অধিকারী-গড়ে তৃণমূলে চিড়, নেতা বাম দলে

নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ন’বছর পার হচ্ছে আজ, সোমবার। তার ঠিক আগে রবিবার নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেই চিড় ধরল তৃণমূলে। দল ছাড়লেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন। রবিবার কলকাতায় গিয়ে বামফ্রন্টের শরিক ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট পার্টি’ (ডিএসপি)-তে যোগ দিয়েছেন তিনি। এগরা থেকে এ বার ভোটে বামপ্রার্থী হতে পারেন বলেও খবর।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল ও অমিত কর মহাপাত্র

তমলুক ও এগরা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

দলত্যাগী নেতা মামুদ হোসেন।— নিজস্ব চিত্র

নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ন’বছর পার হচ্ছে আজ, সোমবার। তার ঠিক আগে রবিবার নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেই চিড় ধরল তৃণমূলে। দল ছাড়লেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন। রবিবার কলকাতায় গিয়ে বামফ্রন্টের শরিক ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট পার্টি’ (ডিএসপি)-তে যোগ দিয়েছেন তিনি। এগরা থেকে এ বার ভোটে বামপ্রার্থী হতে পারেন বলেও খবর।

Advertisement

জেলা রাজনীতিতে অধিকারীদের বিরোধী বলেই পরিচিত ছিলেন মামুদ। সম্প্রতি কাঁথিতে এক সভায় অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে মুখও খোলেন সেই বিরোধের জেরেই যে দলত্যাগ, তা মামুদের কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, “তৃণমূলে গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে। জেলায় একচেটিয়া ‘অধিকারী রাজ’ চলায় স্বেচ্ছাচার ও অনৈতিক কাজকর্ম সীমা ছাড়িয়েছে। আমি মহাজোটের ডাকে সাড়া দিয়ে পরিবর্তনের পরিবর্তন চেয়ে লড়াইয়ে নেমেছি।” ডিএসপি-র রাজ্য সম্পাদক প্রবোধচন্দ্র সিংহের সঙ্গে পুরনো পরিচয়ের সূত্রেই তিনি এই বামদলে নাম লিখিয়েছেন বলেও দাবি মামুদের। তাঁর কথায়, ‘‘কাঁথি কলেজে পড়ার সময় থেকে শিক্ষক প্রবোধবাবুকে চিনি। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত না থাকলেও সান্নিধ্য পেয়েছি। তাই তৃণমূল ছেড়ে প্রবোধবাবুর দলে যোগ দিয়েছি।’’ আর প্রবোধবাবু বলছেন, “মামুদ হোসেন আমাদের দলীয় সদস্যপদ নিয়েছেন। দলের তরফে তাঁকে এগরা কেন্দ্রে প্রার্থী করতে চেয়ে বামফ্রন্টে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”

তবে এই দলবদলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। সাংসদ তথা এ বার নন্দীগ্রামের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর মতে, ‘‘এটা গুরুত্বহীন বিষয়। এ নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই।’’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর মন্তব্য, “দলে তাঁর গুরুত্ব ছিল না। তিনি চলে যাওয়াতে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না। বরং লাভই হবে।”

Advertisement

রাজ্যে পালাবদলের পরে বাম-শিবিরের অনেকেই তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। রেজ্জাক মোল্লার মতো অনেককে বিধানসভার লড়াইয়ে টিকিটও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ভোটের মুখে এখন উল্টো ছবিটাও দেখা যাচ্ছে। ক’দিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে সিপিএমে আসা রফিকুল ইসলাম এ বার বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে দলের প্রার্থী হয়েছেন। তবে ‘অধিকারীদের গড়’ পূর্ব মেদিনীপুরে এমন নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই। এত দিন জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু মুখ হিসেবে পরিচিত মামুদের দাবি, ‘‘তৃণমূল ছেড়ে কয়েকশো কর্মীও শীঘ্রই ডিএসপি-তে যাবেন। আমার স্ত্রী সইফুননাহার বেগমও পঞ্চায়েত প্রধানের পদ ছেড়ে ওই দলে যোগ দেবেন।’’ সব মিলিয়ে ভোটের মুখে মামুদের বাম-শিবিরে যোগদান শাসকদলকে ধাক্কা দেবে বলেই জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

কাঁথির দুরমুঠ-ফুলেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা মামুদ হোসেন বনমালিচট্টা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। রাজনৈতিক জীবনে বারবারই দলবদল করেছেন তিনি। আশির দশকের শেষে কংগ্রেস ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে ফের কংগ্রেসে ফিরে আসেন। তখন তিনি ছিলেন শিশির অধিকারীর ঘনিষ্ঠ। ১৯৯৯ সালে শিশিরবাবুর সঙ্গেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন মামুদ। ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদে প্রার্থী হয়ে হেরে যান। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পরে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য কাঁথি থেকে জেলা পরিষদ আসনে জেতেন তিনি। তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতিও হন মামুদবাবু । ২০১৩ সালে ফের জেলা পরিষদে জিতলেও তাঁকে তুলনায় কম গুরুত্বের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ পদ দেওয়া হয়। এরপর থেকে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব আরও বাড়ে। পরিবর্তে অধিকারীদের বিরোধী শিবিরের নেতা জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরির ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মামুদ।

জেলা তৃণমূলের একাংশের ধারণা, বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়েই দলবদলের সিদ্ধান্ত নিলেন মামুদ। সে ক্ষেত্রে তিনি যদি এগরায় বামপ্রার্থী হন, তবে দু’বারের তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাস কঠিন লড়াইয়ে পড়বেন বলে তৃণমূলে জল্পনা শুরু হয়েছে। বামেদেরও মত, সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশে ভাগ বসাবেন মামুদ। প্রশ্ন, মামুদকে গোঁড়া বামপন্থীরা ভোট দেবেন তো? সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির ব্যাখ্যা, “উনি একসময় সিপিএমে ছিলেন। ফলে, তাঁকে মানতে সমস্যা হবে না।” এগরার তৃণমূল প্রার্থী সমরেশবাবু অবশ্য জয় নিয়ে প্রত্যয়ী। তাঁর কথায়, “যিনিই প্রতিপক্ষ হোন, তৃণমূলের জয়ে প্রভাব পড়বে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন