police

বাচ্চাদের পড়াতে চেয়ে প্রোমোশন নেননি পুলক

গত ছ’বছর ধরে প্রতিদিন সকাল ছ’টা থেকে ন’টা পর্যন্ত গ্রামের খুদে পড়ুয়াদের এখানেই পড়ান পুলিশকর্মী পুলক সাহা। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে।

Advertisement

নির্মাল্য প্রামাণিক

বাগদা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৩৩
Share:

পুলিশ ক্যাম্পে পড়াচ্ছেন পুলক। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ-ক্যাম্পের সিঁড়ির উপরে রাখা সাদা বোর্ড। তাতে নীল রঙের মার্কারে আঁকা হয়েছে কাপ, আপেল, ফুল। পাশে ইংরেজিতে সে সবের নাম লেখা। পিছনে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে রাখা সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের ছবি। সামনে মাস্ক পরে নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে বসে একমনে ক্লাস করছে খুদে পড়ুয়ারা। সাদা বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে ক্লাস নিচ্ছেন এক পুলিশকর্মী।
বাগদার গাদপুকুরিয়া পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্যের। ‘পুলিশ কাকুদের’ দেখে ভয় পায় না এখানকার ছোট ছেলেমেয়ের দল। বরং তারা জানে, পুলিশ ক্যাম্পে তাদের ক্লাস নেবেন এই কাকুরাই।

Advertisement

গত ছ’বছর ধরে প্রতিদিন সকাল ছ’টা থেকে ন’টা পর্যন্ত গ্রামের খুদে পড়ুয়াদের এখানেই পড়ান পুলিশকর্মী পুলক সাহা। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে। ২০০৪ সালে চাকরি পেয়ে প্রথমে জঙ্গলমহলে ছিলেন। সেখানে এক অফিসারের উৎসাহে স্থানীয় আদিবাসীদের পড়ানো শুরু করেন। ২০১৩ সালে বদলি হয়ে বাগদার গাদপুকুরিয়া গ্রামে আসেন। পরের বছর থেকে গ্রামের শিশুদের পড়াতে শুরু করেন। প্রথম বছর মাত্র চারজনকে নিয়ে ক্লাস শুরু করলেও এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৫ ছুঁয়েছে। করোনা আবহে লকডাউনের জন্য কিছু দিন ক্লাস বন্ধ রাখলেও আনলকডাউন পর্বের শুরু থেকে ফের শুরু হয়েছে ক্লাস। পুলক বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া খুব জরুরি। তাতে সামাজিক অপরাধ কমবে। বাড়ির ছেলেমেয়েকে ঠিক মতো তালিম দিতে পারলে পারিবারিক হিংসাও অনেকটা রুখে দেওয়া যায়।’’

পড়ানোর জন্য টাকা নেন না পুলক। কনস্টেবল পদে কর্মরত পুলক বলেন, ‘‘পয়সা খরচ করে মাস্টার রেখে বাচ্চাদের পড়ানোর ক্ষমতা গ্রামের গরিব মানুষের নেই। পড়াতে আমার খুব ভাল লাগে। তাই পড়াই। প্রমোশন নিয়ে বদলি হয়ে গেলে ওদের পড়াতে পারব না বলে প্রমোশনও নিইনি।’’ পুলক স্যারের কাছে পড়তে পেরে খুশি পড়ুয়ারাও। সপ্তম শ্রেণির সোহিনী মজুমদার, সঞ্চিতা বিশ্বাস, পঞ্চম শ্রেণির ঈশান বিশ্বাস, শুভজিৎ সমাদ্দাররা বলে, ‘‘স্যারের কাছে পড়ে আমাদের খুব উপকার হচ্ছে। উনি খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। সিলেবাসের বাইরেও অনেক কিছু শেখান।’’ বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দীপঙ্কর সমাদ্দারের কথায়, ‘‘স্যারের কাছে পড়েই মাধ্যমিক পাশ করেছি। এখনও এসে পড়া বুঝে যাই।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনার জেরে এক সপ্তাহ পুরো বন্ধ আইআইটি

পুলক স্যারের পড়ানোয় খুশি অভিভাবকেরাও। লোয়ার প্রাইমারির ছাত্র আর্য বিশ্বাসের মা রুম্পা বলেন, ‘‘উনি বিভিন্ন বিষয় খুব ভাল ভাবে বুঝিয়ে ছেলেমেয়েদের ভিতটা তৈরি করে দিচ্ছেন। সেই ভরসাতেই ছেলেকে ওঁর কাছে পড়তে পাঠিয়েছি।’’ পুলকের সঙ্গেই গ্রামের পড়ুয়াদের ছবি আঁকা শেখান তাঁর সহকর্মী ঈশ্বরচন্দ্র দে। তিনি বলেন, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, নাচ-গান করলে শিশুদের মানসিক বিকাশ ভাল হয়। গ্রামে আগে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হত না। আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও প্রভাতফেরি শুরু করেছি।’’ বাগদা থানার আধিকারিক সিদ্ধার্থশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশের কাজ সামলেও পুলক যে ভাবে ছোট ছোট শিশুদের গড়ে তুলছেন, সেটা প্রশংসার যোগ্য। আমাদের পুলিশ দফতর ওঁর জন্য গর্বিত।’’

আরও পড়ুন: এখনও করোনা-মুক্ত আদিবাসী গ্রামগুলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন