তৃণমূলের দ্বন্দ্বে জোটে লাভের আশা

এক দিকে ঘোষণার দু’দিন পরেও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থামছে না তৃণমূলে। আর এক দিকে, প্রার্থী ঘোষণা না হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হচ্ছে ধরে নিয়ে দেওয়াল দখল শুরু করে দিয়েছে বামেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০২:১৭
Share:

প্রার্থী ঘোষণার আগেই দেওয়াল দখল। নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে ঘোষণার দু’দিন পরেও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থামছে না তৃণমূলে। আর এক দিকে, প্রার্থী ঘোষণা না হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হচ্ছে ধরে নিয়ে দেওয়াল দখল শুরু করে দিয়েছে বামেরা। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের নিজেদের গোলমালে আখেরে লাভ হবে জোটেরই।

Advertisement

সিপিএম সূত্রের খবর, শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে রবিবার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থী রদবদল করার জন্য সিপিএমের জেলা দফতরে দীর্ঘক্ষণ একান্তে বৈঠক করেন দলের প্রাক্তন সম্পাদক অমল হালদার ও বর্তমান সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। পরে তাঁদের দুই বন্ধুর এক জন তো বলেই ফেলেন, “তৃণমূল প্রার্থী তালিকা আগেভাগে ঘোষণা করায় আমাদের সুবিধাই হয়েছে। আর একবার প্রার্থী তালিকা ঝালিয়ে নিতে পারলাম আমরা।”

গত বিধানসভা নির্বাচনে ধস নেমেছিল একদা ‘লাল দুর্গ’ বর্ধমানে। কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, জামালপুর-সহ বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের বেশ কিছু গ্রামে পা ফেলতে পারেনি সিপিএম। যদিও অমলবাবুর দাবি, “এখন সে পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু জায়গা সেই পরিস্থিতি থাকলেও সামনের কয়েকটা দিনে তা কাটিয়ে উঠতে পারা যাবে বলে আশা করছি।” সিপিএম নেতাদের দাবি, তৃণমূলের অন্দরের ক্ষোভ-বিক্ষোভে লাভের গুড় খেয়ে যাবেন তাঁরাই। বিশেষত, ভাতার, জামালপুর, মন্তেশ্বর, বর্ধমান উত্তরের মতো এলাকায়। দলের কর্মীদের কাছে পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর নির্দেশও চলে গিয়েছে বলে নেতাদের একাংশের দাবি। জোটের আবহে জেলার ২৫টি আসনের মধ্যে আপাতত ১৬টিকে‘পাখির চোখ’ করে বিধানসভা নির্বাচনে এগোতে চাইছেন তাঁরা। সিপিএমের জেলা স্তরের এক নেতার দাবি, ‘‘আমরা জানি, এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্তিমিত হয়ে যাবে। বিক্ষুব্ধেরা আমাদের ভোটও দেবেন না। কিন্তু নির্বাচনের কাজে আন্তরিকতা না থাকলে বা বাহিনী নামাতে গড়িমসি করলে আখেরে আমাদেরই লাভ।’’

Advertisement

তবে আসন ভাগ নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় একটি ও শিল্পাঞ্চলের দু’টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি হয়েছে বামফ্রন্ট। তবে এখনও আলোচনা স্তরে বিষয়টি রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। নেতারা জানান, গত লোকসভা ভোটের ফলাফল খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে কাটোয়া, পূর্বস্থলী উত্তর, জামালপুর, খণ্ডঘোষ, মেমারি, বর্ধমান উত্তর, মন্তেশ্বর, ভাতার, গলসি, মঙ্গলকোট, আউশগ্রামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আবার শিল্পাঞ্চলের ক্ষেত্রে আসানসোল দক্ষিণ, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর পূর্ব, পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর পশ্চিম ও কুলটির আসনে জোর দিচ্ছেন বাম নেতারা। তাঁদের দাবি, বহু কাঙ্খিত কাটোয়া আসন নিয়েও তৃণমূল স্বস্তিতে নেই। লোকসভায় কাটোয়া বিধানসভায় সিপিএম ৬১,৪০৫টি ভোট পেয়েছিল। কংগ্রেস পায় ৪০,৩০৫টি ভোট। সেখানে তৃণমূল পেয়েছিল ৫২ হাজার ৮৩৫টি ভোট। যদিও পুরভোটে ২০টি আসনই জেতে তৃণমূল। গলসিতেও সিপিএম ও কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় ৭৯ হাজার ভোট, সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৭৩,৭৭৫টি ভোট। দুর্গাপুর পূর্বেও সিপিএম ও কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় ৭২ হাজার ভোট, আর তৃণমূলের ঘরে ঢুকেছে ৬৪ হাজার ৫৯৯টি ভোট।

আবার বেশ কয়েকটি আসনে তৃণমূলের জয়ের পিছনে রয়েছে বিজেপি ‘ফ্যাক্টর’ রয়েছে। সিপিএম ও তৃণমূল একবাক্যে মেনে নিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান পূর্বে ১৩ শতাংশ, বর্ধমান-দুর্গাপুরে ১৮ শতাংশ ও আসানসোলে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। অমলবাবু বলেন, “বিজেপির ভোটের একটা অংশ আমাদের পক্ষে এলেই বর্ধমান জেলায় আমরা চমকপদ ফল করব।” একই দাবি তৃণমূলেরও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “অন্য কোনও দলকে মানুষ ভোট দিতে যাবে কেন? মানুষ তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে ভোট দেবেন। প্রার্থীকে নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন