যাদবপুর নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে তীব্র টানাপড়েন তৃণমূলের

যাদবপুরে অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৩
Share:

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির পরে রাত পোহাতে আরও তীব্র হল রাজ্যপাল ও তৃণমূল টানাপড়েন।

Advertisement

যাদবপুরে অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার রাজভবন থেকে আর এক দফা বিবৃতি দিয়ে পার্থবাবুর বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলা হয়। এবং দাবি করা হয়, তৃণমূল সঠিক তথ্য দেয়নি। রাজভবনের দাবি, রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন আচার্য হিসেবে পড়ুয়াদের ‘অভিভাবকে’র দায়িত্ব পালন করতে। পাল্টা বিবৃতিতে পার্থবাবুও জানিয়ে দেন, তৃণমূল যা বলেছে, তা থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই। তৃণমূলের মতে, রাজ্যপাল সেখানে গিয়ে বিজেপি এবং এবিভিপির বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি যা দুর্ভাগ্যজনক। হামলা ও তাণ্ডবে যুক্তদের শাস্তি হবেই।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ধনখড় রাজ্যপাল হওয়ার পরে এক মাস না যেতেই এমন বিতর্ক নজিরবিহীন। ধনখড় যে ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কাছে ‘জবাবদিহি’ চাইছেন, প্রায় নিয়মিত কোনও না কোনও বিরোধী দলের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বক্তব্যকে ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছেন তার মধ্যে ‘অন্য রাজনীতির’ ছায়া দেখছে শাসক শিবির। বৃহস্পতিবার দুপুরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে ধনখড় সম্পর্কে ‘অনুযোগ’ জানান। সূত্রের খবর, শাহ রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন। এর কিছু ক্ষণ পরেই যাদবপুরে বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে বিক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ না মেনে সেখানে রাজ্যপালের যাওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা বলে বিবৃতি জটিলতা বাড়িয়ে দেয়। রাজ্যপাল বিজেপি-কে সাহায্য করতে যাদবপুরে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করে তৃণমূল।

Advertisement

তৃণমূল-বিজেপি দ্বৈরথ আরও বাড়িয়ে রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এ দিন বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মমতা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মানুষ এ বার এই দাবি তুলবে।’’

রাজভবনের শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়, উপাচার্য এবং সহ উপাচার্যর অনুপস্থিতিতে যখন বাবুল সুপ্রিয়কে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী ও কিছু লোক আটকে রেখেছিলেন, তখন রাজ্যপাল সেখানে যাওয়া জরুরি বলে মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পদের ‘সম্মানার্থে’ সেই কথোপকথনের কথা রাজ্যপাল প্রকাশ্যে আনেননি। আচার্য ও অভিভাবক হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের চিন্তাই তখন তাঁর অগ্রাধিকার ছিল বলে জানিয়েছে রাজভবন। জবাবে পার্থবাবুর বক্তব্য, প্রশাসন শান্তিপূর্ণ পথে আলোচনার মাধ্যমে গোটা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত সংস্থা। ঐতিহ্যমতোই সেখানে উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া পুলিশ ঢুকতে পারে না।

ধনখড়ের ‘ভূমিকা’ সম্পর্কে যাদবপুরের কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, ‘‘অভিভাবক না ভক্ষক? যত ক্ষণ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেননি তত ক্ষণ এবিভিপি সমর্থকেরা বাইরে ছিল। তিনি আসার পরেই ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব করল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন