( বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ঘিরে ‘বিতর্কের আবহে’ তাঁকে সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিল তৃণমূল। সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক রদবদলের তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলার শাসকদল। তাতে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী করা হয়েছে সাংসদ মহুয়াকে। চেয়ারপার্সন করা হয়েছে চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমানকে। দলের সিদ্ধান্ত জানার পর মহুয়া এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সংসদে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখন মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে সরাসরি কোনও বিবৃতি দেয়নি তৃণমূল। বরং মহুয়ার বিষয়টিকে তাঁর ‘নিজস্ব’ লড়াই হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছিল দলের তরফে। বিরোধীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন, মহুয়ার পাশে কেন দল দাঁড়াচ্ছে না? দেখা গেল, মুখে বলে পাশে দাঁড়ানোর বদলে মহুয়াকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিল তৃণমূল। যা সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে তৃণমূলের অন্দরের একটি অংশ। অনেকের মতে, এর মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হল যে, দল মহুয়ার পাশে রয়েছে। আবার অন্য একাংশের মতে, ‘শাস্তি’ স্বরূপ মহুয়াকে যদি আগামী লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে না-দেওয়া হয়, তখন তাঁকে সাংগঠনিক ভাবে কাজে লাগাবে দল। এই সিদ্ধান্ত তার বার্তাও হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূল সাংগঠনিক খোলনলচে বদল করে। সেই সময় থেকেই এক একটি প্রশাসনিক জেলাকে একাধিক সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করেছিল শাসকদল। তার আগে নদিয়া জেলার সভাপতি ছিলেন মহুয়া। কিন্তু নদিয়াকে ভেঙে যখন কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটের মধ্যে ভাগ করে তৃণমূল তখন আর মহুয়াকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। শুধু সাংসদ হিসাবেই ছিলেন তিনি।
তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন বিধায়ক কল্লোল খাঁ। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। দলের কাজেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন অনেক দিন ধরেই। কল্লোল নিজের ঘনিষ্ঠমহলে জেলা সভাপতি পদ ছাড়ার ব্যাপারেও ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন বলে খবর। সে দিক থেকে কৃষ্ণনগরে সভাপতি বদল এক প্রকার অবশ্যম্ভাবীই ছিল। দেখা গেল সেই পদে আনা হল মহুয়াকে।
প্রসঙ্গত, মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ নিয়ে অভিযোগের তদন্ত করেছে সংসদের এথিক্স কমিটি। তারা মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের সুপারিশ পাঠিয়েছে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন এ নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হবে। তার পর ঠিক হবে সাংসদ মহুয়ার ভবিষ্যৎ। তবে অনেকেই মনে করছেন, মহুয়াকে বর্তমান লোকসভা থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে। অনেকের অভিমত, এ হেন ‘রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে’ তৃণমূল সাংগঠনিক রদবদলের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করে দিল, দল মহুয়ার পাশে রয়েছে। আবার অনেকের মতে, মহুয়া যদি শেষমেশ ভোটে দাঁড়াতে না পারেন, তা হলে তাঁকে দলীয় প্রার্থীকে কৃষ্ণনগর জেতানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাঁকে সাংগঠনিক ভাবে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সেই কারণেও দল এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, কয়েক বছর ধরে এই ধরনের রদবদলের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যা চূড়ান্ত করেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের একটি বড় অংশের বক্তব্য, এই রদবদলে মহুয়ার দায়িত্বপ্রাপ্তির পরে এটা আরও স্পষ্ট যে, মমতা-অভিষেক মহুয়ার পাশেই রয়েছেন। যা মহুয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য ‘ইতিবাচক’ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, মহুয়া বরাবরই বলে এসেছেন, মমতা এবং অভিষেক তাঁর পাশেই রয়েছেন। সম্প্রতি মহুয়া-প্রশ্নে মুখ খুলেছিলেন অভিষেক। মহুয়াকে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া যে ভাবে দ্রুত এগিয়েছে, তার সমালোচনা করে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘উনি নিজেই নিজের লড়াই লড়ে নিতে পারবেন।’’