মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তিন দিনের সফরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিল তৃণমূলের এক প্রতিনিধিদল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেখানে গিয়ে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখেছিলেন প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা। এ বার সেই সফর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি রিপোর্ট জমা পড়তে চলেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী মঙ্গলবার তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন একটি রিপোর্ট জমা দেবেন দলনেত্রীর কাছে। ডেরেকের নেতৃত্বে কাশ্মীর গিয়েছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ নাদিমুল হক, মমতাবালা ঠাকুর, সাগরিকা ঘোষ এবং রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এর পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রত্যাঘাত করে ভারত। গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানে থাকা একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি। এমন প্রত্যাঘাতের পর সংঘর্ষবিরতি হয়েছে দু’পক্ষের সম্মতিতে। এমন পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের মানুষ কেমন রয়েছেন, তা জানতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠান মমতা।
সেই প্রতিনিধিদল তিন দিন কাশ্মীরে থেকে সেখানকার স্থানীয় জনতার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী, হাসপাতালে ভর্তি আহত এবং নিহতদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলে। কারণ, সংঘর্ষবিরতির আগে সীমান্ত থেকে পাকিস্তানি সেনার গুলিবর্ষণে সেখানকার ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসভবনেরও। কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা জানতে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং তাঁর পিতা বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা ফারুক আবদুল্লার সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা। সূত্রের খবর, এই সমস্ত বিষয় বিস্তারিত উল্লেখ করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রী কাছে। উল্লেখ্য, জঙ্গিহানা এবং ভারত-পাক সংঘর্ষের পর তৃণমূলই একমাত্র দল, যারা নিজেদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা জানার চেষ্টা করছে।
শনিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী নিজের সমাজমাধ্যমে কাশ্মীরের ওই প্রতিনিধিদলের প্রতি বার্তা দিয়ে লেখেন, ‘‘আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ আমাদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের প্রতি, যারা সম্প্রতি সীমান্তবর্তী জেলা পুঞ্চ ও রাজৌরী সফর করেছে— যে সব এলাকা সম্প্রতি সীমান্তপারের গোলাগুলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিনিধিরা শোকাহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তাঁদের দুঃখে শামিল হন এবং এই গভীর বেদনার সময়ে সান্ত্বনা ও সহানুভূতির বার্তা পৌঁছে দেন।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘প্রতিনিধিদলটি রাজৌরীর সরকারি মেডিক্যাল কলেজও পরিদর্শন করে, যেখানে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের সেবার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সঙ্কটের সময়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সহানুভূতির নিরাময়কারী স্পর্শ, এবং আমাদের প্রতিনিধিদল ঠিক সেই মানবিক স্পর্শটাই তুলে ধরেছে— এ জন্য আমি গভীর ভাবে কৃতজ্ঞ। এই উদ্যোগ আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতিকে আবারও নিশ্চিত করে। যে প্রতিশ্রুতি বলে, আমরা, জনপ্রতিনিধিরা, সব সময় মানুষের পাশে থাকব তাঁদের দুঃসময়ে।’’
ওই প্রতিনিধিদলে থাকা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা কাশ্মীর সফরে থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে আমাদের থেকে সব রকম আপডেট নিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেব। কারণ, অনেক এমন বিষয় রয়েছে, যেগুলির কথা নেত্রীকে বিস্তারিত জানানো দরকার।’’ তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কাশ্মীর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা বলেছেন। যদি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়, তবে সংসদে তৃণমূল নিজেদের সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরবে। সঙ্গে ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মুখ্যমন্ত্রীও সংসদীয় দলকে তাঁর প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন।