প্যাকেজ ট্যুরে এসে ভোগান্তি

শান্তির জঙ্গলমহলে বিজ্ঞাপন দিয়ে পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে পর্যটন দফতর। এক সময়ের মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িকে ঘিরে এখন সরকারি ও বেসরকারি প্যাকেজ ট্যুরও চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাড়ে বছর পরেও পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য বেলপাহাড়িতে তেমন পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:০০
Share:

ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

শান্তির জঙ্গলমহলে বিজ্ঞাপন দিয়ে পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে পর্যটন দফতর। এক সময়ের মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িকে ঘিরে এখন সরকারি ও বেসরকারি প্যাকেজ ট্যুরও চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাড়ে বছর পরেও পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য বেলপাহাড়িতে তেমন পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বেলপাহাড়ি বেড়াতে আসা পর্যটকদের মুখেই শোনা যাচ্ছে এমন আক্ষেপের সুর!

Advertisement

বেলপাহাড়ির আশে পাশে রয়েছে ঘাগরা, কাঁকড়াঝোর, গাডরাসিনি, কেটকিঝর্না, লালজলের মতো অজস্র নৈসর্গিক দ্রষ্টব্য স্থান। এক সময় বহু পর্যটক পাহাড়ি পথ উজিয়ে কাঁকড়াঝোরে গিয়ে বন বাংলোয় রাত্রিযাপন করতেন। পর্যটক আসার ফলে স্থানীয় আদিবাসীরা উপকৃত হতেন। কেউ করতেন গাইডের কাজ। কেউ বা পর্যটকদের জন্য রান্না। বছরের ছ’সাত মাস পর্যটক আসার ফলে এভাবে বিকল্প আয়ও হত বাসিন্দাদের। কেউ রান্না করতেন পর্যটকদের জন্য। কেউ বা করতেন গাইডের কাজ।

ছবিটা আচমকা বদলে গেল ২০০৪ সালে। ওই বছরের ডিসেম্বরে বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে সরকারি বন বাংলো ও সরকারি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র দু’টিই মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। তারপর থেকে কাঁকড়াঝোরে রাত্রিবাসের জায়গা নেই। জঙ্গলমহল শান্ত হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কাঁকড়াঝোরে সরকারি অতিথিশালা তৈরির ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

Advertisement

পড়ুন :ঠাঁইহারা বেলপাহাড়ি

বেসরকারিস্তরে এখনও বেলপাহাড়িতে থাকার লজ-হোটেল গড়ে ওঠেনি। তবে খোদ ব্লকসদরে বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের থাকার জন্য কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা সিন্ধুতে বিন্দুবত্‌! বেলপাহাড়ি ব্লক অফিস চত্বরে পঞ্চায়েত সমিতির পুরনো একটি অতিথিশালা আছে। সেখানে দৈনিক পাঁচশো টাকায় ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। আছে মাত্র ৩টি ঘর। একটি ঘরে এসি আছে। এসি চালালে ওই ঘরের ভাড়া ৭৫০ টাকা। ব্লক অফিস চত্বরে পৃথক একটি ভবনের দোতলায় দু’টি ঘরে পর্যটকদের জন্য সদ্য ডর্মেটরি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। থাকতে পারবেন দশ জন। শয্যা পিছু দেড়শো টাকা ভাড়া। এখনও খাট আসেনি। বেলপাহাড়ি ব্লক অফিস চত্বরে ব্রিটিশ আমলের পুরনো একটি ভবনকে সংস্কার করে সম্প্রতি ঝাঁ চকচকে পর্যটক-অতিথিশালাও তৈরি হয়েছে। সেই অতিথিশালায় দু’টি স্যুইটে মোট ৬ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। স্যুইট পিছু এক দিনের ভাড়া দু’হাজার টাকা। তবে আপাতত দু’টি ঘর বিশিষ্ট একটি স্যুইট (৪ জন থাকতে পারবেন) ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। অন্য স্যুইটটিতে শৌচাগার তৈরি হয়নি এখনও। সবগুলিতেই স্পট বুকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ফোন করেও অগ্রিম বুকিং করা যায়। তবে সব ক’টিতেই উপযুক্ত দেখভালের অভাবে অপরিচ্ছন্ন ভাব। এক জন মাত্র চুক্তিভিত্তিক কর্মী সব কিছু সামলান। খাওয়াদাওয়া বাইরের হোটেলে সারতে হয়। এখানে থেকে যাওয়া পর্যটকদের অভিযোগ, সরকারি থাকার জায়গাগুলিতে কর্মী নেই। চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের অভাব। উপযুক্ত রুম সার্ভিস মেলে না। খাবারেরও ব্যবস্থা নেই।

এ ছাড়া ব্লক অফিসের অত্যাধুনিক কনফারেন্স রুমের লাগোয়া অত্যন্ত বিলাস বহুল সুসজ্জিত একটি ভিভিআইপি গেস্ট হাউস রয়েছে। থাকতে পারবেন মাত্র দু’জন। এখানেই রবিবার, ৩ জানুয়ারি রাত্রিযাপন করে গিয়েছেন মুকুল রায়। কিন্তু এটি সব পর্যটকদের ভাড়া দেওয়া হয় না। মূলত, প্রশাসনিক আধিকারিক ও ভিভিআইপি জনপ্রতিনিধিদের জন্য গেস্ট হাউসটি তৈরি করা হয়েছে। তবে বিডিও’র বিশেষ অনুমতি নিয়ে থাকা যায়। ভাড়া দু’হাজার টাকা। খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত নেই।

সদ্য বেলপাহাড়িতে বেড়িয়ে যাওয়া আসানসোলের রুমেলি সরকার, উলুবেড়িয়ার সঞ্জয় দে, কলকাতার তন্ময় মুখোপাধ্যায়-রা বলছেন, বেলপাহাড়ির দ্রষ্টব্য জায়গাগুলিতে থাকার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। নৈসর্গিক স্থানগুলিতে থাকার জায়গা হলে খুব ভাল হতো। বেলপাহাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক তপন পণ্ডিত, বেলপাহাড়ির একটি খাবার দোকানের মালিক চিন্ময় হালদার, ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত-রা বলছেন, “অশান্তির কারণে দীর্ঘদিন পর্যটনশিল্প মার খেয়েছিল। সেই কারণেই সম্ভবত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেসরকারিস্তরে লজ ব্যবসা করার ঝুঁকি নেননি। এবার প্রচুর পর্যটক এসেছেন। আমরাও বিকল্প ভাবনাচিন্তা শুরু করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন