saraswati puja

সাহবাজের কাঁধেই স্কুলের সরস্বতীর ভার

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১০
Share:

পুজোর আয়োজনে সাহবাজ রাজা (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বয়স এখনও ১৮ ছোঁয়নি। তবে নমাজ পড়ার অভ্যাসটা তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে তৈরি হয়ে গিয়েছে মন। যে মন ছুঁয়ে যায় সরস্বতীর সাবেক সাজ, যে মনে ছায়া ফেলে না ভেদাভেদ।

Advertisement

মহম্মদ সাহবাজ রাজা। ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। এ বার স্কুলের সরস্বতী পুজো পরিচালনার পড়ুয়া-কমিটির সম্পাদক সাহবাজই। পুজো আয়োজনের ঝক্কি সামলানোর ফাঁকেই জঙ্গলমহলের এই তরুণ বলছে, ‘‘নমাজ পড়া, আল্লাকে ডাকার সঙ্গে মা সরস্বতীর পুজোর তো কোনও বিরোধ নেই। সবই এক ঈশ্বরের রূপ। আর সব আরাধনাই তো মানুষের জন্য।’’ লোধাশুলি গ্রামের বাসিন্দা সাহবাজ পঞ্চম শ্রেণি থেকে এই স্কুলের পড়ুয়া। এখান থেকেই মাধ্যমিক পাশ করেছে। এখন পড়ছে বিজ্ঞান শাখায়। সাহবাজের প্রিয় বন্ধু দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ছাত্র প্রীতম ষড়ঙ্গী বলছিল, ‘‘সাহবাজের কাছেই আমরা শিখেছি মানবধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম।’’ প্রীতমের ঠাকুরদা ও বাবা চিল্কিগড় কনকদুর্গা মন্দিরের পূজারি। ধর্মের বেড়াজালে আটকে নেই সাহবাজ, প্রীতমের বন্ধুত্ব। তারা ছাড়াও সহপাঠী অন্তরীক্ষ পাত্র, অনীক নাগ, নির্ভীক মল্লিক, অনিকেত ঘোষ, সৌম্যজিৎ মুখোপাধ্যায়, সৌম্যজিৎ শিটের মতো দ্বাদশ শ্রেণির জনা ১৪ পড়ুয়ার ঘাড়ে এ বার স্কুলের সরস্বতী পুজো আয়োজনের দায়িত্বে।

সাহবাজের কাছে এই দায়িত্ব অবশ্য নতুন নয়। বিগত বছরগুলিতেও পুজোর খাবার পরিবেশন থেকে নানা খুঁটিনাটি দায়িত্ব পালন করেছে সে। সময় পেলেই কবিতা লেখে। নেতাজির অন্তর্ধান, নারীনিগ্রহ ও শাশ্বত প্রেম বিষয়ক তার তিনটি কবিতা আবৃত্তি করেছে প্রীতম। সেগুলির ভিডিয়ো ইউটিউবে প্রশংসিত হয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন মান্না মানছেন, ‘‘সাহবাজ অত্যন্ত মেধাবী ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন। সেই কারণেই ওকে পুজোর আয়োজন কমিটির সম্পাদক করা হয়েছে।’’

Advertisement

আগামী জুনে সাহবাজ, প্রীতমদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। পড়াশোনার মাঝেও পুজোর আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখছে না সাহবাজরা। স্কুলের মূল ভবনের বারান্দায় থার্মোকল কেটে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। পুজোর আগের দিন রঙিন কাগজের শিকলি সাজানোর ফাঁকে সাহবাজ, প্রীতম, অনীকরা বলছিল, ‘‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে এই দিনটা শুধু আনন্দের নয়, দায়িত্ব নিতে শেখারও দিন।’’ সাহবাজের বাবা পেশায় ব্যবসায়ী মহম্মদ আসলম আনসারি বলছিলেন, ‘‘স্কুলের দায়িত্ব পালন প্রত্যেক পড়ুয়ার কর্তব্য। আমার বিশ্বাস ছেলে তার দায়িত্ব যথাযথ ভাবেই পালন করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন