Kaliganj By-Election Result

বিপুল জয় আলিফারই, বাড়ল জোট, ক্ষয় বিজেপির

কালীগঞ্জের প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন (লাল) আহমেদের মেয়ে আলিফা আহমেদ বাবার কেন্দ্র থেকে নতুন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন ৫০ হাজার ৪৯ ভোটে জিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৫.১৫%।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫ ০৮:৩৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

একে একে ১১! লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ের মসৃণ ধারা বজায় রাখল শাসক দল। তালিকায় নতুন সংযোজন হল নদিয়ার কালীগঞ্জ।

কালীগঞ্জের প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন (লাল) আহমেদের মেয়ে আলিফা আহমেদ বাবার কেন্দ্র থেকে নতুন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন ৫০ হাজার ৪৯ ভোটে জিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৫.১৫%। দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিজেপির প্রার্থী আশিস ঘোষ, পেয়েছেন ২৮.২৯% ভোট। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন আহমেদ শেষ করেছেন তৃতীয় স্থানে, তাঁর বাক্সে এসেছে ১৫.২১%। প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিনকে স্মরণ করে এই জয় ‘মা-মাটি-মানুষ’কে উৎসর্গ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ‘‘উপনির্বাচনে এলাকার সব ধর্ম, সব বর্ণ, সব জাতি এবং সর্বস্তরের মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আমাদের বিপুল ভাবে আশীর্বাদ করেছেন। আমি নতমস্তকে তাঁদের আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই জয়ের প্রধান কারিগর মা-মাটি-মানুষ।’’

আপাতদৃষ্টিতে এই উপনির্বাচনে রাজ্য রাজনীতির বর্তমান ছবির কোনও পরিবর্তন হয়নি। তবে ফলাফলের বিশ্লেষণে কিছু উপাদান উঠে আসছে, যা অনতি দূরের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে। প্রথমত, গত ২০২১ সালের বিধানসভা ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় কালীগঞ্জে ভোট কমেছে বিজেপির। মুর্শিদাবাদ, মহেশতলার মতো ঘটনার পরে হিন্দুত্বের প্রবল জিগির তুলেও তারা আগের চেয়ে এগোতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, সমঝোতা করে লড়ে কিছুটা জমি উদ্ধার করতে পেরেছে বাম ও কংগ্রেস। গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী কালীগঞ্জে ১৮%-এর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন, বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন উপনির্বাচনে ততটা পাননি। কিন্তু লোকসভার পরে রাজ্যে ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের ভোট যেখানে প্রায় ৭ বা ৮%-এ নেমে গিয়েছিল, সেখান থেকে এই উপ-ভোটে ১৫% পার করাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। বস্তুত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর তুলনায় উপনির্বাচনে জোটের ভোট ও শতাংশ, দুই-ই বেড়েছে।

তবে ভোট খুইয়ে হেরে গিয়েও বিজেপি তাদের ‘সাফল্য’ প্রচারের তত্ত্ব সামনে এনেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, হিন্দু ভোট এককাট্টা হওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে। শুভেন্দুর মতে, ‘‘প্রথম কথা, উপনির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে শাসক ছাড়া কেউ জেতে না। নির্বাচন কমিশন কিছু ব্যবস্থা না-নিলে তৃণমূল এখানে এক লক্ষ ভোটে জিতত! যেটা দেখতে হবে, মুসলিমেরা এককাট্টা হয়ে ভোট দিচ্ছে। হিন্দুদের মধ্যেও একজোট হওয়া শুরু হয়েছে। এটা বাড়বে। তৃণমূলকে হারাতে গেলে যতটা দরকার, সেই জায়গায় এখনও যায়নি।’’

বিজেপি শিবিরের দাবি, কালীগঞ্জে হিন্দু ভোট পড়েছে ৭২ হাজার ৬০০। তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৫২ হাজার ৭১০। অর্থাৎ বিজেপি হিন্দু ভোটের ৭২.৬০% পেয়েছে। রাজ্যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি গড়ে হিন্দু ভোটের ৫৪% পেয়েছিল। শুভেন্দুদের দাবি, এই ভাবে হিন্দু সমর্থন এক জায়গায় এলে বাংলায় ২২০টি বিধানসভা কেন্দ্রে ফল উল্টে দেওয়া যাবে।

যদিও এই তত্ত্ব খারিজ করে দিচ্ছে শাসক তৃণমূল ও অন্য বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, কালীগঞ্জে ৪৭% হিন্দু আছেন। সেই দিক থেকে দেখলে এক লক্ষ ৩৫-৪০ হাজার হিন্দু ভোটার আছেন। উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৪%। সেই হিসেবে যদি এক লক্ষ হিন্দু ভোট পড়ে থাকে, বিজেপি তার ৫২ হাজার ভোট পেয়েছে। বাকি ভোট অন্য দিকে গিয়েছে। অন্য দলগুলির আরও প্রশ্ন, প্রদত্ত ভোটের মধ্যে কত হিন্দু আর কত মুসলিম, তার নিখুঁত হিসেব এত দ্রুত পাওয়া সম্ভব নয়। কমিশন এমন কোনও হিসেব দেয় না। বুথের এজেন্টদের নিয়ে আসা তালিকা থেকে অঙ্ক করে বার করা যায়। কালীগঞ্জের ৩০৯টির মধ্যে বহু বুথে বিজেপির এজেন্টই ছিল না।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ভোট কমে যাওয়ার পরে বিজেপি এখন কুযুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করছে! সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের মধ্যে বাম-কংগ্রেসের ভোট কিছুটা বেড়েছে, এটাই আশার আলো। হিন্দু হলেই সকলে বিজেপিকে ভোট দেন না। ধীরে হলেও মানুষ বুঝতে পারছেন, তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি নয়।’’

কালীগঞ্জের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী আলিফাও বলেছেন, ‘‘বাঙালি কোনও সাম্প্রদায়িক দলকে বিশ্বাস করে না। আমরাও অনেক হিন্দু ভোট পেয়েছি। যেমন, কালীগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকা, সেখানে আমরা তিন হাজারের উপরে লিড পেয়েছি।’’ বিজেপি প্রার্থী আশিসের মতে, ‘‘হিন্দু ভোট কম পড়ায় এই ফল। আর উপনির্বাচনে শাসক দলকেই মানুষ ভরসা করে বেশি। কোথায় কোথায় সমস্যা হয়েছে দেখতে হবে।’’ আর কালীগঞ্জে পড়ে থেকে ভোট করে আসা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘মাত্র ১০ দিনের প্রচারে কংগ্রেস-বাম জোট গত বিধানসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচনের থেকে ভোট বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যের সব গণতান্ত্রিক এবং বহুত্ববাদী শক্তির এক হয়ে এখনই রাস্তায় নামা দরকার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন