তিন তালাক বহাল রাখার পক্ষে তৃণমূল

মুসলিমদের তিন তালাক প্রথা বহাল রাখার পক্ষেই সওয়াল করল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে রাজ্যে শাসক দলের তরফে শনিবার অভিযোগ করা হল— এই প্রথা রদ করতে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে উদ্যোগী হয়েছে, তা মুসলিম মহিলাদের স্বার্থরক্ষার জন্য নয়। আদতে এটা মোদী-অমিত শাহ-দের ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

হাতে হাত। মঞ্চে ফিরহাদ হাকিম এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। শনিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ।

মুসলিমদের তিন তালাক প্রথা বহাল রাখার পক্ষেই সওয়াল করল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে রাজ্যে শাসক দলের তরফে শনিবার অভিযোগ করা হল— এই প্রথা রদ করতে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে উদ্যোগী হয়েছে, তা মুসলিম মহিলাদের স্বার্থরক্ষার জন্য নয়। আদতে এটা মোদী-অমিত শাহ-দের ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’।

Advertisement

তিন তালাক প্রথা বিলোপ এবং দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কায়েমের জন্য কেন্দ্রের তৎপরতার বিরোধিতায় এ দিন কলকাতায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ করে জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ। জমিয়তের ওই মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম। বাংলায় জমিয়তের সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও এখন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য।

মুসলিমদের এই মঞ্চে দাঁড়িয়েই পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে থাকবেন কি না, তা আমাকেই ঠিক করতে দিন। এর বিচার করার জন্য সংবিধান আর উপরওয়ালা আছে। তোমরা (বিজেপি) মাঝখান থেকে কোন পদ্মফুল ফোটাতে এসেছ ভাই?’’ মোদী সরকারের

Advertisement

এই ‘ষড়য়ন্ত্রের’ বিরোধিতায় মুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল লড়াই করবে বলেও জানিয়ে দেন পার্থবাবু। সিদ্দিকুল্লাকে উদ্দেশ করে পার্থ-ফিরহাদ দু’জনেই বলেন— শুধু এ রাজ্যে নয়, গোটা দেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। তৃণমূলও আপনাদের পাশে থাকবে।

তিন তালাক প্রথা বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে মুসলিম মহিলাদের একটি সংগঠন। ওই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের মত জানতে চায় আদালত। কোর্টের নোটিস পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত জানার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাতীয় আইন কমিশন। বিতর্কের সূত্রপাত তখন থেকেই। কেন্দ্রের এই উদ্যোগের ঘোর বিরোধিতা করছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, আগামী ১৮ নভেম্বর থেকে বাংলায় মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা। তিন তালাক বিতর্কই ওই সম্মেলনের মূল আলোচ্য। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সিদ্দিকুল্লাদের এ দিনের সমাবেশ আসন্ন সম্মেলনের সুর বেঁধে দিল। এ ব্যাপারেও বিজেপি বিরোধিতায় এগিয়ে থাকতে চাইল তৃণমূল।

যদিও গোড়ায় বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান এত স্পষ্ট ছিল না। বাংলার শাসক দলের তরফে বলা হয়েছিল,‘‘দেশের সংবিধানই আমাদের পথ প্রদর্শক। ভারত একটি সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক দেশ। এই মহান দেশে সব ধর্মের বিশ্বাস ও প্রথাকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’

তবে এ দিন নেতাদের বক্তব্যে কোনও অস্পষ্টতা ছিল না। রাজ্যের এক জন মন্ত্রী হয়েও তিন তালাক প্রথা বন্ধ ও অভিন্ন দেওয়ানি আইন কায়েমের ‘চক্রান্তের’ জন্য সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মতো নেতা যেমন, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী-র কথা উল্লেখ করে তাঁকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি। পার্থবাবু জানিয়ে দেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কায়েমের জন্য সংবিধান সংশোধন করা বিজেপির পক্ষে সহজ হবে না। তৃণমূল তাতে বাধা দেবে।

সন্দেহ নেই মমতার সম্মতি নিয়েই পার্থবাবু জমিয়তের মঞ্চে এই কথা বলেছেন। তবে বিরোধীদের অভিযোগ— এ সবই হল বিজেপি-তৃণমূলের লোক দেখানো লড়াই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, আসলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে দুই দলই ধর্মীয় মেরুকরণে উস্কানি দিচ্ছে। বিজেপিও জানে তিন তালাক প্রথা বন্ধ করা বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কায়েম করা সহজ নয়।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে ধর্মীয় মেরুকরণ নিশ্চিত করতে বিতর্ক খুঁচিয়ে তুলছে।

আবার একই কারণে বিরোধিতায় নেমেছে তৃণমূলও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন