সমাবেশ: সমস্যা সমাধানে পাহাড়ের দলগুলিকে নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে। ছবি: প্রদীপ আদক
আগেই বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কাজ করতে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু আপত্তি আছে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে নিয়ে। পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী আপাতত রাখতে চেয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র আক্রমণ করলেন অমিত শাহের বিজেপি-কে। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির ষড়যন্ত্রেই পাহাড়় অস্থির হচ্ছে। বাংলাকে ভাগ করার খেলায় নেমেছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: নভেম্বরে পাহাড়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, বিজেপি অফিস থেকে এখন কেন্দ্রীয় সরকার চলছে।’’ এখানেই না থেমে তাঁর অভিযোগ, ‘‘পাহাড়ের ঘটনার জন্য বিজেপির এক মন্ত্রীও দায়ী।’’ এ দিন নবান্নে দার্জিলিঙের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির কয়েক জন নেতা পাহাড় ঘুরে রিপোর্ট দেওয়ার পরেই বাহিনী তুলে নিল কেন্দ্র। তা-ও আমাদের এক জন অফিসারের মৃত্যুর ঠিক পরেই। এই সিদ্ধান্ত বিজেপি অথবা কেন্দ্র যেই নিক— আমরা মানি না।’’
যা শুনে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার আগে মুখ্যমন্ত্রী বলুন পাহাড় নতুন করে কার জন্য অস্থির হয়েছে। ভাষা নিয়ে বিভাজন কে করেছেন, গোর্খা-বাঙালি লড়াইয়ের মনোভাব কে তৈরি করেছেন।’’ কৈলাসের পাল্টা যুক্তি, ‘‘মমতাদিদি যখন দার্জিলিংয়ের অশান্তি পুলিশ দিয়ে সামলাতে পারছিলেন না, তখন সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী কোন সরকার পাঠিয়েছিল? এখন তিনিই বলছেন পাহাড় স্বাভাবিক, তা হলে আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর কী দরকার?’’
কেন তিনি এই অভিযোগ করছেন তার সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রবিবার দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নেওয়ার কথা জানানোর পরে পাহাড়ের এক নেতা যাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ আছে, তিনি অভিনন্দন জানালেন। এতেই তো দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে গিয়েছে।’’
পাহাড়ে বিদেশি শক্তি এবং উত্তর-পূর্বের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি সক্রিয় বলে ফের দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, পাহাড়ের বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক ভাবে দেখা উচিত নয়। অথচ, সেটাই করা হচ্ছে! তাঁর কথায়, ‘‘পাহাড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমি এ ভাবে বলতে চাই না। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, এক জন সাংসদ ইউপিএ-তে অভিযুক্ত পাহাড়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করছেন। যত কিছু চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র উনি করছেন। সব প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।’’
পাহাড়ের সাংসদ, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এর জবাবে বলেন, ‘‘আমি জুন মাস থেকে পাহাড়ে যাইনি। কিন্তু পাহাড়ের লোকজন যদি আমার কাছে আসেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনা আমার কর্তব্য।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘বাংলা ভাগের চক্রান্ত বিজেপি করছে না। পাহাড় অশান্ত হয়েছে রাজ্য সরকারে অপদার্থতায়।’’ আর বিজেপি নেতা কৈলাসের প্রশ্ন, ‘‘অভিযুক্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা যদি বিজেপি সাংসদের অপরাধ হয় তা হলে প্রায় একই অপরাধে অভিযুক্ত বিনয় তামাঙ্গদের সঙ্গে কী করে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করছেন?’’