কেষ্টদের ছা়ড়, ভাবমূর্তি বাঁচাতে বলি ‘ছোটরা’ই

এক যাত্রায় পৃথক ফল! অপরাধ একই। অথচ শাস্তি দু’রকমের! পুলিশকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রানিগঞ্জ থানার ওসি অর্ণব গুহকে ফোন করে সৌমিত্রকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘পুলিশের গাড়ি আটকে রেখেছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাকে আসতে হবে। না হলে থানা বোমা মেরে উড়িয়ে দেব!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০৩:৫৬
Share:

আসানসোল আদালতে সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শৈলেন সরকার।

এক যাত্রায় পৃথক ফল! অপরাধ একই। অথচ শাস্তি দু’রকমের!

Advertisement

পুলিশকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রানিগঞ্জ থানার ওসি অর্ণব গুহকে ফোন করে সৌমিত্রকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘পুলিশের গাড়ি আটকে রেখেছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাকে আসতে হবে। না হলে থানা বোমা মেরে উড়িয়ে দেব!’’ ঘটনার খবর প্রচারিত হতেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, সৌমিত্রকে দলে রাখা হবে না। পুলিশও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কার্যক্ষেত্রে ঘটেছেও তা-ই। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অশোক রুদ্রকে দলের মহাসচিবের কড়া নির্দেশ ছিল, ওই ছাত্রনেতার সঙ্গে দলের যেন কোনও সম্পর্ক না থাকে!

সচরাচর ব্যবস্থা নেওয়ার চল তৃণমূলে খুব বেশি নেই। এর আগে পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়েই বহাল তবিয়তে আছেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। স্বয়ং ‘দিদি’র হাত আছে তাঁর মাথার উপরে! নিজমুখে তিন জন সিপিএম সমর্থককে ‘পায়ের তল দিয়ে পিষে মারা’র কথা প্রকাশ্য সভায় কবুল করেও আইনের হাত থেকে বেঁচে রয়েছেন ওই জেলারই তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। আর কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে ‘ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে’ দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পরেও স্রেফ দলনেত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশের চিঠি পাঠিয়ে ছাড় পেয়েছিলেন। কিছু দিন আগে সিআইডি তাপস-কাণ্ডে চার্জশিট জমা দিলেও তাপসকে গ্রেফতার করা হয়নি, দলও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ কী হল তৃণমূলে যে, রাতারাতি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হল? রানিগঞ্জের আগে বাঁকুড়ায় এক যুব নেতা পুলিশের উপরে চ়ড়াও হওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ও দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। রানিগঞ্জের ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়ে শাসক দলের নেতৃত্ব এতটাই অস্বস্তিতে যে, বিধানসভায় বিরোধীদের দাবি মেনে শিক্ষামন্ত্রীই এই নিয়ে বিবৃতি দিতে রাজি হয়ে যান। বিধানসভায় পার্থবাবু বলেন, ‘‘এই ঘটনা সমর্থন করি না। সৌমিত্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।’’ রানিগঞ্জের ওই কলেজের অধ্যক্ষকে উচ্চ শিক্ষা দফতরে ডেকে পাঠিয়েও ঘটনার বিবরণ জানতে চাওয়া হচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এমন উল্টো যাত্রা? শাসক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, বিধানসভা ভোট আর বেশি দূরে নেই। দলের সর্বস্তরে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়তে থাকলে জনমানসে তার বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা মাথায় রাখতে হচ্ছে। সেই সঙ্গেই পর পর ঘটনায় পুলিশের মনোবল তলানিতে পৌঁচ্ছচ্ছে। তাই দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসা। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু যেমন বলেছেন, ‘‘এ সব ঘটনা মেনে নেব না, বলেছি। বাস্তবে সেটাই ঘটছে। দলে থাকতে হলে এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।’’

বিরোধীরা অবশ্য তাতেও নাছো়ড়! বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘ওঁদের দলে কখন কে থাকেন, বোঝা যায় না। আর সৌমিত্র তো ছোট নেতা। একই কথা বলেছিলেন বীরভূমের তৃণমূলের নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সাহস থাকলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করুন পার্থবাবুরা!’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘তৃণমূল নেতৃত্ব আন্তরিক হলে বীরভূমের অনুব্রত, বোলপুরের যুব নেতা সুদীপ্ত, বাঁকুড়া জেলার বিধায়ক দীপালি সাহা বা সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়— এঁদের সকলের বিরুদ্ধেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতো! আসলে যাঁরা বেশি ভোট জোগাড় করতে পারবেন, তাঁদের ছা়ড়ও বেশি!’’ কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ারও বক্তব্য, ‘‘ভোটে জিততে যাঁদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁরা পুলিশ-প্রশাসনের উপরে প্রচণ্ড অত্যাচার করলেও সাত খুন মাফ! ’’

প্রশ্নের উত্তর মিলছে শাসক শিবির থেকেই। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘সন্ন্যাসী দিয়ে কী দল চলে? কাগজে কী লেখা হল, তার জন্য কেউ দরকারের সৈনিক হাতছাড়া করে? আরাবুল ইসলামকে ছাড়া ভাঙ়ড়, শওকত মোল্লাকে ছাড়া ক্যানিং বা কেষ্টকে (অনুব্রত) বাদ দিয়ে বীরভূমে ভোট করা সম্ভব?’’ আর আনুষ্ঠানিক ভাবে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব? পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘পুরনো কথা পুরনোই থাক না! এখন যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা ওঁরা দেখছেন না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন