাত্রী মা।

কিন্তু, মনে হলেই তো হল না। নিশ্চিত হতে প্রিয়া ও ওই বাঙালি মহিলার ডিএনএ পাঠানো হয়েছিল আমেরিকার ল্যাবরেটরিতে। দু’জনের ডিএনএ নমুনা মিলে যাওয়ার খবর এসেছে এই রবিবার। তারপর থেকে অন্য এক খাতে বইতে শুরু করেছে প্রিয়ার জীবন। মোবাইলে প্রথম খবরটা পেয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন। এত বছর ধরে তাঁর লালন করা স্বপ্নের সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন, ভাবতেই ছটফটিয়ে উঠছেন।

Advertisement

সোমবার বার্সেলোনা থেকে ফোনে প্রিয়া বলেন, “কত লোকে বলেছিল, আমি কোনও দিনই মাকে খুঁজে পাব না। অনেকে বলেছিল, আমার জন্মদাত্রী আর আমাকে কোনও দিন দেখতে চাইবেন না। কিন্তু, আমি বিশ্বাস হারাইনি। তিল তিল করে অপেক্ষা করে গিয়েছি এই দিনটার জন্য। আমি আজ কত যে খুশি তা ভাষায় বোঝাতে পারব না।’’

বার্সেলোনায় ইতিমধ্যেই নিকটাত্মীয়দের ডিনারে ডেকে জনে জনে বলেছেন, ‘‘জানো! আমি আমার মা-কে খুঁজে পেয়েছি। দেখা করতে কলকাতায় যাচ্ছি।’’ আর তাঁর অপেক্ষায় বসে থাকা নিম্নবিত্ত পরিবারের হেঁসেল ঠেলা মা-য়ের কথায়, ‘‘ও খুশি থাকুক। সুস্থ থাকুক। ২৬টা বছর তো কম সময় নয়।’’

মা-কে খুঁজে পাওয়ার এই কাজটা যদিও সহজ ছিল না। প্রিয়ার প্রতিনিধি, মহারাষ্ট্রের সমাজকর্মী অঞ্জলি পওয়ার, তাঁর দোসর অরুণ ডোল মিলে গত প্রায় চার মাস ধরে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এ দিন অঞ্জলি বলেন, “ডিএনএ-র নমুনা পাঠিয়ে আমরা উৎকণ্ঠায় ছিলাম। প্রিয়া ২৪ এপ্রিল নাগাদ আসবে বলেছে। ওর সঙ্গে ওর পালক বাবা-মা জেভিয়ার ও কারমেনও আসবেন। আমরাও ওই সময়ে আপনাদের শহরে আসছি।’’

ভারত থেকে সন্তান দত্তক নিয়ে বিদেশে চলে যান অনেকেই। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বড় হয়ে এক বার ফিরে আসতে চান ভারতে। দেখা করতে চান জন্মদাত্রীর সঙ্গে। সেই কাজে ২০০৬ থেকে তাঁদের সাহায্য করছেন অঞ্জলি-অরুণ। অঞ্জলির কথায়, “এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮০টি ক্ষেত্রে এ ভাবে দত্তক সন্তান খুঁজে পেয়েছেন তাঁর জন্মদাত্রীকে।’’

২৬ বছর আগে এ শহর থেকে সদ্যোজাত প্রিয়াকে দত্তক নিয়ে বার্সেলোনায় চলে যান জ়েভিয়ার ও কারমেন। পরে ছোটবেলাতেই কন্যাকে সে কথা জানিয়ে দেন তাঁরা। জ়েভিয়ার ও কারমেন সে কথা তাঁকে ছোটবেলাতেই জানিয়ে দেন। প্রিয়া জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজ শুরু করেন বছর দশেক আগে। বছর কয়েক আগেও এক বার শহরে এসে বিফল হয়ে ফিরতি উড়ান ধরেছেন তিনি।

এ বার স্বপ্নের উড়ান ধরে সেই শহরে ফিরছেন প্রিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন