থাপ্পড় মেরে গৌরব বলল, চোখ নামা

ছাত্রনেতা গৌরব প্রথম থাপ্পড়টা সজোরে বাঁ গালে মারার পর শিক্ষক ভাস্কর দাসের লক্ষ্য ছিল পরের থাপ্পড়টা কোনওক্রমে এড়ানো। তাঁর কথায়, ‘‘খালি পজিশন নিচ্ছিলাম, যাতে পরের থাপ্পড়টা আর গালে না-পড়ে। ওদের দিকে আমি সোজাসুজি তাকিয়েছিলাম। তাই দেখে গৌরব বলল— চোখ নামা! ’’ 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪১
Share:

কুটা-র সভায় ভাস্কর দাস। —নিজস্ব চিত্র।

ছাত্রনেতা গৌরব প্রথম থাপ্পড়টা সজোরে বাঁ গালে মারার পর শিক্ষক ভাস্কর দাসের লক্ষ্য ছিল পরের থাপ্পড়টা কোনওক্রমে এড়ানো। তাঁর কথায়, ‘‘খালি পজিশন নিচ্ছিলাম, যাতে পরের থাপ্পড়টা আর গালে না-পড়ে। ওদের দিকে আমি সোজাসুজি তাকিয়েছিলাম। তাই দেখে গৌরব বলল— চোখ নামা! ’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) ডাকা সভায় এ ভাবেই ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার বর্ণনা দিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নিগৃহীত শিক্ষক ভাস্করবাবু। অভিযোগ, সে দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতা গৌরব দত্ত মুস্তাফি তাঁর এক সঙ্গীকে নিয়ে টানা আধ ঘণ্টা ধরে তাঁকে মারধর ও নিগ্রহ করেছে। বাকিরা তাঁকে ঘিরে রাখে।

তবে প্রথম থাপ্পড়টা খেয়েই ভাস্করবাবু নিস্তার পাননি। অশালীন ভাষা ও হুমকির মধ্যে তাঁকে আরও কয়েকটি চড়-থাপ্পড় সে দিন মেরেছে গৌরব। এর মধ্যে তিনি শৌচালয়ে যেতে চাইলে প্রথমে যেতে দেওয়া হয়নি। পরে গৌরবের অনুগামীরা পাহারা দিয়ে তাঁকে নিয়ে যায়। ফিরে এসে আবার নিজের চেয়ারে বসে নিগ্রহ সহ্য করতে হয় ভাস্করবাবুকে।

Advertisement

এ দিন কুটা-র সভায় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত ও আবুটা সভাপতি তরুণ নস্কর। প্রত্যেকেই ঘটনার নিন্দা করেন। অশোকবাবু বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে যাঁরা বিশ্বাস করেন না, দেখা যায় তাঁরা প্রথমেই আক্রমণটা শিক্ষার উপর হানে।’’

এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে বলে বুধবার মন্তব্য করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। বাম নেতৃত্বাধীন শিক্ষক সংগঠন কুটা নিগ্রহের নিন্দা করে এ দিনের সভা ডেকেছিল। বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীও এই ঘটনার পরে ভাস্করবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, এই বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষ হওয়ার আগে ভাস্করবাবু বাইরে কথা বলছেন বলেও শিক্ষামন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু ভাস্করবাবু শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, তিনি কুটার সভায় যাবেন।

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই টিএমসিপি নেতার শাস্তি হবে। ভাস্করবাবু জামিনঅযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনলেও গৌরব জামিন পেয়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী গৌরবের শাস্তির কথা বলার পাশাপাশি জানিয়েছেন, এই জামিন পাওয়ার পিছনে কারা রয়েছে দল সেটা দেখবে। তাঁরাও ছাড় পাবেন না। আজ, শুক্রবার ভাস্করবাবুর নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করার কথা ভাস্করবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন