মাধ্যমিকের আর ৫ মাস কী করে নম্বর বাড়বে ইতিহাসে

সাল-তারিখ নির্ভুল লিখতে হবে

না-বুঝে মুখস্থ না-করে ইতিহাসের পাতায় মানবসভ্যতার গৌরব, ঐতিহ্যের খোঁজ নাও। ইতিহাসকে ভালবেসে ফেলবে তুমিও।মাধ্যমিকে ইতিহাসের পরীক্ষা নিয়ে একটা মিশ্র মনোভাব কাজ করে। কেউ সাজেশন মিলবে কিনা তা নিয়ে আতঙ্কে থাকে আবার কেউ সাল-তারিখ ভুলে যাওয়ার চিন্তায় থাকে, খুব কম পরীক্ষার্থীই হাসিমুখে নিরুদ্বেগে পরীক্ষা দিতে যায়।

Advertisement

সানিকা মুণ্ডা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৫৯
Share:

মাধ্যমিকে ইতিহাসের পরীক্ষা নিয়ে একটা মিশ্র মনোভাব কাজ করে। কেউ সাজেশন মিলবে কিনা তা নিয়ে আতঙ্কে থাকে আবার কেউ সাল-তারিখ ভুলে যাওয়ার চিন্তায় থাকে, খুব কম পরীক্ষার্থীই হাসিমুখে নিরুদ্বেগে পরীক্ষা দিতে যায়। কিন্তু মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রের যা ধরন, তাতে পাঠ্যপুস্তক ভাল ভাবে পড়া থাকলে উদ্বেগের কোনও জায়গা থাকে না।

Advertisement

নম্বর বুঝে লেখো

Advertisement

মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে নম্বর বিন্যাসটা থাকে এই রকম— এক নম্বরের দশটি প্রশ্ন, দু’নম্বরের দশটি, চার নম্বরের পাঁচটি, ছয় নম্বরের পাঁচটি ও দশ নম্বরের একটি। একটানা লিখে না গিয়ে নম্বর বুঝে, নির্দেশ মতো লিখলে সময়ের সঙ্গে কাগজও বাঁচে।

এক নম্বরের উত্তর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই পূর্ণবাক্যে লিখে থাকে। কিন্তু প্রশ্নপত্রে একটি বা দু’টি শব্দে লেখার নির্দেশ থাকে। পূর্ণবাক্যে দশটি এক নম্বরের উত্তর লিখতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করাই ভাল। একটি বা দু’টি শব্দেই উত্তর দাও। যে সময়টা বাঁচবে, সেটা বড় প্রশ্নের জন্য ব্যয় করলে বেশি কাজে দেবে।

দু’নম্বরের উত্তর দুই বা তিনটি বাক্যে লেখার নির্দেশ থাকে। এক্ষেত্রে যেমন চেয়েছে, তেমনই লিখো। কিন্তু কিছু কিছু প্রশ্ন ১+১ থাকে। এগুলি আলাদা বাক্যে তো বটেই, দু’টি পৃথক লাইনে লেখা উচিত। যেমন, ফরওয়ার্ড ব্লক দলটি কে-কবে গঠন করেন? ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই দু’টি প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে লিখে থাকে। যেমন, সুভাষচন্দ্র বসু, ১৯৩৯। এটা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে লেখা উচিত, ফরওয়ার্ড ব্লক দলটি সুভাষচন্দ্র বসু গঠন করেন। ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে ফরওয়ার্ড ব্লক দলটি গঠিত হয়।

চার নম্বরের উত্তর সাত-আটটি বাক্যে লেখার নির্দেশ থাকে। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই এ ক্ষেত্রে ঢালা নোটস লিখে ফেলে। কিন্তু এই ভাবে না লিখে প্রথমে ছোট্ট ভূমিকা দিয়ে লেখা শুরু করা দরকার। এর পর বিষয়টিকে কয়েকটি পয়েন্ট বা সাব-পয়েন্টে ভাগ করে নিয়ে লিখলে ভাল। শেষে অবশ্যই একটি উপসংহার দিতে হবে।

ছয় নম্বরের প্রশ্নগুলি আংশিক প্রশ্ন। এতে দু’টি বা তিনটি অংশ থাকে। যেমন ২+২+২, ২+৪, ৩+৩, ১+১+৪, ১+৫ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে প্রতিটি অংশের উত্তর লেখার জন্য নির্দিষ্ট চিহ্ন ব্যবহার করলে ভাল হয়। যেমন—

এই চিহ্নটি দিয়ে প্রশ্নের প্রথম অংশের উত্তর লেখো।

একই চিহ্ন দু’টি দিয়ে প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের উত্তর লেখো।

একই চিহ্ন তিনটি দিয়ে প্রশ্নের তৃতীয় অংশের উত্তর। এই ভাবে চিহ্ন দিয়ে লিখলে প্রশ্নের যে তিনটি আলাদা আলাদা অংশ তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়।

৬ নম্বরের প্রশ্নে বেশিরভাগ অংশগুলি যুক্তিমূলক উত্তরের জন্য থাকে। এ ক্ষেত্রে বিযয়টি সম্বন্ধে
সঠিক ধারণা না থাকলে গুছিয়ে লেখা সম্ভব হয় না। আর একটা জিনিসও মাথায় রাখা উচিত। সেটি হল যত বেশি ভাগে নম্বর ভাগ করা থাকবে প্রশ্নে, তত ভাল। এক নম্বরের প্রশ্নে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যত সহজ, তিন নম্বরের প্রশ্নে ততটা নয়।

রইল পড়ে দশ নম্বরের প্রশ্নোত্তর। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা, পয়েন্টে ভাগ করে মূল বিষয়বস্তু ও শেষে উপসংহার লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আর বেশি লিখতে বারণ করব না। কারণ এই একটাই প্রশ্নের একটু বিশদে উত্তর দিলে ভাল হয়।

নজর যেখানে

ইতিহাসে ভাল নম্বর পেতে হলে আলোচ্য বিষয়গুলি ছাড়াও আরও কয়েকটি দিকে যত্নবান হতে হবে—

বড় প্রশ্নের উত্তরে সাল, তারিখ নির্ভুল ভাবে লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষকের নজরে কোনও ভুল ধরা পড়লে বাকি উত্তরটা যতই ভাল লেখ না কেন, নম্বর কমে যাবে।

ঐতিহাসিকদের মতামত লেখার সময় অবিকৃত english quotation লিখতে হবে। ভুলভাল quote খুবই বিরক্তিকর। মনে না থাকলে লিখো না, সেটা তবুও মন্দের ভাল। এক ঐতিহাসিকের ঘাড়ে আর এক ঐতিহাসিকের বক্তব্য যেন কোনও ভাবেই না পড়ে। ঐতিহাসিকদের নামের বানান ও নাম-পদবি উল্লেখে যেন ভুল না হয়।

উত্তরে স্থানের নাম, বিশেষ ঘটনা বা বিশেষ ব্যক্তির নাম থাকলে সে ক্ষেত্রে কালো কালি দিয়ে তলায় দাগ দিয়ে দিতে পারো। এতে সহজে তা পরীক্ষকের নজরে পড়বে। এগুলোয় কোনও রকম ভুল বা বানান ভুল যেন না হয়।

খাতা সাজাও

ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল উপস্থাপনা বা presentation। খাতা সাজানোটা আর পাঁচটা বিষয়ের চেয়ে ইতিহাসে বেশি দরকার।—

প্রথমেই স্পষ্ট হাতের লেখা কাম্য। কাটাকুটি যতটা সম্ভব কম থাকে যেন। কোথাও কাটার দরকার পড়লে একটা দাগে কাটবে।

উত্তরপত্রে অবশ্যই মার্জিন থাকবে। বাঁ দিকের মার্জিনে প্রশ্ন নম্বর, প্রশ্নের ভাগসূচক চিহ্নগুলি থাকবে। ডান দিকে ও উপরে-নীচেও মার্জিনের জায়গা থাকলে ভাল।

পয়েন্ট-সাবপয়েন্টে ভাগ করে যখন উত্তর লিখবে, তখন দু’টোর মাঝে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রেখে দেবে। পয়েন্টগুলোর হেডিং কালো কালিতে ও বাকিটা নীল কালিতে লিখলে দেখতে ভাল লাগে।

এক নম্বর ও দু’নম্বরের প্রশ্নে প্রতিটি উত্তর শেষে দাগ টানার দরকার নেই। একেবারে দশটা উত্তর লেখা হয়ে গেলে একটা দাগ টেনে দিও। কিন্তু চার-ছয়-দশ নম্বরের ক্ষেত্রে এক-একটা প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ হয়ে গেলে একটা করে দাগ (ending line) টেনে দেওয়া ভাল। তা হলে দু’টো উত্তর কোনও ভাবে মিশে যাবে না বা কোনও উত্তর পরীক্ষকের নজর এড়িয়ে যাবে না।

সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লিখেছো কিনা, সেটা মিলিয়ে নেওয়ার জন্য পরীক্ষা শেষে হাতে একটু সময় থাকলে ভাল।

সবশেষে

টেস্ট পেপার ভাল করে অনুশীলন করলে বিভিন্ন প্রশ্ন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা হয়। প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর তৈরি করে প্রস্তুতি নেওয়া ভাল। কিন্তু সাজেশনের পিছনে বেশি সময় নষ্ট করা ঠিক নয় বা পাঠ্যপুস্তক না পড়ে শুধু কিছু প্রশ্নের সাজেশন করে তার উত্তর তৈরি করা ঠিক নয়।

মনে রেখো, ইতিহাসে ফাঁকি থাকলে ভবিষ্যতেও ফাঁকি রয়ে যাবে।

শিলিগুড়ি বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠের শিক্ষক ও পরী‌ক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন