কটূক্তিতে ঘরছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, অভিযুক্ত টিএমসিপি

শাসকদলের হাতে কলেজে অধ্যক্ষের হেনস্থা এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। এ বার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তাঁর ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর ন’হাটা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্মৃতি কলেজে ঘটনা। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ কামালউদ্দিনের অভিযোগ, ‘‘আমার গায়ে কেউ হাত না দিলেও কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে ওরা।’’ দু’দিন আগেই বর্ধমানের রানিগঞ্জে বোমা মেরে থানা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন টিএমসিপি-র ব্লক সভাপতি। এ বারের ঘটনা সেই তালিকায় আরও একটি সংযোজন মাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোপালনগর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:৪৭
Share:

ছাত্র সংসদের জিএস মন্টু।

শাসকদলের হাতে কলেজে অধ্যক্ষের হেনস্থা এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। এ বার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তাঁর ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর ন’হাটা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল স্মৃতি কলেজে ঘটনা। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ কামালউদ্দিনের অভিযোগ, ‘‘আমার গায়ে কেউ হাত না দিলেও কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে ওরা।’’ দু’দিন আগেই বর্ধমানের রানিগঞ্জে বোমা মেরে থানা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন টিএমসিপি-র ব্লক সভাপতি। এ বারের ঘটনা সেই তালিকায় আরও একটি সংযোজন মাত্র।

কলেজ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মন্টু সরকার ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুজয় মণ্ডলের নেতৃত্বে কিছু ছাত্র তাঁর ঘরে ঢোকেন। দাবি ছিল, ভর্তির ফি কমাতে হবে। ভর্তির জন্য কত নেওয়া হবে, তা পরিচালন সমিতির বৈঠকে ধার্য হয়েছিল। তাই তিনি ছাত্রদের বলেন, ফি কমানোর দাবি লিখিত ভাবে জানাতে, তা নিয়ে সমিতির বৈঠকে ফের আলোচনা করা হবে।

Advertisement

এর পরেই টিএমসিপি সমর্থকেরা মাত্রা ছাড়ান। শেখ কামালউদ্দিনের অভিযোগ, তাঁকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে বলা হয়। তাঁকে কলেজ ছাড়তে বলে নানা কটূক্তিও করা হতে থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘বাধ্য হয়ে আমি বেরিয়ে আসি। অথচ ভর্তির জন্য কত টাকা নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত যখন হয়, কলেজের সাধারণ সম্পাদক তাতে সই করেছিলেন।’’ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বেরিয়ে যাওয়ার পরেই তাঁর ঘরের চেয়ার-টেবিল ও নোটিস বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অসুস্থ বোধ করতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাড়ি চলে যান।

কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস পরে বলেন, ‘‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উচিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা।’’ যা শুনে কামালউদ্দিন বলেন, ‘‘কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব? ওই ছাত্রদের পিছনে তো মদতদাতারা রয়েছেন! পরে পরিচালন সমিতির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব, থানায় কিছু জানাব কি না।’’

১৯৯৭ সাল থেকে ওই কলেজে আছেন কামালউদ্দিন। ২০১১ থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে রয়েছেন। এর আগেও তিনি ঘেরাও হয়েছেন। গত ৫ মে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে সমিতির সভাপতির কাছে পদ থেকে অব্যাহতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এত তিক্ত অভিজ্ঞতা এই প্রথম। মন্টু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ভর্তির টাকা কমানোর দাবিতে এবং কলেজে নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। অধ্যক্ষের সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার করা হয়নি। উনি নাটক করছেন।’’

রানিগঞ্জের ঘটনায় ব্লক সভাপতি সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করেছে টিএমসিপি। রাতে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘মন্টুকে বহিষ্কার করার জন্য টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অধ্যক্ষের সঙ্গে এই আচরণ কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না।’’ জেলা টিএমসিপি-র সভাপতি সঞ্জয় রাহাও বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিন্দনীয়। সংগঠনের রাজ্য সভাপতিকে রিপোর্ট দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন