Prime Minister of India

মোদীর সভা ঘিরে ‘ছবি দেখানো’র টক্কর গেরুয়া-সবুজে

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও আর সে ভাবে কলকাতায় থাকতে পারছেন না। মোদীর সভার প্রস্তুতিতে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেই গত কয়েক দিন ধরে বেশি সময় কাটছে তাঁর। একই কাজে বৃহস্পতিবার যোগ দিয়েছেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ১৬:৩০
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এক কালে ছিল বামেদের স্লোগান, এখন হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের। ‘বাংলার মাটি, দুর্জয় ঘাঁটি’— বিজেপি-কে লক্ষ করে এই পংক্তি আজকাল যত্রতত্র ব্যবহার করছেন বিভিন্ন স্তরের তৃণমূল নেতা।

Advertisement

বিজেপির জন্য কতটা ‘দুর্জয়’ বাংলা, তা বোঝানোর জন্য সম্প্রতি নতুন এক কৌশলও বাজারে এসেছে— ‘ছবি দেখানো’। অমিত শাহকে ‘ছবি দেখানো’ হয়েছিল। এ বার নরেন্দ্র মোদীকেও ‘ছবি দেখানো’র তোড়জোড় শুরু হয়েছে জোরকদমে। মোকাবিলায় পাল্টা ‘ছবি’ ছাপছে বিজেপি। তবে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বলছেন, ছবিতে নয়, সংখ্যায় টক্কর দেওয়া হবে।

মেদিনীপুর শহরের কলেজিয়েট মাঠে আগামী ১৬ জুলাই, সোমবার জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কর্মসূচির পোশাকি নাম ‘কৃষক কল্যাণ সমাবেশ’। খরিফ শস্যের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদীর সরকার নিয়েছে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতেই এই সমাবেশ— বলছে বিজেপি। কিন্তু রাজনৈতিক শিবির বলছে, মেদিনীপুরে মোদীর এই জনসভা আসলে লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলায় গেরুয়া হাওয়া তোলার লক্ষ্যে আরও একটা বড় ধাপ।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির প্রায় গোটা নেতৃত্ব ঘাঁটি গেড়ে পড়ে রয়েছেন মেদিনীপুরে। সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সভার প্রস্তুতি চলছে। মঞ্চ কেমন হবে, মাঠে ছাউনি থাকবে কি না, কোথায় কোথায় ব্যারিকেড হবে, ক’টা গেট হবে, কত জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন, কাদের স্বেচ্ছাসেবক করা হবে, কর্মী-সমর্থকদের গাড়িগুলি কোথায় থাকবে— মেদিনীপুরে বসেই সে সব চূড়ান্ত করছেন রাজু। সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যস্তরের আরও অনেক নেতা।

আরও পড়ুন: চাষিদের সঙ্গে বেইমানি করেছে কংগ্রেস: মোদী

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও আর সে ভাবে কলকাতায় থাকতে পারছেন না। মোদীর সভার প্রস্তুতিতে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতেই গত কয়েক দিন ধরে বেশি সময় কাটছে তাঁর। একই কাজে বৃহস্পতিবার যোগ দিয়েছেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। কলকাতা থেকে এ দিনই তমলুক রওনা হয়ে গিয়েছেন তিনি। আশপাশের জেলাগুলিতে সভা এবং কর্মসূচি করবেন একটানা। ১৬ তারিখ কাটিয়ে কলকাতায় ফিরবেন।

পাল্টা প্রস্তুতি কিন্তু রয়েছে তৃণমূল শিবিরেও। ২১ জুলাই কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ স্মরণ সমাবেশ। তার আগে গোটা রাজ্যে প্রস্তুতি সভা করে বেড়াচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। সম্প্রতি মেদিনীপুরে সভা করে এসেছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। নরেন্দ্র মোদীর গোটা যাত্রাপথ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত, কাট-আউট, ফ্লেক্স, ব্যানারে মুড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে এসেছেন তিনি। তৃণমূল কর্মীরা এই কৌশলেরই নাম দিয়েছেন ‘ছবি দেখানো’।

আরও পড়ুন: জমি নীতি বদলের পথে রাজ্য, ইঙ্গিত মমতার

এর আগে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকেও এ ভাবেই ছবি দেখানো হয়েছে। গত মাসের শেষের দিকে বাংলা সফরে এসেছিলেন অমিত শাহ। সে সময়ে তিনি তারাপীঠের মন্দিরে পুজো দিতেও গিয়েছিলেন। বীরভূমে অমিত শাহের যাত্রাপথের দু’পাশ মুড়ে দেওয়া হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে। ছিল জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ছবিও। মেদিনীপুরের কলেজিয়েট মাঠে পৌঁছনোর জন্য মোদীর কনভয় যে পথ ধরবে, সেই পথও এ বার তৃণমূল মুড়ে রাখবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে।

তৃণমূলের এই কৌশলের কথা শুনে বিজেপি শুরুতে শুধু কটাক্ষ করেই থেমে যাচ্ছিল। কোনও না দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘মোদীজির নাম শুনলে তৃণমূলের শরীর খারাপ হয়ে যায়।’’ তবে মোদীর সভা যত কাছে আসছে, ততই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মেজাজে চলে আসছে বিজেপি। মমতার ছবির পাল্টা মোদীর কাট-আউটও তৈরি হচ্ছে, ইঙ্গিত দিচ্ছে বিজেপি।

রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পাল্টা ছবি দেখানোর ব্যবস্থাও হচ্ছে। ওরা কত ছবি লাগাবে লাগাক। আমরাও নরেন্দ্র মোদীর ছবি সম্বলিত কাট-আউট, ফ্লেক্স, ব্যানার তৈরি করছি। লাগানো শুরুও হয়ে গিয়েছে। খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুর তো বটেই, গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আমরা মুড়ে দেব। সময় হলেই দেখতে পাবেন।’’

তবে শুধু ছবিতে নয়, বিজেপি বলছে, টক্কর হবে সংখ্যাতেও। রাহুল সিংহের কথায় সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। কটাক্ষ দিয়ে শুরু করলেন রাহুল। বললেন, ‘‘অমিত শাহ এসেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তার দু’ধারে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন। এ বার মোদীজি আসছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এটাই ঘটতে চলেছে বাংলায়। বিজেপি নেতারা যেখানে যেখানে যাবেন, তৃণমূলের নেতানেত্রীরা সেখানেই হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকবেন।’’ এর পরে রাহুল সিংহ বললেন, তৃণমূলকে আসল জবাবটা দেওয়া হবে সংখ্যায়। বিজেপির জাতীয় সম্পাদকের কথায়, ‘‘ছবি দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু ১৬ তারিখের সভায় যে জমায়েতটা হবে, সেটা এক বার দেখে নেবেন। ওই বিপুল সংখ্যার কাছে সব ছবি-টবি ম্লান হয়ে যাবে। আমরা আসল জবাবটা সংখ্যাতেই দেব।’’

রাহুল সিংহের দাবি, পুরুলিয়ায় অমিত শাহের সভা উপলক্ষে যে জমায়েত হয়েছিল, তা ঐতিহাসিক হয়েছিল। পাল্টা সভায় তৃণমূল এক-তৃতীয়াংশ লোক জমাতে পারেনি বলে বিজেপির দাবি। রাহুল বললেন, ‘‘মোদীজির সভার পরেও নিশ্চয়ই একটা পাল্টা ওরা করবে। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, ছবি দেখিয়ে আদৌ কোনও লাভ হল কি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন