ওপরওয়ালা চাইলে ডেঙ্গি হবে! দোহাই তৃণমূল বিধায়কের

রাজ্যে যে সব ব্লকে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব সব চেয়ে বেশি, উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৮
Share:

হাজি নুরুল ইসলাম

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হত্যে দিচ্ছেন রোগীরা। লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সরকারের দাবি, রোগ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। রাজ্যে এমন বিতর্ক যখন তুঙ্গে, সেই সময়েই ডেঙ্গির পিছনে ‘ওপরওয়ালার হাত’ খুঁজে পেলেন তৃণমূলের বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম। তাঁর সহজ কথা, ‘‘আমাদের হাতে নেই। এটা তো আল্লার হাতে। তিনি যদি চান তো হবে (ডেঙ্গি)! আল্লা এক অদৃশ্য শক্তি দিয়ে এ সব করছেন।’’

Advertisement

রাজ্যে যে সব ব্লকে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব সব চেয়ে বেশি, উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসার পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে না, এমন অভিযোগে মঙ্গলবারও হাহাকার শোনা গিয়েছে দেগঙ্গার গ্রামের পর গ্রামে। বিধায়ক-সহ শাসক দলের নেতাদের বিশেষ দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই সময়েই দেগঙ্গার বিধায়কের ওপরওয়ালার তত্ত্ব শুনে স্তম্ভিত নানা মহল!

আরও পড়ুন: এসআই মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত হোক, দাবি গুরুঙ্গের

Advertisement

নুরুল যে ভাবে দৈবের কথা টেনেছেন, তাতে অনেকের মনে পড়ে গিয়েছে সে কালের গ্রামবাংলার ছবি! যখন ওলাওঠায় গ্রাম কে গ্রাম উজাড় হয়ে যেত আর অসহায় মানুষ দেবতার থানে গিয়ে প্রার্থনা করতেন! যুব বিশ্বকাপের শহরে ক্রীড়ামোদী কেউ কেউ আবার তুলছেন দিয়েগো মারাদানোর কথা। তাঁদের মন্তব্য, মেক্সিকোয় সেই ১৯৮৬-র বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হাত দিয়ে গোলের বিতর্ক নিয়ে পরে ফুটবল তারকা যেমন ‘ঈশ্বরের হাতে’র কথা বলেছিলেন, এটাও যেন অনেকটা তেমন!

তৃণমূল বিধায়ক ডেঙ্গি ঘটানোর দায় ওপরওয়ালার কাঁধে দিলেও দৈব বিষয়ের মোকাবিলায় ‘মা-মাটি-মানুষে’র সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসাই করেছেন। ডেঙ্গির সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন শুনে নুরুল প্রথমে বলেছেন, ‘‘ডেঙ্গি তো আমাদের হাতে নেই। ওটা ওপরওয়ালার ব্যাপার। কেয়াচাঁদপুরে ডেঙ্গির প্রকোপটা একটু বেশি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন কমছে না, বুঝতে পারছি না!’’ কিন্তু মানুষের তো অভিযোগ চিকিৎসা নিয়ে? তাঁরা বলছেন রক্ত বা চিকিৎসার জন্য শিবির পাওয়া যাচ্ছে না। তখন বিধায়কের জবাব, ‘‘বাজে কথা। মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন। এটা আমাদের ব্যাপার নয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক শক্তির হাতে।’’ তাঁর বক্তব্য, রোগ মোকাবিলায় আন্তরিক মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন, বৈঠক করেছেন। নুরুলের আরও মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ডেঙ্গিতে যেন কেউ মারা না যায়।’’

দলীয় বিধায়কের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে তাঁরা সহমত কি না, জানার চেষ্টা হয়েছিল তৃণমূলের দুই চিকিৎসক-নেতা নির্মল মাজি ও শান্তনু সেনের কাছে। দু’জনের কেউই ফোন ধরেননি। আর বিরোধীরা কটাক্ষ করেছেন শাসক দলের বিধায়ককে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘সবই যদি ওপরওয়ালার হাতে, তা হলে চিকিৎসকদের কাছে মানুষ দৌড়চ্ছেন কেন?’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘উনি একটু ভুল বলে ফেলেছেন। বলতে চেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, মশাদের ডিম পাড়া বারণ! কিন্তু তাঁর দলের লোকেরাই মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনে না, মশারা মানবে কেন?’’ ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায়ও নুরুলের বক্তব্য উদ্ধৃত করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘২০১০ সালে দেগঙ্গায় অশান্তি বাধানোয় তো এই ব্যক্তিরই হাত ছিল! আমরা তখন সেখানে গিয়ে মানুষের বিবরণ শুনেছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন