Humayun kabir

তৃণমূল বহিষ্কার করলেই ‘মমতার পথে’ যাবেন! নতুন দল গঠনের হুমকি দিয়ে রাখলেন বিধায়ক হুমায়ুন

তাঁকে শো-কজ় প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘দলের স্বাধীনতা আছে যে কোনও কর্মীকে শো-কজ় করার। আর আমারও তা মোকাবিলা করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।’’

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

ভরতপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ১৫:২৯
Share:

হুমায়ুন কবীর। —ফাইল চিত্র।

দল তাঁকে শো-কজ় করেছে। তাতে এতটুকুও বিচলিত নন বলে দাবি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি জানালেন, এ বার আর অন্য কোনও দলে যোগদান নয়, বহিষ্কৃত হলে তিনি নতুন দল তৈরি করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তৃণমূল ছাড়ছি না। কিন্তু দল যদি আমায় বহিষ্কার করে, সিপিএম, কংগ্রেস বা আইএসএফে নয়, নতুন দল তৈরি করে বুঝিয়ে দেব যে, আমার সঙ্গে মানুষ আছে।’’

Advertisement

এই প্রসঙ্গে তিনি টানলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। শো-কজ়ের কথা শোনার পরেও মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছেন ‘বিদ্রোহী’ হুমায়ুন। যা শুনে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, এ নিয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব নেবেন। তাঁরা আর হুমায়ুন নিয়ে একটি কথাও বলবেন না।

ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে শো-কজ করছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। শনিবার সকালেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে তৃণমূল, এমন খবর প্রকাশ হয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইনে। তার ঠিক কিছু ক্ষণের মধ্যেই শো-কজ়ের চিঠি পাঠানো হয় হুমায়ুনকে। মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায় জানান, তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে হুমায়ুনকে শো-কজ় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিধানসভার অন্দরে নিজের বক্তৃতায় নাম না করলেও পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে হুমায়ুনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তিনি বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগরে আমাদের দলের এক জন আছেন, যিনি মাঝেমধ্যেই হুঙ্কার দেন। গুন্ডামি করেন। আমাদের দলে থাকলেও তাঁর কাজকর্মকে সমর্থন করি না।’’ তার পরেই হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বিধানসভায় শাসকদলের অন্দরে।

Advertisement

শনিবার দুপুরে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে হুমায়ুনের সঙ্গে। শো-কজ়ের কথা শোনামাত্র ঠান্ডা গলায় হুমায়ুন বলেন, ‘‘দলের স্বাধীনতা আছে যে কোনও কর্মীকে শো-কজ় করার। আর আমারও তা মোকাবিলা করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ন্যায়-নীতি, বিবেক বিক্রি করে মুখ্যমন্ত্রী কেন, কারও চাটুকারিতা করব না।’’ এই ফোনালাপ যখন হচ্ছে, তখন হুমায়ুন বহরমপুরে আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে শো-কজ়ের উত্তর দেব।’’ তিনি জানান, শো-কজ়ের চিঠি তাঁর ছেলে গোলাম আজাদ, যিনি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তিনি ‘রিসিভ’ করছেন। হুমায়ুনের কথায়, ‘‘কী প্রশ্ন হবে জানি। তাই উত্তরও আমার কম্পিউটারে সাজানো আছে। রেডি (তৈরি) করে পাঠিয়ে দেব।’’ শো-কজ় নিয়ে তিনি যে ‘চিন্তিত’ নন, সেটা বোঝাতে হুমায়ুন বলেন, ‘‘আগেও ছ’বছর অকারণে সাসপেন্ড করেছিল। তার পর আইপ্যাকের মাধ্যমে আমাকে ফিরিয়ে আনা হয়। মানুষ সঙ্গে ছিল বলেই দল আমার প্রয়োজন বোধ করেছে। আগামিদিনে দল সেটা আরও ভাল ভাবে বুঝবে।’’ উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মন্তব্যের জন্য সাসপেন্ড হন হুমায়ুন।

কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিজেপি ঘুরে তৃণমূলে ফেরা হুমায়ুন কেন নতুন দল তৈরির কথা ভাবছেন? ভরতপুরের বিধায়কের জবাব, ‘‘নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে বুঝিয়ে দেব মানুষ কাদের সঙ্গে আছে। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এক সময় কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন। তার পর তিনি যোগ্য সম্মান পাননি বলে মুকুল রায়কে নিয়ে তৃণমূল তৈরি করেছিলেন। এটা তো অন্যায় কিছু নয়।’’

পঞ্চায়েত ভোটে ‘হিংসা’ নিয়েও দলের সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে হুমায়ুনকে। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে এত হিংসা, মুর্শিদাবাদে এত মৃত্যু— বিধায়ক হিসাবে দুঃখ লাগে, লজ্জা হয়। দলের কোনও পদে যেহেতু আমি নেই, তাই বলারও কিছু নেই। আর আমায় বিধায়ক দল করেনি। মানুষ করেছে।’’

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বিধায়ক হুমায়ুন বিধানসভার কোন কোন পদে রয়েছেন, সেই বিষয়ে জানতে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ফোন করেছিলেন বিধানসভায় দলের উপ মুখ্যসচেতক তথা বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায়কে। বর্তমানে বিধানসভার দুটি স্থায়ী (স্ট্যান্ডিং) কমিটিতে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন। অন্য দিকে, শনিবার হুমায়ুনের এই বক্তব্যের পর জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘এ নিয়ে যা বলার, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজ্য নেতৃত্ব নেবেন। বিধায়ককে নিয়ে আমরা কোনও কথা বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন