Raghunathpur

তাঁর নামেই এলাকার নাম, তেলেভাজার দোকানিকে সংবর্ধনা

বছরখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তাঁর পাড়ার কয়েক জন তেলেভাজা বেচে বহুতল বানিয়েছেন। এ বার পুজোতেও বেকারদের চা, চপ, ঘুগনি বিক্রির পরামর্শ দেন।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১৩
Share:

দোকানে চপ ভাজছেন ভোন্দু। ছবি: সঙ্গীত নাগ

জীবিত অবস্থাতেই তাঁর নামে এলাকার নামকরণ হয়েছে। শুধু লোক-মুখেই নয়, সরকারি নথিতেও পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের ওই এলাকা ‘ভোন্দুর মোড়’ নামে পরিচিত। ভোন্দু ওরফে দুর্গাদাস কর আদতে চা-তেলেভাজা বিক্রেতা। কর্মসংস্থানের দিশা দেখাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বারই চা-তেলেভাজা-ঘুগনি বিক্রি করার কথা বলেন। ঘটনাচক্রে ৭৬ বছরের ভোন্দুকে সম্প্রতি সংবর্ধনা জানানো হল রঘুনাথপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চে। প্রশ্ন উঠছে, তেলেভাজা বেচে নজির গড়ার বিষয়টিকে প্রচারে আনতেই কি তৃণমূলের এই উদ্যোগ?

Advertisement

বছরখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তাঁর পাড়ার কয়েক জন তেলেভাজা বেচে বহুতল বানিয়েছেন। এ বার পুজোতেও বেকারদের চা, চপ, ঘুগনি বিক্রির পরামর্শ দেন। বিরোধীরা সমালোচনায় সরব হয়। চপশিল্প নিয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর গবেষণাপত্রও শোরগোল ফেলেছে।

এই আবহে ভোন্দুর সংবর্ধনা নিয়ে রঘুনাথপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি তারকনাথ পরামানিকের কটাক্ষ, ‘‘নিঃসন্দেহে উনি শহরের জীবন্ত কিংবদন্তি। তবে তেলেভাজা দোকানি বলেই মনে হয় মুখ্যমন্ত্রীর মন পেতে তৃণমূল নেতারা তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছেন।” শহর তৃণমূল সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতার দাবি, ‘‘জীবিত কারও নামে এলাকার নামকরণ— এমন উদাহরণ আছে নাকি?”

Advertisement

প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, রঘুনাথপুর-বাঁকুড়া রাস্তার পাশে গাছগাছালিতে ভরা প্রায় জনবসতিহীন ওই এলাকায় এক সময়ে শুধু একটাই চালকল ছিল। ষাটের দশকে সেখানেই জমি ভাড়া নিয়ে চা-তেলেভাজার দোকান খোলেন ভোন্দু। চালকলের মজুর, শ্রমিক, কর্মীরা ছিলেন ক্রেতা। ক্রমে জনপ্রিয়তা বাড়ে। জায়গাটার নাম হয়ে ওঠে ‘ভোন্দুর মোড়’। স্থানীয় স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘ওঁর তেলেভাজার স্বাদ মুখে লেগে থাকে।’’

৬২ বছর দোকান চালানো ভোন্দু বলেন, ‘‘চা-তেলেভাজার দোকান করি বলে খেদ নেই। আমার নামে এলাকার নামকরণ হয়েছে শুনতে ভালই লাগে। সংবর্ধনা পেয়ে আরও ভাল লাগছে।’’ তিনিও বলছেন, ‘‘বেকার যুবকেরা বসে না থেকে চা-তেলেভাজার দোকান করে কিছু আয় করতে পারেন। কিন্তু বিরাট কিছু করা সম্ভব নয়।’’ তাঁর অভিজ্ঞতায়, ‘‘ভোর ৪টেয় দোকান খুলে একবেলায় কয়েকশো টাকার বেশি আয় হয় না।’’

পাঁচ ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। ভোন্দু বলছেন, ‘‘সব দোকানের আয়েই সম্ভব হয়েছে।’’ ঝুপড়ি দোকান পাকা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন