Sindoor Controversy

কলকাতা সফরে শাহের ‘সিঁদুর অভিযান’ ঠেকাতে রণাঙ্গনে তৃণমূলের তিন মহিলা, পাল্টা দুই মহিলাকে পাঠাল বিজেপি-ও

অমিত শাহের মন্তব্যের জবাব দিতে দলের তিন নেত্রীকে মাঠে নামিয়েছিল বাংলার শাসকদল। পরে তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দিতে একই পন্থা নিল বিজেপি-ও। তারাও আসরে নামাল দলের দুই নেত্রীকে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৫ ২২:০৯
Share:

(উপরে) বাঁ দিক থেকে তৃণমূলের সাগরিকা ঘোষ, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কাকলি ঘোষদস্তিদার। (নীচে) বাঁ দিকে অগ্নিমিত্রা পাল এবং ডান দিকে লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

নীলবাড়ির লড়াইয়ের আবহ তৈরি করছে লাল সিঁদুরের যুদ্ধ! তৃণমূল-বিজেপির তরজায় সিঁদুরই আপাতত ‘বড়’ অস্ত্র দুই তরফের। এতটাই যে, রবিবার অমিত শাহ কলকাতায় এসে ‘সিঁদুর অভিযান’ চালিয়ে যাওয়ার পর, দু’পক্ষের পাঁচ মহিলা নামলেন রণাঙ্গনে। ঘটনাচক্রে, তাঁদের চার জনের কপালে বা সিঁথিতে বিবাহের রক্তিমচিহ্ন জ্বলজ্বল করে সর্বদাই।

Advertisement

‘নীলবাড়ি’ নবান্ন দখলের জন্য বিধানসভা ভোট আগামী বছরেরই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নির্বাচন-প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন আগে থেকেই। গত বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বিজেপির ভোটের ডঙ্কা বাজিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার তিন দিনের মধ্যেই খাস কলকাতায় সভা করে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এসেছিলেন শাহ।

রবিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় সভায় শাহের নিশানা ছিল মমতার দিকেই। বলেন, ‘‘অপারেশন সিঁদুরে শতাধিক জঙ্গি খতম হয়েছে। কিন্তু দিদির পেটে ব্যথা হচ্ছে। দিদির হয়তো জঙ্গিদের জন্য কষ্ট হচ্ছে। দিদি অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করেননি, দেশের মহিলাদের ভাবনার সঙ্গে খেলা করেছেন। বাংলার মহিলাদের কাছে অনুরোধ, মমতাকে সিঁদুরের দাম বুঝিয়ে দিতে হবে, সিঁদুরের অপমানের ফল কী হয়, বুঝিয়ে দিতে হবে।’’

Advertisement

তাঁর ওই মন্তব্যের জবাব দিতে দলের তিন নেত্রীকে মাঠে নামিয়েছিল বাংলার শাসকদল। পরে তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দিতে একই পন্থা নিল বিজেপি-ও। তারাও আসরে নামাল দলের দুই নেত্রীকে।

দুপুরে শাহের বক্তৃতার জবাব দিতে বিকেলেই তৃণমূলের হয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। শাহের মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তাঁরা একযোগে বললেন, ‘‘সিঁদুর নিয়ে খেলবেন না!’’ চন্দ্রিমার কথায়, ‘‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজকে অবধি পাঁচটি রাষ্ট্রে ঘুরলেন, প্রতিনিধিদলে সামিল হলেন। দেশের কথা বললেন। এক কণ্ঠে এক সুরে কথা বললেন। তখন আপনি এখানে এসে অপরেশন সিঁদুর নিয়ে অপমানসূচক খেলা তৈরি করলেন।’’

তৃণমূলের সাংবাদিক বৈঠকের পর বিজেপি রণাঙ্গনে পাঠায় বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এবং প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের চন্দ্রিমা এবং কাকলির মতো এই দু’জনও গাঢ় করেই সিঁদুর পরে থাকেন। লকেট বলেন, ‘‘একদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশে গিয়ে পাকিস্তানকে ভাল মতো তুলোধোনা করছেন, অন্য দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঁদুর নিয়ে যে সব কথা বলছেন, সেটা তো যাত্রার থেকেও বেশি হয়ে যাচ্ছে। যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চাওয়ালা, পাহারাদার, সিঁদুর বিক্রেতা বলে অপমান করেছেন, একজন মহিলা হিসেবে লজ্জা লাগছে। তিনি নিজের চেয়ারের দামটা রাখতে পারতেন। সেটাও রাখলেন না।’’

মহিলাদের ‘অপমান’ নিয়ে বলতে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের অডিয়োকাণ্ডের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন অগ্নিমিত্রা। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা সিঁদুর পরে প্রেস মিট করতে বসলেন, তাঁরা কি ক্ষমা চেয়েছেন? পুলিশমন্ত্রীর পুলিশের মা-বউ সম্পর্কে অনুব্রত মণ্ডল যে কথা বলছে, তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন? আগে ক্ষমাটা চেয়ে তার পর প্রেস মিট শুরু করা উচিত ছিল।’’

নেতাজি ইন্ডোরে শাহের সভার আয়োজন করার অনুমতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিরোধীদের আদৌ এই অনুমতি দেওয়া হত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের চন্দ্রিমা। জবাবে অগ্নিমিত্রা বলেছেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যে যান। শূন্য পেয়ে ফেরেন বার বার। সে সব রাজ্যে সভা করার জন্য সেখানকার সরকার আপনাদের প্রেক্ষাগৃহ দেয় না? আপনাদের সভা করার জায়গা দেয় না? এত অগণতান্ত্রিক কেন আপনারা? কেন আপনাদের মনে হয় সব আপনাদের। আপনারা দয়া করলে তবে অন্যদের অধিকার, না হলে কারও অধিকার নেই, এমন ভাবেন কেন?’’

সব মিলিয়ে, শাহের কলকাতা সফরের দিনে বাংলায় দুই দলের পাঁচ মহিলাই সামলালেন যার যার রক্ষণ। বাণ শানালেন প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে। ঘটনাচক্রে, ভারতীয় সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করার পর, তাদের তরফে প্রতিদিনের অভিযান সম্পর্কে দেশকে জানাতেন দুই মহিলা সেনানি। কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement