Firhad Hakim and Subrata Bakshi in Murshidabad

মুর্শিদাবাদে ‘জোড়া কাঁটা’ তুলতে বক্সী-ববিকে বড় দায়িত্ব মমতার, হুমায়ুনকে সামলাতে পারবেন তো?

এত দিন মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব সামলাতেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এবং মোশারফ হোসেন। শুক্রবার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরেই তাঁদের সেই দায়িত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৭
Share:

হুমায়ুন কবীরকে নিয়ে তরজার মধ্যে সুব্রত বক্সী এবং ফিরহাদ হাকিমকে মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব দিলেন মমতা। —ফাইল চিত্র।

শিয়রে লোকসভা ভোট। জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরেই মুর্শিদাবাদের সাংগঠনিক বিষয় দেখভালের জন্য তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি)-কে বিশেষ দায়িত্ব দিল তৃণমূল। শাসকদল সূত্রে খবর, এত দিন ওই দায়িত্ব সামলাতেন রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এবং ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেন। কিন্তু জেলায় দলীয় কর্মসূচিতে তাঁদের সে ভাবে দেখা যেত না। জেলা নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্যের আবহেও ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন তাঁরা। শুক্রবার কালীঘাটে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জেলা নেতাদের বৈঠকে এই সব অভিযোগ ওঠার পরেই তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে বলে খবর।

Advertisement

গত বছর সাগরদিঘি উপনির্বাচনের পর পরই সিদ্দিকুল্লা ও মোশারফকে মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁদের কাজ ছিল, দলের বিধায়ক এবং অন্য নেতাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন করা। এ ছাড়া জেলা নেতৃত্বের মতানৈক্য মেটাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন। মমতার ওই সিদ্ধান্তের পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তা হলে কি আবার ‘পর্যবেক্ষক’ পদের পুরনো মডেলে ফিরে যাচ্ছে দল? শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য তখন আনুষ্ঠানিক ভাবে তা স্বীকার করেননি। সিদ্দিকুল্লা এবং মোশারফকে সরিয়ে বক্সী, ববিকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত সেই ‘পর্যবেক্ষক’ মডেলেই আস্থা রাখা বলে মনে করছেন দলের একাংশ।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় সংগঠনে ‘পর্যবেক্ষক’ পদটি তুলে দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব দলের বিভিন্ন নেতাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা। সেই সময় সিদ্দিকুল্লা ও মোশারফ মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সাগরদিঘির ভোটের পর জেলায় মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে দলের অন্দরে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা নজরে রেখেই তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলেই মত দলের একাংশের। কিন্তু দলীয় সূত্রে দাবি, সিদ্দিকুল্লা ও মোশারফ বিশেষ দায়িত্ব পেলেও দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটানো সম্ভব হয়নি। বরং তা মাঝেমাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে তা নিয়ন্ত্রণ করতেই জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বিধায়ক, সাংসদ ও দলের বিভিন্ন পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মমতা। দলীয় সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে জেলার এক শীর্ষ নেতা দাবি করেন, ‘‘সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী আর মোশারফ হোসেন কী দায়িত্ব পালন করেন, আমরা নিজেরাই ঠিক করে জানি না। তাঁদের ফোন করলেও বেশির ভাগ সময়ে সাড়া পাওয়া যেত না।’’ বৈঠকে জেলার একের পর এক নেতা দুই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার বিরুদ্ধে ‘ক্ষোভ উগরে’ দিতে থাকায় বক্সী ও ববিকে মুর্শিদাবাদ ‘দেখার’ জন্য বলেন দলনেত্রী। জেলা নেতৃত্বকেও মমতার কড়া নির্দেশ, এ বার থেকে কোনও অভাব-অভিযোগ বা কিছু বলার থাকলে, তা যেন বক্সী ও ববিকেই বলা হয়।

দলের একাংশের মত, বক্সী প্রবীণ এবং ভীষণই অভিজ্ঞ রাজনীতিক। ২৫ বছর ধরে দলের নানা উত্থান-পতন দেখেছেন তিনি। মুর্শিদাবাদে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলানোর জন্য তিনিই উপযুক্ত। তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘দলীয় আনুগত্যই বক্সীদার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তিনি কখনও গোষ্ঠীলড়াইয়ে জড়াননি। তাঁর রাজনৈতিক সততা নিয়েও কারও প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা নেই।’’ দলের কারও কারও মত, বক্সী ‘দুর্মুখ’ও বটে। সেই কারণে তাঁর কাছে দলের নেতা-কর্মীরা ‘অন্যায্য’ আবদার করতে ভয় পাবেন। যাঁরা চেনেন, তাঁরা ভালই জানেন, বক্সী দুটো ক়ড়া কথা বলতে পিছপা হবেন না। মুর্শিদাবাদে গোষ্ঠীকোন্দল যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তার মোকাবিলায় বক্সীর মতো ‘কড়া অভিভাবকের’ দরকার ছিল। এ ছাড়াও এই মুহূর্তে জেলায় দলের ‘বিদ্রোহী’দের মধ্যে অন্যতম ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে জেলার দলীয় বিষয় নিয়েও আগে কথা হয়েছিল বক্সীর। কয়েক মাস আগে যখন হুমায়ুনকে শো-কজ় করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব, তখন হুমায়ুন বক্সীর সঙ্গে আলাদা করে দেখাও করেছিলেন তৃণমূল ভবনে গিয়ে। বক্সীর জেলার দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে হুমায়ুন আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘দু’জন ভাল প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক অভিভাবক পেলাম। এর সুফল লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল অবশ্যই পাবে।’’

অন্য দিকে, জেলায় সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে ববিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মত তৃণমূলের আর এক অংশের। প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভাবে পরাজিত হতে হয়েছিল তৃণমূলকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটের উপর দলের যে আধিপত্য দেখা গিয়েছিল, তা সেই উপনির্বাচনে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছিল। বরং, সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসাতে দেখা গিয়েছিল কংগ্রেসকে। লোকসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, তা নিশ্চিত করতেই দলের সংখ্যালঘু শীর্ষ নেতাকেই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন