শান্তি ফেরাতে আলোচনা শুরু শাসক দলে

ভাঙড়কে শান্ত করতে পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের কাজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা আগেই করেছিল সরকার। এ বার বিবদমান সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার দরজা খুলল শাসক দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৫
Share:

ভাঙড়কে শান্ত করতে পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের কাজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা আগেই করেছিল সরকার। এ বার বিবদমান সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার দরজা খুলল শাসক দল।

Advertisement

শনিবার দুপুরে কাইজার আহমেদ, নান্নু হোসেন-সহ ভাঙড়ে তৃণমূলের ছ’টি গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়। ভাঙড়ে একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা আরাবুল ইসলামের বিরোধী বলেই এঁরা পরিচিত। স্থানীয় এই নেতাদের সঙ্গে এলাকার কিছু গ্রামবাসীও এসেছিলেন বৈঠকে। তৃণমূল ভবনে ওই আলোচনার পর মুকুলবাবু দাবি করেন, ‘‘আশা করা হচ্ছে রবিবার থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ভাঙড়ের প্রবেশ বন্ধ করতে যেখানে যেখানে রাস্তা আটকানো হয়েছে সেগুলিও কাল (রবিবার) থেকে উঠে যাবে।’’ একই কথা বলেন কাইজাররাও। যদিও তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, এই এক বৈঠকেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে গেল, ব্যাপারটা সে রকম নয়।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ভাঙড়ে দলের পরস্পর বিরোধী বেশ কিছু গোষ্ঠী সক্রিয়। প্রতিটি গোষ্ঠীর নেতার সঙ্গে আলোচনা করে এখন তাঁদের নিরস্ত করতে চাইছেন মুকুল রায়রা। কাইজার-নান্নু হোসেনরা আরাবুলের বিরোধী। তাই আরাবুলকে এ দিন ডাকা হয়নি। আরাবুলের ছেলে হাকিবুল তৃণমূল ভবনের বাইরে ঘোরাঘুরি করলেও তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আরাবুলের সঙ্গে মুকুলরা যোগাযোগ রাখবেন না, বা কথা বলবেন না। কারণ, তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, এঁদের মধ্যে কোনও এক জনকে বিচ্ছিন্ন রাখলে ভবিষ্যতে তিনিই গোল পাকাতে পারেন।

Advertisement

তা ছাড়া, ভাঙড়ের আন্দোলনের রাশ এখন অনেকটাই তৃণমূলের হাতের বাইরে। ফলে শুধু স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে লাভ হবে না। এই অবস্থায় গ্রামবাসীদের থেকে বহিরাগতদের ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নিচ্ছে রাজ্য সরকার। সেই কৌশল কাজে দিলে বহিরাগত তথাকথিত উগ্র বামপন্থী কয়েকজন নেতাকে পুলিশ গ্রেফতারও করতে পারে। সেই ইঙ্গিত দিয়ে আবাসনমন্ত্রী তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা করে দেওয়ার পরেও বাইরের কিছু লোক এসে গ্রামবাসীদের ভুল বুঝিয়েছে। তাদের উস্কানিতেই সংঘর্ষ বেঁধেছে এবং দু’জন নিরীহ যুবকের প্রাণ গিয়েছে। একাধিক পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। বহিরাগতদের এই দায় নিতেই হবে।’’

তবে সরকার ও শাসক দলের তরফে ভাঙড়ে শান্তি ফেরানোর এই দ্বিমুখী প্রয়াস চালানো হলেও, এই ঘটনার রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পুরোদস্তুর মাঠে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। যেমন ভাঙড় আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে এ দিন কাশীপুর থানার বকডোবা থেকে শ্যামনগর মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তায় শান্তি মিছিল করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্য, ওমপ্রকাশ মিশ্ররা। এমনিতে ভাঙড়ে কংগ্রেসের বিন্দুমাত্র সাংগঠনিক শক্তি নেই। কিন্তু মিছিলে গ্রামবাসীদের একাংশ ভিড় করেন। পরে অধীরবাবু জানান, ভাঙড়ের ঘটনা নিয়ে সিবিআই বা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে মামলা করবে কংগ্রেস।

ভাঙড়ে যখন কংগ্রেস শান্তি মিছিল করেছে তখন কলকাতায় এ ব্যাপারে সরব ছিল সিপিএম। শুক্রবার বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখানো ও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনায় সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, অনাদি সাহু, মানব মুখোপাধ্যায়-সহ ১৩৫ জন সিপিএম নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সিপিএমের রাতভর নেতাদের লালবাজার সেন্ট্রাল লক আপে রাখার পর এ দিন তাঁদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। তার আগে এ দিন সকাল থেকেই আলিপুর আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম কর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের আরও একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি হয়। পরে অবশ্য বাম নেতাদের নিঃশর্তে মুক্তি দেয় আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন