Nandigram

চাপা ভয়ে কাঁটা হয়ে নন্দীগ্রাম

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী এলাকা নন্দীগ্রাম। এ বার সেখানে পঞ্চায়েতের ত্রি-স্তরেই বেশ কিছু আসন পেয়েছে বিজেপি। অভিযোগ, তার পরই দাপট বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের।

Advertisement

সৌমেন মণ্ডল

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ ০৬:৪৮
Share:

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

সন্ত্রাস চলছে— পঞ্চায়েত ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই এই অভিযোগ তুলে নন্দীগ্রাম নিয়ে সরব রাজ্যের শাসক দল। তাদের অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। নন্দীগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে অবশ্য মারধর, লুটপাটের প্রকাশ্য চিহ্ন তেমন নেই। তবে লোকজনের একাংশের কথায় টের পাওয়া যাচ্ছে চাপা ভয়।

Advertisement

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী এলাকা নন্দীগ্রাম। এ বার সেখানে পঞ্চায়েতের ত্রি-স্তরেই বেশ কিছু আসন পেয়েছে বিজেপি। অভিযোগ, তার পরই দাপট বেড়েছে গেরুয়া শিবিরের। সোনাচূড়ার পঞ্চায়েতের ২৬৭ নম্বর বুথে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সুমিতা দাসের নালিশ, ‘‘বিজেপিতে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমি যদিও দলত্যাগ করব না, কিন্তু একটা চাপা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘বাড়ির বাইরে কেউ বেরোতে পারছি না।’’ ওখানকার তৃণমূলের বুথ সভাপতি রতন দলুইয়ের ছেলে অঞ্জনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। রতনের দাবি, ‘‘পুলিশের সামনেই ছেলেটাকে মারল। পুলিশ কিছু করল না। তাই আর অভিযোগ করিনি।’’ রতন জানালেন, দিনে লুকিয়ে বাড়ি আসেন, আর রাতে অন্যত্র থাকেন। তবে নন্দীগ্রামের ভেকুটিয়া পঞ্চায়েতের মনুচকে সোমা জানা নামে যে সমর্থককে গাছে বেঁধে মারধরের অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল, স্থানীয়রা তা নস্যাৎ করে দিলেন। ওই বধূর শ্বশুর, প্রভাত জানারও দাবি, ‘‘বিষয়টি পুরোপুরি পারিবারিক। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’

বিরুলিয়া পঞ্চায়েত রঙ্কিনীপুরের তৃণমূল সমর্থক পরিবারের বধূ মানসী মাইতি হুমকির অভিযোগ করলেন। তাঁর স্বামী ঘরছাড়া। ১৮ বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকছেন মানসী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপির লোকরা রাতে দরজা-জানলায় ধাক্কা দিচ্ছে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বলছে। দিনের বেলায় এক দিন রাস্তায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মারধরও করেছে।’’ মানসীরও দাবি, ‘‘থানায় অভিযোগ করতে পারছি না, তা হলে আরও বড় কিছু ঘটাতে পারে ওরা। ভয়ে রয়েছি।’’

Advertisement

এই রঙ্কিনীপুরেই বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ‘ঘরছাড়া’ ১৪ জন কর্মীকে গ্রামে ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন দলের নেতা কুণাল ঘোষ, সৌমেন মহাপাত্র, মন্ত্রী শশী পাঁজা-রা। অরুণাভ জানা, অমিয় বেরারা অবশ্য বলছেন, ‘‘ঘরে ফিরেও স্বস্তি পাচ্ছি না। ওরা হুমকি দিচ্ছে। বলছে, কত দিন পুলিশ থাকবে দেখব! ৭০-৮০ জন দল বেঁধে ঘুরছে।’’ এঁদেরও অভিযোগ, পুলিশ পুরো নিষ্ক্রিয়। রঙ্কিনীপুরের চিত্ত মোড়, সোনাচূড়া বাজার, ভেকুটিয়ার মনুচক-সহ নন্দীগ্রামের ৭ জায়গায় অবশ্য পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ, দুই-ই থাকছে। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ১২টি অভিযোগ হয়েছে। বেশিরভাগই তৃণমূলের দায়ের করা। ৬ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। শনিবার নন্দীগ্রাম-১ বিডিও অফিসে শান্তি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তবে বিজেপির তরফে কেউ যাননি।

সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে নারাজ বিজেপি। দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পালের দাবি, ‘‘তৃণমূল হেরে গিয়ে মিথ্যা কথা বলছে। বিজেপি কর্মীদের বিজয় মিছিল করতে দেওয়া হয়নি। যারা এত দিন ভয় দেখিয়েছে, তারাই এখন ভয়ে বাড়ি ঢুকতে পারছে না আর ঘরছাড়া বলে নাটক করছে।’’ তৃণমূলের রাজ্যে সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলছেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরাই মারধর করছে। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন