জামিন পেয়ে গেলেন সেই উজ্জ্বল

গত মাসের ১৭ তারিখ তৃণমূলের বর্ধিত কর্মিসভায় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওই নেতাকে জামিন করিয়ে দেওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন জেলার ‘পাবলিক প্রসিকিউটার’ তথা দলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়কে।

Advertisement

নিজস্ব সংবদাদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

দলের জেলা সভাপতি বলার দু’সপ্তাহ পেরোতেই জামিন পেয়ে গেলেন খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল হক কাদেরি। উজ্জ্বল খয়রাশোলের তৃণমূল ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ খুনে অন্যতম অভিযুক্ত। মঙ্গলবার জেলা জজ শুভেন্দু সামন্ত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্তের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। খয়রাশোলে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত উজ্জ্বল নির্বাচনের আগে জামিন পাওয়ায় খুশি তাঁর অনুগামীরা। এ বার নির্বাচন মসৃণ ভাবে পার হবে বলে আশায় শাসকদলও। জেলা বিজেপির সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘এ জেলায় সব কিছুই যে শাসকদলের এক নেতার কথায় হয়, এই জামিনে তা ফের প্রমাণিত হল।’’

Advertisement

গত মাসের ১৭ তারিখ তৃণমূলের বর্ধিত কর্মিসভায় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ওই নেতাকে জামিন করিয়ে দেওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন জেলার ‘পাবলিক প্রসিকিউটার’ তথা দলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়কে। যদিও প্রকাশ্যে সেটা স্বীকার করেননি মলয়বাবু। এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য দলের যে নেতাকে অনুব্রত গ্রেফতার করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের মুখে সেই নেতাকেই জামিনে মুক্ত করিয়ে আনার পরামর্শ ঘিয়ে সে সময় কম বিতর্ক হয়নি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

গত বছরের ২১ অক্টোবর ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন সেরে মোটরবাইকে ফেরার সময় খয়রাশোল ঘেঁষা হিংলো নদীর বালির উপরেই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের সশস্ত্র হামলায় নিহত হন দীপক ঘোষ। প্রথম থেকেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে নেতা খুনের অভিযোগ বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপানো হলেও খয়রাশোলে বহু চর্চিত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঢেকে রাখা যায়নি। পরিবার ও নিহত নেতার অনুগামীদের বক্তব্য ছিল, ঘটনার পিছনে হাত রয়েছে সেই সময় ব্লক কার্যকরি সভাপতি থাকা দীপকবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা উজ্জ্বল হক কাদেরির দিকে।

বিজেপির অভিযোগ, পাছে দলের বদনাম হয়, তাই প্রথমে অভিযুক্তের তালিকা থেকে উজ্জ্বলের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। ঘটনার কয়েক মাস পরেও খুনের কিনারা না হওয়ায় সেই ক্ষোভ তীব্র হচ্ছিল। এলাকায় ধারাবাহিক অশান্তি শুরু হয়েছিল। দলের অন্দরের খবর, সবই ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের। এর পরেই নভেম্বর মাসে বোলপুরের এক বৈঠক থেকে উজ্জ্বলবাবুকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন অনুব্রত। তাঁকেই এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য মূল চক্রী হিসেবেও চিহ্নিত করেছিলেন জেলা সভাপতি। তবে প্রথম থেকেই নিজেকে নির্দোষ বলে এসেছেন উজ্জ্বল। তাঁর দাবি ছিল, এটা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সন্দেহের ফল।

কিন্তু, ভোটের মুখে দুটি গোষ্ঠীকেই ‘খুশি’ করার কাজ শুরু হয়ে যায় বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর। গত মাসের প্রথম দিকে খয়রাশোলের কর্মিসভা থেকে অনুব্রত একসঙ্গে চলার বার্তাও দিয়েছিলেন। পরামর্শ ছিল, নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নিন। তার পরেই সিউড়ির সভা থেকে দীপক খুনে গ্রেফতার হওয়া উজ্জ্বলকে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তার পরেও একটি নির্ধারিত দিনে সিউড়ি আদালত উজ্জ্বলের জামিন মঞ্জুর করেনি। আপত্তি এসেছিল সরকারি আইনজীবীর তরফেও।

দিন কয়েক আগে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা তথা খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য চণ্ডীচরণ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দাবি ছিল, সবই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাল বই অন্য কিছু নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে নির্বাচনী কর্মসূচি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। উজ্জ্বল গোষ্ঠীও জানিয়েছিল, জামিন না হলে নির্বাচনে যোগদান নয়। দিন কয়েক আগে জামিন হয় চণ্ডীচরণের। এ বার উজ্জ্বলের জামিন হওয়ায় ভোটের আগে সেই সঙ্কট কাটল। পরিস্থিতি সামলে ওঠার পরে এ দিন বিকেলেই খয়রাশোলে নির্বাচনী সভা করার প্রস্তুতি নিতে ছুটে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী।

সিউড়ি আদালতের আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, ‘‘এই মামলার সরকারি আইনজীবী তপন গোস্বামী ও পিপি দু’জন হাজির থাকলেও জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেননি।’’ জামিনের তীব্র বিরোধিতা যে হয়নি তা স্বীকার করে নিয়েছেন পিপি মলয় মুখোপাধ্যায়। কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মলয়বাবু বলছেন, ‘‘অভিযুক্তের নাম এফআইআর এ ছিল না। ৬৭ দিন জেলে থাকাও হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া এই মামলায় উচ্চ আদালত অনেককেই আগাম জামিন দিয়েছে। আদালতও এই তিনটি দিক বিবেচনা করেই জামিন দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন