নোবেল-আশ্বাসে উচ্ছ্বাস

আগেই সভা, তটস্থ পুলিশ

‘‘ওরে ঝট্পট্ তৈরি হ। দিদি রাঙাবিতান থেকে বেরিয়ে পড়েছেন’’— উপস্থিত পুলিশ কর্মীর সতর্কবাণী তখনও শেষ হয়নি। সকলে দেখতে পেলেন বৃষ্টিভেজা রাস্তা দিয়ে হুটার বাজিয়ে ছুটে আসছে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৬
Share:

দিদির ছোঁয়া। শান্তিনিকেতনে পাঠভবনের পড়ুয়াদের মাঝে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

চিত্র ১: ‘‘ওরে ঝট্পট্ তৈরি হ। দিদি রাঙাবিতান থেকে বেরিয়ে পড়েছেন’’— উপস্থিত পুলিশ কর্মীর সতর্কবাণী তখনও শেষ হয়নি। সকলে দেখতে পেলেন বৃষ্টিভেজা রাস্তা দিয়ে হুটার বাজিয়ে ছুটে আসছে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। তখন পাহারায় থাকা পুলিশ কর্মীদের কারও মাথায় টুপি নেই, তো কারও হাতের লাঠি পাশের বেড়ায় হেলান দিয়ে রাখা! নিমেষে ‘রেডি’ হলেন সকলে।

Advertisement

চিত্র ২: ফি বর্ষায় জলমগ্ন হয় এলাকা। আশপাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটা সাঁকোর আর্জি নিয়ে লাভপুরের বিলে গ্রাম থেকে সটান বোলপুর চলে এসেছিলেন সুখেন মণ্ডল। আসাই সার, হাতের চিঠি থেকে গেল হাতেই। নিরাপত্তার বেড়া ডিঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর পৌঁছতে পারেননি। শেষ বিকেলে বিফল মনোরথ হয়ে বাড়ির রাস্তা ধরলেন সুখেন।

বৃহস্পতিবার বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভা উপলক্ষে এমনই নানা দৃশ্যের জন্ম হল। এ দিন গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক সভা শুরুর কথা ছিল দুপুর দু’টো নাগাদ। কিন্তু, রাঙাবিতান থেকে বেরিয়ে পড়লেন আধ ঘণ্টা আগেই! ফলে নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে শুরু হয়ে যায় বৈঠকও। আপনারা তৈরি ছিলেন তো? জেলা প্রশাসনের এক কর্তার তাৎক্ষণিক জবাব, ‘‘রেডি না হয়ে উপায় আছে? সকাল থেকেই এক্কেবারে তৈরি।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর সভা উপলক্ষে এ দিন বোলপুরে ছিল বেনজির নিরাপত্তা। বোলপুর তো বটেই ময়ূরেশ্বর, লাভপুর, নানুর, সাঁইথিয়া ইলামবাজার থেকেও আনা হয়েছিল পুলিশ। সকাল থেকেই রাস্তায় ভিড় ছিল কম। চারদিকে শুধু পুলিশ আর পুলিশ। দেড়টার কিছু পরে প্রথম গেট দিয়ে ঢুকতে দেখা গেল, মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, লীলাবতী সাহাদের। প্রত্যেকের হাতে একটি করে ফাইল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তাতে রয়েছে কাজের হিসেব। তার মিনিট দশেকের মধ্যেই দিয়ে ঢোকে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়, জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলা সম্পাদক অভিজিৎ সিংহদের। গাড়ি থেকে নেমেই উপস্থিত সাংবাদিক, প্রশাসনিক আধিকারিক, বিধায়কদের খোঁজ খবর নেন। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী ঢুকে যান আলোচনা কক্ষে। তার আগেই সভাগৃহে উপস্থিত হয়েছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। তিনটে কুড়ি পর্যন্ত চলে বৈঠক। সভা শেষের পরে সাংবাদিকদের স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে জানান, জেলার সার্বিক উন্নয়নে তিনি খুশি। একই সঙ্গে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ একশো শতাংশ শেষ হয়েছে, এই দাবি করে তার প্রতীকী হিসেবে একটি বড় বাতি জ্বালান। তারপর যোগ দেন লিপিকায় কর্মসূচিতে।

মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি উপলক্ষে এ দিন জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে দুর্ভোগের ছবিও সামনে এসেছে। তেমনটা মানতে চাননি জেলার তৃণমূল নেতারা। একই দাবি পুলিশেরও। এ দিনের সভায় নিরাপত্তার কথা ভেবে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহ সংলগ্ন এলাকার চায়ের দোকান, খাবারের দোকান বন্ধ করে দেয় পুলিশ। চা দোকানীকে দূর থেকে চা কিনে এনে খেতেও দেখা গিয়েছে। আক্ষেপের সঙ্গে দোকানীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমরা সারা বছর চা বিক্রি করি। এ দিন সেই চা কিনে খেতে হল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন