অধীরের পুজোর পাশেই পাল্টা পুজো তৃণমূলের

সামনেই আসছে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রতিপত্তি বিস্তার করাটা তাই তৃণমূলের কাছে অপরিহার্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

অধীর চৌধুরীর নিজের গড়ে তাঁকে কোণঠাসা করার পর্ব প্রায় সমাপ্ত। নিজেদের প্রতিপত্তি জাহির করতে এ বার অধীরের দীর্ঘদিনের কালীপুজোর পাশেই আলাদা পুজো চালু করে দিল যুব তৃণমূল। হাইকোর্টে গিয়েও অধীর তা আটকাতে পারলেন না।

Advertisement

গত চার দশক ধরে বহরমপুরের জজ কোর্ট মোড়ে পুজো করে আসছে অধীরের ক্লাব ‘স্যান্টাফোকিয়া’। যুব তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার প্রশ্রয়ে তার কয়েকশো গজের মধ্যে রাজীব গাঁধী শিশু উদ্যানে নতুন কালীপুজোর তোড়জোড় করা হয়েছে। কিন্তু আগাম অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ওই পুজো করতে দেওয়া যাবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত মুর্শিদাবাদের জেলাশাসকের হাতে ছেড়েছিল হাইকোর্ট। দিনভর টানাপড়েনের পরে বুধবার রাতে তিনি অনুমতি দিয়েছেন।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসা ইস্তক টানা দলবদলের জেরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের নিজের জেলায় ক্রমশ হীনবল হয়েছে তাঁর দল। জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে বেশির ভাগ পুরসভা, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। যদিও, নেতারা চলে গেলেও সাধারণ ভোটার তাঁদের সঙ্গেই আছেন বলে এখনও দাবি করে চলেছেন অধীর। সামনেই আসছে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রতিপত্তি বিস্তার করাটা তাই তৃণমূলের কাছে অপরিহার্য।

Advertisement

বহরমপুরের মহকুমাশাসক বা পুলিশ কিন্তু যুব তৃণমূলের পুজোর জন্য অনুমোদন দেয়নি। তৃণমূলের পুরপ্রধান শুধু লিখিত ভাবে জানান, প্রশাসন অনুমতি দিলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। ঘটনাচক্রে, রাজীব গাঁধী শিশু উদ্যানের কাছেই একটি মসজিদ রয়েছে। এই পুজো নিয়ে আপত্তি তুলে জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, পুলিশ সুপার, পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়েছিলেন বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। কাজ না হওয়ায় মঙ্গলবার বিধায়কের হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দেন আইনজীবী ঋজু ঘোষাল। বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সি দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে জেলাশাসককে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দেন।

এ দিন দু’পক্ষকে নিয়ে শুনানি করেন জেলাশাসক। মহকুমাশাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও বহরমপুর থানার আইসি শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাসও সেখানে ছিলেন। মনোজ চক্রবর্তীর আইনজীবী তুষার মজুমদারের দাবি, ‘‘ওই পুজোর একশো গজের মধ্যে মসজিদ রয়েছে। এই কারণে ১৯৮৫ সালে রাজ্য সরকারের বলবৎ করা ধর্মীয় আইনের দু’টি ধারা উল্লেখ করে আমরা পুজোর অনুমোদন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম।’’

সেই দাবি অবশ্য শেষ পর্যন্ত গ্রাহ্য করেনি প্রশাসন। ঘটনাচক্রে, নতুন পুজো কমিটির সভাপতি জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বেনজির কামাল। জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, তাঁরা বর্ষীয়ান আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায়ের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন। তুষারের দাবি, ‘‘তৃণমূলের পুজোর পক্ষে হাইকোর্টে সওয়াল করেছেন তপনবাবুই। তাই তিনি ওই বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন না।’’ জেলাশাসক অনুমতি দেওয়ার পরে অধীর বলেন, ‘‘প্রশাসন হয়তো চায় না, বহরমপুরে শান্তি বজায় থাক।’’

সন্ধ্যায় নিজেদের পুজোর উদ্বোধন করেন অধীর। নতুন পুজোর উদ্বোধন করার কথা ছিল যুব তৃণমূল সভাপতি সৌমিক হোসেনের। কিন্তু
সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলাশাসক সিদ্ধান্ত না জানানোয় তা আর হয়ে ওঠেনি। রাত পর্যন্ত মূর্তিও আসেনি। রাতারাতি যে ছবিটা পাল্টে যাবে তাতে অবশ্য সন্দেহ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন