গড়বেতা

গড়-রক্ষায় গুরুকে পাশে চান শিষ্য

‘গুরু’-কে প্রচারে চেয়ে দলের কাছে দরবার করেছিলেন ‘শিষ্য’! সব দিক খতিয়ে দেখে সম্মতি দিয়েছে দল। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বুধবার গড়বেতায় কর্মিসভা করতে চলেছেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। ওই কর্মিসভা হবে সিপিএম প্রার্থী সরফরাজ খানের সমর্থনে।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০১:২৬
Share:

প্রচারে সরফরাজ খান।

গুরু’-কে প্রচারে চেয়ে দলের কাছে দরবার করেছিলেন ‘শিষ্য’! সব দিক খতিয়ে দেখে সম্মতি দিয়েছে দল। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বুধবার গড়বেতায় কর্মিসভা করতে চলেছেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। ওই কর্মিসভা হবে সিপিএম প্রার্থী সরফরাজ খানের সমর্থনে।

Advertisement

২০১১ সালে পরিবর্তনের প্রবল ঝড়েও জিতেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তবাবু। কিন্তু দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলায় নাম জড়ানোর পর থেকেই নিজের বিধানসভা এলাকাতেও তাঁর যাতায়াত অনুমতিসাপেক্ষ হয়ে যায়। সিপিএম সূত্রের খবর, কোনও রকম মামলা-মোকদ্দমায় নাম জড়িয়েছে এমন কাউকেই আর টিকিট দেওয়ার পক্ষপাতী নয় দল। সেই ব্যাখ্যাতেই এ বার আর প্রার্থী হতে পারেননি সুশান্তবাবু। কিন্তু যিনি প্রার্থী হয়েছেন, সেই সরফরাজের রাজনীতিতে আসা সুশান্তবাবুর হাত ধরেই। প্রথমে ছাত্র, পরে যুব সংগঠনে। দলের এক সূত্রের দাবি, সুশান্তবাবুকে তাঁর রাজনৈতিক ‘গুরু’ বলেই মানেন সিপিএমের এই যুব নেতা। তাঁর সম্মতি ছাড়া এক পা এগোন না। ফলে, প্রার্থী হওয়ার পরই প্রচারে ‘গুরু’-কে চেয়ে দলের কাছে দরবার করেছিলেন সিপিএমের এই যুব নেতা। তাঁর আবদার ছিল, অন্তত একটি সভায় সুশান্তবাবুর থাকার ব্যবস্থা করতেই হবে। এই আবদার নিয়ে জেলায় আলোচনাও হয়। সব দিক খতিয়ে দেখে দল প্রার্থীর আবদার মেনে নিয়েছে।

গড়বেতায় দলের প্রচারে কি সুশান্ত ঘোষ আসছেন? সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের বক্তব্য, “সুশান্ত ঘোষ তো প্রচারে আসবেনই। ওখানে কর্মীদের নিয়ে যে সভা হবে, সেখানে উনি থাকবেন।’’ আর প্রার্থী সরফরাজ বলছেন, ‘‘গড়বেতার কর্মিসভায় সুশান্ত ঘোষ থাকছেন। ওই সভার পরই এলাকায় জোরকদমে প্রচার শুরু হবে।” এ দিনে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সুশান্তবাবু নিজেও বলেন, ‘‘গড়বেতার কর্মিসভায় আমি যাচ্ছি। ওই দিন দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা হবে।” পরেও কি এলাকায় প্রচার চালাবেন প্রাক্তন মন্ত্রী? সিপিএমের গড়বেতা জোনাল কমিটির সম্পাদক দিবাকর ভুঁইয়ার জবাব, “এখনও সব কিছু ঠিক হয়নি।’’

Advertisement

বাম-আমলে গড়বেতায় একচ্ছত্র দাপট ছিল সুশান্তবাবুর। তিনি সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। মাথার উপর সুশান্তবাবুর হাত থাকায়
এলাকায় দাপট ছিল সুকুর আলি-তপন ঘোষদের। দীর্ঘদিন সিপিএমের গড়বেতা জোনাল সম্পাদক ছিলেন সুকুর আলি। গত বছর তাঁকে জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে সরতে হয়। নতুন জোনাল সম্পাদক হন
দিবাকর ভুঁইয়া।

একদা ‘লাল দুর্গ’ সেই গড়বেতায় এখন ‘লাল-পার্টি’র দুর্দিন। সিপিএমের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, এই সময়ের মধ্যে এলাকায় দলের সংগঠন অনেকটাই পুনর্গঠন হয়েছে। ওই সূত্রের মতে, মানুষ ভুল বুঝতে শুরু করেছেন। কর্মীরা দলের প্রতি দায়বদ্ধ থাকায় দলও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে! সুশান্ত ঘোষকে প্রার্থী করলে যে গড়বেতার লড়াই কঠিন থেকে আরও কঠিন হয়ে যাবে, তা আগেই বুঝতে পেরেছিল জেলা সিপিএম। তাই মাস কয়েক আগে থেকেই দল ‘নতুন মুখ’-এর খোঁজ শুরু করে। একাধিক নাম সামনে আসে। দলেরও কারও কারও মত ছিল, গড়বেতার মতো আসনে একদম আনকোরা কাউকে প্রার্থী না করাই ভাল। যে সব নাম আলোচনায় উঠে আসে, তার মধ্যে ছিল কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে, সরফরাজ খান প্রমুখ। কৃষ্ণপ্রসাদবাবু এক সময় গড়বেতা পশ্চিমের বিধায়ক ছিলেন। শেষমেশ দল সরফরাজকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়।

কেন? দলের এক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, গড়বেতায় ২২ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এই ভোট ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে। অন্য এক সূত্রের দাবি, গড়বেতার মতো এলাকায় সুশান্ত ঘোষের ছায়া এড়িয়ে দলের কাজ করা সম্ভব নয়। সুশান্তবাবুও চেয়েছিলেন, এই যুব নেতা প্রার্থী হন। তাহলে নতুনরা দলের কাজে উত্‌সাহিত হবেন।

পরিবর্তনের ঝোড়ো হাওয়াতেও গত বিধানসভা নির্বাচনে গড়বেতা আসন দখলে রেখেছিল সিপিএম। অবশ্য ব্যবধান অনেক কমেছিল। লড়াই যে কঠিন হবে তা বুঝতে পেরে গতবার প্রচারে বেশি সময়ও দিয়েছিলেন সুশান্তবাবু। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে ৬২ হাজার ভোটে জেতেন এই প্রাক্তন মন্ত্রী, সেখানে ২০১১ সালে জেতেন ১৫ হাজার ভোটে। ফল ঘোষণার পরে সুশান্তবাবু মেনেও নিয়েছিলেন, ‘মানুষের মনের মধ্যে তো আর ঢুকতে পারি না! জনগণের রায় মেনে নিতে হয়!’ দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলায় এখন জামিনে মুক্ত সুশান্তবাবু। অবশ্য গড়বেতায় আসতে তাঁর বাধা নেই। শুধু আসার আগে পুলিশকে জানিয়ে আসতে হবে। সুশান্তবাবু প্রচারে এলে দলের কর্মী-সমর্থকেরা উজ্জীবিত হবে বলেই মনে করছেন গড়বেতার সিপিএম নেতৃত্ব।

গড়বেতার তৃণমূল প্রার্থী আশিস চক্রবর্তীর অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘সন্ত্রাসের রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত তারাই তো ওদের নেতা! কঙ্কাল কাণ্ডের আসামী ওদের প্রচারে এলে আমাদের কোনও অসুবিধে নেই। বরং সুবিধেই হবে! মানুষ সব দেখছেন!’’ গড়বেতার বিজেপি প্রার্থী প্রদীপ লোধার মন্তব্য, ‘‘যেই ওদের প্রচারে আসুক। সিপিএমের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়! মানুষই ওদের পাশে নেই।’’

দীপক সরকারদের ‘সম্পদ’ সুকুর আলি-তপন ঘোষরা রয়েছেনই। এখন সুশান্তবাবু এসে দলের কর্মী-সমর্থকদের কতটা উজ্জীবিত করতে পারেন, সেটাই দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন