মন্তেশ্বরের জয়ী প্রার্থী সৈকত পাঁজার সঙ্গে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। — নিজস্ব চিত্র।
৭০৬ থেকে ১,২৭,১২৭।
ছ’মাস আগে-পরের মন্তেশ্বরে বিরোধীদের সঙ্গে এতটাই ভোটের ব্যবধান বাড়াল তৃণমূল। রেকর্ড ব্যবধানে জিতে তাদের হয়ে রাজ্যের চলতি বিধানসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হলেন ছাব্বিশ বছরের সৈকত পাঁজা। প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক সজল পাঁজার ছেলে সৈকত ভাঙলেন কেশপুরের বাম বিধায়ক নন্দরানি ডলের (১ লক্ষ ৮ হাজার) দীর্ঘদিনের রেকর্ড।
বাম জমানায় মেদিনীপুরের কেশপুর-গড়বেতা, হুগলির আরামবাগে ভোট-সন্ত্রাসে ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ’ হতো বলে অভিযোগ করত তৃণমূল। মন্তেশ্বর বিধানসভা উপ-নির্বাচনে এই ফলের পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঠিক একই অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। অভিযোগ
উড়িয়ে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রয়াত বিধায়ক সজলবাবু যে উন্নয়নের স্বপ্ন মন্তেশ্বরকে দেখিয়েছিলেন, এই জয় তার প্রমাণ। সেই সঙ্গে ‘ঠিকঠাক’ কাজ করেছে দলের সংগঠন। খোদ সৈকত বলেছেন, ‘‘আমাকে প্রার্থী বাছায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। বাবার কাজ শেষ করাই প্রথম কাজ। ’’
মঙ্গলবার ১২ রাউন্ডের গণনার প্রথম রাউন্ডেই ১১ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে যান তৃণমূল প্রার্থী। বেলা গড়ানোর সঙ্গে ব্যবধান বাড়তে থাকে। প্রদত্ত ১,৮৯,৮৭২ ভোটের মধ্যে তৃণমূল একাই পায় ১,৪৭,৩১৬ ভোট। সেখানে সিপিএম পেয়েছে ২০,১৮৯ ও কংগ্রেস পেয়েছে ২,৮৮৫ ভোট। বিজেপি গত বার ১৫,৪৫১ ভোট পেয়েছিল। এ বার সামান্য বেড়ে তা হয়েছে ১৬,০৭৩। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি— তিন বিরোধীরই জামানত জব্দ হয়েছে।
১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত হাতে থাকলেও ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে মন্তেশ্বর বিধানসভায় পিছিয়ে যায় সিপিএম। বিধানসভা ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও, ভোটের ফল বেরোনোর পরে সিপিএমের হাতে থাকা তিন পঞ্চায়েত— দেনুড়, জামনা, বাঘাসনের দখল নেয় তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, সবটারই কারিগর ছিলেন সজলবাবু। বিধায়ক হওয়ার চার মাসের মধ্যেই তাঁর মৃত্যুর পরে, দল প্রার্থী করে সৈকতকে। তবে শুধু সহানুভূতির ভরসায় বসে থাকা নয়, সাংগঠনিক ভাবেও গুছিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল এই উপ-নির্বাচনের। গত বিধানসভা ভোটে দলের একাংশ সজল পাঁজার বিরোধিতা করেছিলেন। নিজেদের দ্বন্দ্বে ভোটও কমেছিল। এ বার তাই গোড়াতে জেলার সাত বিধায়ক এবং ব্লক স্তরের নেতাদের মন্তেশ্বর ও মেমারির ১৭টি পঞ্চায়েতের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। বড় সভা করার বদলে এক বাড়িতে বার-বার যাওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছিল। আশা-কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, গ্রামীণ চিকিৎসক, প্রাণিবন্ধুদের প্রচারে নামানো হয়েছিল। প্রসূতি, রোগীদের মধ্যে তুঙ্গে তোলা হয়েছিল প্রচার। ভোট চাওয়ার সেই পন্থা খেটে গিয়েছে।
বিরোধীরা অবশ্য প্রচার-পর্বে ও ভোটের আগের রাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চরম সন্ত্রাস (হুমকি, মারধর) চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন। ১৯ নভেম্বর, ভোটের দিনও বুথ থেকে এজেন্টদের তুলে দেওয়া, মারধর, বাড়িতে ঢুকে ভোটার-কার্ড কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিবাদে কংগ্রেস প্রার্থী বুলবুল আহমেদ শেখ ওই দিনই প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের কথা জানান। গণনা বয়কট করে সিপিএমও। সিপিএমের মেমারি ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক অশেষ কোনারের কথায়, ‘‘তৃণমূলের ফলেই স্পষ্ট, কতটা সন্ত্রাস হয়েছে!’’
গায়ের জহর-কোট সবুজ আবিরে মাখামাখি। সৈকতের কাঁধে হাত রেখে হাসছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ। প্রচার-পর্বে দলের সব স্তরকে এক সুতোয় গাঁথার কাজটি করে যাওয়া মন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘বিরোধীদের যাঁরা এজেন্ট হতেন, তাঁরা এখন আমাদের দলে। সন্ত্রাসের অভিযোগের নামে নাটক তো এখন করতেই হবে!’’