গা ছাড়া কেন, নেতাদের প্রশ্ন করলেন অভিষেক

গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপর্যয়ের পরে এই ব্লক যে কার্যত অভিভাবকহীন, সে কথাই ফুটে ওঠে নেতৃত্বের বক্তব্যে। তা ছাড়া এই ব্লক এলাকায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি যে দলের তরফে এই জেলার পর্যবেক্ষক অভিষেকের অজানা নয়, তা তাঁর প্রশ্নেই পরিষ্কার হয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

শুক্রবারের বৈঠকে। নিজস্ব চিত্র

দেড় বছরে এলাকায় ব্লক কমিটি দলের মাত্র দু’টি কর্মসূচি পালন করেছে। তার মধ্যে আবার একটির কর্মসূচি কী ছিল, দলের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে আর স্মরণ করতে পারলেন না ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। ২০১৬ সালে পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে দলের বিপর্যয়ের পরেও ওই ব্লকের এই হাল দেখে অসন্তুষ্ট অভিষেক। অথচ এই ব্লকেই দলের সংখ্যালঘু শাখার জেলা সভাপতি থেকে শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির বাস। তাই পুরুলিয়া ২ ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের সাংগঠনিক কর্মসূচিতে মোটেই খুশি হতে পারেননি দলের যুব সভাপতি।

Advertisement

শুক্রবার দিনভর চারটি বিধানসভা এলাকার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করার পরে সন্ধ্যায় পুরুলিয়া বিধানসভা এলাকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অভিষেক। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে আচমকা দলের শহর কমিটির নেতাদের গাছাড়া মনোভাবের প্রসঙ্গ টেনে এক নেতার কাছে তিনি জানতে চান, কেন শহরে দলের কর্মসূচি কম নেওয়া হচ্ছে? বিজেপির কর্মসূচি থাকলে তৃণমূলের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে না কেন? শহর এবং মফস্‌সল— দুই এলাকার নেতাদেরই পরিষ্কার ভাষায় অভিষেক বার্তা দেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করতে হবে। এবং নিয়মিত কর্মসূচিও নিতে হবে। বিরোধীদের পাল্টা কর্মসূচি নিতে দেরি করা চলবে না।

গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিপর্যয়ের পরে এই ব্লক যে কার্যত অভিভাবকহীন, সে কথাই ফুটে ওঠে নেতৃত্বের বক্তব্যে। তা ছাড়া এই ব্লক এলাকায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি যে দলের তরফে এই জেলার পর্যবেক্ষক অভিষেকের অজানা নয়, তা তাঁর প্রশ্নেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি জানতে চান, এই ব্লকে দুটো পার্টি অফিস কেন? নেতারা তাঁর প্রশ্নের সামনে আক্ষরিক অর্থেই অস্বস্তিতে পড়ে যান। সামলে নিয়ে ব্যাখ্যাও দেন। সব শুনে অভিষেক নির্দেশ দেন, এ বার থেকে ব্লকে একটি পার্টি অফিসই থাকবে। যেটি প্রথমে হয়েছিল, সেই অফিসেই কাজ চলবে।

Advertisement

পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খানের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ছবিকে কেন্দ্র করে তাঁর অসন্তোষের কথা বৈঠকের মাঝেই কড়া ভাষাতে জানান অভিষেক। জানা গিয়েছে, ছবিটিতে পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পুরপ্রধানের ছবি পোস্ট করা হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি কলকাতায় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর আয়োজিত কাউন্সিলরদের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে তোলা। অভিষেকের বক্তব্য ছিল, যে উঠতে বসতে দলনেত্রী ও তাঁর সমালোচনা করে, তাঁর সঙ্গে পুরপ্রধান ছবি তুলে পোস্ট করে ঠিক করেননি।

পুরুলিয়া কেন্দ্র থেকে প্রয়াত তৃণমূল নেতা কে পি সিংহ দেওয়ের ছেলে দিব্যজ্যোতি প্রসাদ সিংহ দেও-র কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চান অভিষেক। এরপরে দলের শহর সভাপতি বৈদ্যনাথ মণ্ডলের কাছে তিনি জানতে চান, রামনবমীর মিছিলে এত লোক হয়েছিল কী ভাবে? কারা সংগঠিত করেছিল সেই মিছিল? শহরে দলের কর্মসূচি কেন কম নেওয়া হচ্ছে? তাঁর নির্দেশ, প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় কর্মসূচি নিতে হবে।

একই সঙ্গে পুরুলিয়া বিধানসভা এলাকার কর্মীদেরও শুনিয়ে দিয়েছেন, দল ছেড়ে কেউ বেরিয়ে যেতে চাইলে, চলে যেতে পারেন। দলের শহর সভাপতি বৈদ্যনাথবাবু বলেন, ‘‘উনি যে রকম নির্দেশ দিয়েছেন, সে ভাবেই দল চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন