তোষণ নিয়ে সরব শাহ

কাজ সহজ করে দিচ্ছে তৃণমূলই

এ বার বাংলা! বঙ্গে এসে বাংলা ভাষায় পরিষ্কার করে নিজেদের লক্ষ্য জানিয়ে দিয়ে গেলেন অমিত শাহ!

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০০
Share:

ভক্ত: অমিত শাহের সঙ্গে নিজস্বী তুলছেন সমর্থক। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

এ বার বাংলা! বঙ্গে এসে বাংলা ভাষায় পরিষ্কার করে নিজেদের লক্ষ্য জানিয়ে দিয়ে গেলেন অমিত শাহ!

Advertisement

উত্তরপ্রদেশ-সহ চার রাজ্যে সাফল্যের পরে এখন বাংলাই বিজেপি-র খাস নজরে। রাজ্য সফরে এসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি এ বার বুঝিয়ে দিলেন, আগামী লোকসভা ভোটে পূর্ব ভারতের উপরে বিশেষ ভরসা করছেন তাঁরা। এবং হাসতে হাসতেই অমিত জানাচ্ছেন, সেই লক্ষ্য হাসিলে তৃণমূলের উপরেও তাঁদের ভরসা বিরাট!

অমিতের ব্যাখ্যা, দুর্নীতির দায়ে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়ানোয় রাজ্যের শাসক দল সম্পর্কে মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মীয় তোষণ নীতি সংখ্যাগুরু মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। বিজেপি সভাপতির কথায়, ‘‘আমাদের নেতা-কর্মীরা বুথে বুথে মানুষের সঙ্গে সংযোগ করে সংগঠন বিস্তার করছেন। আমি নিজেও বুথে যাচ্ছি। কিন্তু তৃণমূল যা করছে, তাতে আমাদের কর্মীদের বেশি কিছু করতে হবে না! তারাই বিজেপি-কে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে!’’

Advertisement

তৃণমূলের কোন নীতির জন্য তাঁদের সুবিধা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও বুধবার দিয়েছেন অমিত। তাঁর সাফ কথা, ‘‘দুর্গাপুজোর বিসর্জনের জন্য আদালতের কাছ থেকে অনুমতি আনতে হবে? সরস্বতী পুজো করার অধিকারকে রক্ষা করতে পারবে না বাংলার সরকার? এ সব কী হচ্ছে?’’

বস্তুত, হিন্দুদের একটা অংশ এবং অন্য সম্প্রদায়ের মনেও যে তোষণ নিয়ে বিরূপ ধারণা বাসা বাঁধছে, সে সম্পর্কে সচেতন তৃণমূল। ক’দিন আগেই দলীয় কর্মীদের রবীন্দ্রনাথ থেকে বুদ্ধ জয়ন্তী পালনের পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। আর এ দিন বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা করেছে তাঁর সরকার।

আরও পড়ুন:গণতন্ত্র আর উন্নয়নই তাস অমিত শাহের

নরেন্দ্র মোদী সরকারের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুফল তাঁরা যে বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রচার করতে চান, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অমিত। তাঁর দাবি, কেন্দ্র উন্নয়নের জন্য যে খরচ এবং পরিশ্রম করছে, তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতার জন্য তার লাভ মানুষের কাছে যাচ্ছে না। পাশাপাশি ‘মমতাদিদির তুষ্টিকরণের রাজনীতি’ও তাঁদের তুরুপের তাস— বুঝিয়ে দিয়েছেন অমিত।

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এমন তত্ত্ব মানতে নারাজ। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা দেখলাম শিলিগুড়িতে আদিবাসী মহিলার বাড়িতে উনি (অমিত) খাবার খেলেন। আবার মুসলিম বস্তিতে গিয়ে সভা করলেন। কারা করছেন তোষণের রাজনীতি?’’ তৃণমূলের রাজনীতির দৌলতেই রাজ্যে বিজেপির উত্থান হচ্ছে, এমন অভিযোগে হামেশাই সরব বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। অমিত এ দিন নিজেই তা খোলসা করায় মুখ খুলেছে তারাও। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল কখনও মুসলিম তোষণ করছে। আবার যখন দেখছে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত লাগছে, তখন হিন্দুত্ব তোষণে চলে যাচ্ছে। ’’

বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও বলছেন, ‘‘অমিত শাহ ঘুরপথে সত্যি কথাটা বলে দিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী এ রাজ্যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ক্রমাগত ভেঙে বিজেপির হাত শক্ত করছেন।’’

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে রাজ্যে পয়লা নম্বর শক্তি হয়ে ওঠার ডাক দিয়েছেন অমিত। ভবানীপুরে কর্মিসভায় সেই লক্ষ্যে কর্মীদের ঝাঁপাতে নির্দেশ দিয়েছেন। যা শুনে পার্থবাবুর কটাক্ষ, ‘‘ওঁরা আগে রাজ্যে নিজেদের দু’টি আসন রক্ষা করুন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন