পেশাদাররাই বাজি পর্যটন নিগমের

দার্জিলিং থেকে দিঘা, রাজ্যের ২৮টি জায়গায় ৩৪টি ট্যুরিস্ট লজ চালায় পর্যটন উন্নয়ন নিগম। অনেক জায়গাতেই ছবিটা কমবেশি এই রকম। ট্যুরিস্ট লজগুলির হাল ফেরাতে এ বার তরুণ পেশাদারদের উপরে ভরসা রাখতে চাইছে নিগম। যাঁরা লজ ঠিকঠাক চালাবেন, নিখুঁত হিসেব রাখবেন, সুস্বাদু রান্না করবেন। এই মুহূর্তে স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না। তাই নিয়োগ হবে চুক্তির ভিত্তিতে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৪:১২
Share:

কোথাও রান্না মুখে তোলা যায় না। কোথাও বছর-বছর লোকসান। কোথাও পরিষেবার মান খারাপ।

Advertisement

এ সবের কারণ?

কোথাও চুরি বা অনিয়ম। কোথাও সৃষ্টিশীল ভাবনার অভাব। কোথাও আবার কর্মীদের ফাঁকি। সঙ্গে অনেক লজ ম্যানেজারের গয়ংগচ্ছ মনোভাব।

Advertisement

দার্জিলিং থেকে দিঘা, রাজ্যের ২৮টি জায়গায় ৩৪টি ট্যুরিস্ট লজ চালায় পর্যটন উন্নয়ন নিগম। অনেক জায়গাতেই ছবিটা কমবেশি এই রকম। ট্যুরিস্ট লজগুলির হাল ফেরাতে এ বার তরুণ পেশাদারদের উপরে ভরসা রাখতে চাইছে নিগম। যাঁরা লজ ঠিকঠাক চালাবেন, নিখুঁত হিসেব রাখবেন, সুস্বাদু রান্না করবেন। এই মুহূর্তে স্থায়ী নিয়োগ হচ্ছে না। তাই নিয়োগ হবে চুক্তির ভিত্তিতে।

প্রথম পর্যায়ে এ ভাবে ৩৩ জন অভিজ্ঞ পেশাদারকে নিয়োগ করবে নিগম। নেওয়া হচ্ছে ১৫ জন সহকারী ম্যনেজার ও ১৮ জন সহকারী অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার। আবেদনপত্র এসেছে প্রায় দেড়শো প্রার্থীর। আজ, সোমবার তাঁদের ইন্টারভিউ নেওয়া শুরু হবে। এঁদের বয়স ২২ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। প্রত্যেকেই সরকার স্বীকৃত সংস্থা থেকে ৬০% বা তার বেশি নম্বর নিয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রিধারী এবং তিন তারা বিশিষ্ট বা এর চেয়ে উঁচু মানের হোটেলে অন্তত তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।

নিগমের ৬০০ পদের অর্ধেকই এখন শূন্য। ২০১৮-র মধ্যে বিভিন্ন পদ থেকে ৬০ জন অবসর নেবেন। আপাতত নিয়োগ হবে চুক্তির ভিত্তিতে, প্রাথমিক ভাবে এক বছরের জন্য। দু’ধরনের পদেই বেতন মাসে ২৫ হাজার টাকা। কাজ দেখে পরে চুক্তির মেয়াদ আরও দু’বছর বাড়ানো হতে পারে। চুক্তিতে নিয়োগ নিগমে নতুন নয়। তবে সাধারণত নিচু তলায় দু’-তিন জন কর্মীকে এ ভাবে নেওয়া হতো এত দিন। চুক্তিতে এক সঙ্গে এত জন অফিসার নিয়োগ এই প্রথম। পরের ধাপে ফুড প্রোডাকশনের ডিপ্লোমা ও ৩ থেকে ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাঁধুনেও নিয়োগ করা হবে। চুক্তিতেই।

পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের ব্যাখ্যা, ‘‘বার বার প্রশিক্ষণ দেওয়া সত্ত্বেও লজের ম্যানেজার ও রাঁধুনেদের একাংশ দক্ষ হতে পারছেন না।’’ নিগমের এক কর্তারও বক্তব্য, লজের ম্যানেজারদের কারও কারও শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক, বড় জোর উচ্চ-মাধ্যমিক। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া চাকরিতে নিচু তলায় ঢুকে প্রোমোশন পেতে পেতে ম্যানেজার হয়েছেন। আবার ম্যানেজারদের মধ্যে স্নাতক যাঁরা, তাঁদের বেশির ভাগেরই হোটেল কিংবা হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি নেই। লজ-কর্মীদেরও অনেকের মনোভাব, আসি যাই মাইনে পাই। ওই নিগম-কর্তার কথায়, ‘‘পর্যটন একটা শিল্প, যা থেকে বিপুল আয়ের সম্ভাবনা। লজ চালানোও একটা আর্ট। সেখানে এখন বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন পেশাদারদের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’’

দু’‌টি উদাহরণকে সামনে রাখছে নিগম। এক, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে জর্জরিত বহরমপুর ট্যুরিস্ট লজে সম্প্রতি ম্যানেজার করে পাঠানো হয় হোটেল ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রিধারী এক জনকে। কিছু দিনের মধ্যেই ওই লজ না-লাভ, না-লোকসানের জায়গায় পৌঁছে যায়। কারণ নতুন ম্যানেজার সেখানে ‘হ্যাপি আওয়ার্স’ বা নির্দিষ্ট সময়ে সস্তায় মদ বিক্রি চালু করেছেন।

দুই, তারকেশ্বর ট্যুরিস্ট লজে গত আর্থিক বছরে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। চলতি আর্থিক বছরে নভেম্বর পর্যন্ত লাভের অঙ্ক ১২ লক্ষ টাকা। নতুন ম্যানেজার চুরি আটকানোর পাশাপাশি পরিষেবার মানে উন্নতি ঘটিয়েছেন। প্রতিযোগিতার মনোভাব। স্থানীয় রিকশা ও গাড়িচালকদের একাংশের সঙ্গে এমন বন্দোবস্ত করেছেন, যাতে তাঁরা স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিয়ে হোটেলে না গিয়ে ট্যুরিস্ট লজে আসেন। রাজ্যের বাকি সব লজকে পর্যটক-বান্ধব তুলতে তাই পেশাদাররাই বাজি নিগমের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন